প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উদ্যাপন করতে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এ উপলক্ষ্যে আগামী মার্চে ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩’, ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ এক্সপো ২০২৩’ এবং ‘বাংলাদেশ বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’-এর আয়োজন করতে যাচ্ছে এফবিসিসিআই।
গতকাল শনিবার রাজধানির একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানান, মার্চের ১১-১৩ তারিখে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী এই সামিটের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদ হার বাড়ালে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। কেননা সুদের হার বাড়ালে মূল্যস্ফীতি কমবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিছু সমস্যা থাকলেও বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদ হার বাড়ালে উলটো বিনিয়োগ কমে যেতে পারে।
মো. জসিম উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার পর আমাদের যে অর্থনীতি ছিল তার সঙ্গে আজকের অর্থনীতির পার্থক্য অনেক। বর্তমানে আমাদের অর্থনীতির আকার ৪৭০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতির এই গতি আরো ত্বরান্বিত করতে এই সামিটের আয়োজন করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য, বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্ভাবনা বিশ্বের কাছে তুলে ধরা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, শিল্প বিকাশে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট বর্তমানে একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এতে আমাদের কোনো হাত নেই। তবে একসঙ্গে বিদ্যুতের দাম এত বাড়ানোয় ব্যবসায়ীদের ওপর কিছুটা হলেও চাপ পড়েছে। এটা ধাপে ধাপে বাড়ালে এতোটা প্রভাব পড়ত না। অবশ্য আগামীতে আন্তর্জাতিকভাবে দাম কমলে দেশেও দাম কমবে—সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের এ বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে আরো ত্বরান্বিত করতে এই সামিট বিশেষ ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এই সামিট আয়োজনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ। বাংলাদেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে বৈশ্বিক ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, উদ্ভাবক, নীতিনির্ধারক, বাজার বিশ্লেষক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তুলে ধরতে এই আয়োজন অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের সম্ভাবনা, বাধা এবং উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করতে ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, বিশ্লেষক এবং নীতিনির্ধারকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে তিনটি প্ল্যানারি সেশন, ১৩টি প্যারালাল সেশন, উন্মুক্ত আলোচনা, বিটুবি মিটিং, নেটওয়ার্কিং সেশন ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশ্বের ১২ থেকে ১৫টি দেশের মন্ত্রী অংশ নেবেন। পাশাপাশি কয়েকটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারাও অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক এবং ইইউর ট্রেড কমিশনারকেও আনার চেষ্টা চলছে। তা ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বৃহৎ কোম্পানির প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কেননা, টেকসই শিল্পায়নের লক্ষ্যে সরকার সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে। বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণে অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। অর্থনীতিকে আরো এগিয়ে নিতে সরকার বিজনেস ফ্যাসিলিটেশননে গুরুত্ব দিচ্ছে। সুতরাং এখনই সময় বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার। এখনই সময় আমাদের ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির পথে যাত্রাকে ত্বরান্বিত করা।
সামিটের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে ‘সিএনএন এক্সপেরিয়েন্স’ যার মাধ্যমে বিখ্যাত টিভি চ্যানেল ক্যাবল নিউজ নেটওয়ার্ক—সিএনএন দেশের ব্যাবসায়িক পরিবেশ, বিনিয়োগের সুযোগ এবং ভবিষ্যতের টেকসই উন্নয়নের ওপর প্রচারণা চালাবে। সামিটে সিএনএনের বিজনেস এডিটর-অ্যাট-লার্জ রিচার্ড কোয়েস্টের সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ এখন বিদেশি বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেশের বিদ্যুৎ, গ্যাস ও অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলমান রয়েছে। বাংলাদেশে যেসব বিদেশি কোম্পানি কাজ করছে তারা ব্যবসায় সাফল্য অর্জন করেছে। এজন্য তারা আরো বেশি বেশি বিনিয়োগ করছে। তাছাড়া আমাদের দেশীয় বাজার অনেক বড়। সুতরাং সময় এসেছে এখন বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসার। তিনি জানান, বাংলাদেশে উৎপাদিত সেরা পণ্যগুলোকে সামিটে উপস্থাপন করার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসাবাণিজ্যে বিশেষ অবদানের জন্য উদ্যোক্তাদের মধ্যে ‘বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ সম্মাননা প্রদান করা হবে।
‘বেস্ট অব বাংলাদেশ এক্সপো ২০২৩’: বাংলাদেশে উৎপাদিত সেরা পণ্যগুলোকে তুলে ধরার জন্য বিজনেস সামিটের পাশাপাশি আমরা ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ এক্সপো’-এর আয়োজন করেছে এফবিসিসিআই। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে দেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে তুলে ধরা হবে এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে। এই এক্সপোতে টেক্সটাইল, কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাবার, চামড়া, সিরামিক, পাট এবং হস্তশিল্পসহ বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় বিভিন্ন সেক্টরের পণ্য এবং পরিষেবা প্রদর্শিত হবে। বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রচার, বাংলাদেশি পণ্য ও পরিষেবার প্রচার, এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য ব্যবসার সুযোগ তৈরিতে ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ এক্সপো’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড:দেশের অর্থনীতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশে বিশেষ অবদানের জন্য উদ্যোক্তাদের সম্মানিত করতে এবার ‘বাংলাদেশ বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ সম্মাননার ব্যবস্থা করেছে এফবিসিসিআই। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অসামান্য স্বকৃতীস্বরূপ এই সম্মাননা প্রদান করা হবে। বিশেষ এই সম্মাননার জন্য অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিক এবং ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে বিশেষ জুরি বোর্ড গঠন করেছি। তারা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। আমি মনে করি, এই উদ্যোগ ব্যবসায়ীদের দেশ নির্মাণে আরো উত্সাহিত করবে। এই সামিটে অংশ নিতে ব্যবসায়ীসহ আগ্রহীদের (https://bdbusinesssummit.com/) ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হবে।
এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহসভাপতি এম এ মোমেন, মো. আমিন হেলালী, সালাউদ্দিন আলমগীর, হাবীব উল্লাহ ডন, পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের প্রধান কারিগরি উপদেষ্টা ড. এম মাশরুর রিয়াজ, এফবিসিসিআই পরিচালকবৃন্দ, মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।