ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে ঐকমত্যের অবস্থা নেই উলেস্নখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘ইভিএম বিষয়ে আমরা এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। ইভিএম নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা-বার্তা হচ্ছে গণমাধ্যমে। আমরা সবাইকে জানিয়েছি, ইভিএম নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।’
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে জাতীয় পার্টিসহ ১৩টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইভিএম-বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।
সিইসি বলেন, আপনারা জানেন, কিছুদিন আগেও আমরা ইভিএমে নির্বাচন করেছি। রাজনৈতিক মহল ও পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, ইভিএম নিয়ে ঐকমত্যের অবস্থা নেই। যেহেতু আমরা নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করেছি, সেহেতু আমাদের ধারণা নিতে হবে। আপনাদের মতামত স্বাধীন হবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।
তিনি আরও বলেন, আমরা কারও
ওপর কোনো মতামত চাপিয়ে দিতে পারি না, চাপিয়ে দেব না। সে ধরনের কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। আমাদের উদ্দেশ্য হলো- ইভিএম সম্পর্কে আপনাদের ধারণা দেওয়া। আপনাদের প্রশ্ন যদি থাকে, সেগুলো আপনারা উপস্থাপন করবেন। আমাদের যারা ইভিএম সম্পর্কে বোঝেন, তারা আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
এদিকে, মতবিনিময় সভার পর জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, রোববার সকালে তাদের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যেভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা আছে, সেটার পক্ষেই তারা। ইভিএম ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন নেই। বৈঠকে ইসির কাছেও এই মতামত আমরা তুলে ধরেছি।
তাদের মতামত উপেক্ষা করেও ইভিএম ব্যবহার হলে নির্বাচন বর্জন করবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে চুন্নু বলেন, ‘দেখা যাবে সেটা। তখনকার সিদ্ধান্ত তখন নেব আমরা।’
রোববার ১৩টি দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসি। দলগুলো হলো- জাতীয় পার্টি (জাপা), জাতীয় পার্টি-জেপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন এনডিএম ও বাংলাদেশ কংগ্রেস। এগুলোর মধ্যে আন্দালিব রহমান পার্থের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, ডক্টর কামাল হোসের গণফোরাম ও কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ বৈঠকে আসেনি।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক ৩৯টি দলকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন যাচাইয়ের সুযোগ দিচ্ছে ইসি। এ জন্য তিন ধাপে ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানাবে ইসি। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার প্রথম ধাপে ১৩টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে নিবন্ধিত বাকি দলগুলোর সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে দলগুলো চার সদস্যের কারিগরি টিম/প্রতিনিধি পাঠাতে পারবে। দ্বিতীয় ধাপে ২১ ও শেষ ধাপে ২৮ জুন রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
ইভিএম নিয়ে ইতোমধ্যে দেশসেরা প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করে মতামত নিয়েছে ইসি। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে চায় নির্বাচন কমিশন। তবে তার আগে সবার মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।
ইসির হাতে বর্তমানে এক লাখ ৫৪ হাজার ইভিএম রয়েছে, যা দিয়ে সর্বোচ্চ ১০০ আসনে ভোট করা যাবে। ৩০০ আসনে এই মেশিন ব্যবহার করতে হলে আরও তিন লাখের মতো মেশিনের প্রয়োজন।