কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত উপজেলা মিঠামইনে আয়োজিত জনসভায় আজ মঙ্গলবার বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ দিনব্যাপী সফরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী সকাল ১০টায় আনুষ্ঠানিকভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল হামিদ সেনানিবাসের উদ্বোধন করবেন। পরে কামালপুরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ ও বিশ্রাম নেবেন তিনি। এরপর বেলা ৩টায় স্থানীয় হেলিপ্যাড মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা করবেন। জনসভা সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে পুরো হাওর এলাকার মানুষের মধ্যেই বিরাজ করছে উচ্ছ্বাস ও উত্সাহ। ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রামসহ পুরো জেলায় সাজ সাজ রব। দীর্ঘ ২৫ বছর পর মিঠামইনে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে শেখ হাসিনা সর্বশেষ মিঠামইন সফর করেছিলেন ১৯৯৮ সালে। প্রধানমন্ত্রীর আজকের সফর নিয়ে দলীয় নেতাকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ সবাই তাদের নিজ নিজ অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করছেন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাওর এলাকার নজিরবিহীন উন্নয়নের কথা।
সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আমলে হাওর এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। একসময় হাওরে মানুষ আসতে চাইত না, আর এখন দেখতে আসে। প্রধানমন্ত্রীর অবদানের কারণেই এই উন্নয়ন হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রীর আগমনে অত্যন্ত খুশি হওয়ার কথা জানিয়ে মিঠামইনের বাসিন্দা সংবাদকর্মী রাকিবুল হাসান রোকেল বলেন, ‘এই অল ওয়েদার সড়ক ছাড়া আগে এই এলাকার লোকজনের শুকনো মৌসুমে পায়ে হাঁটার কোনো উপায় ছিল না। এখন অল ওয়েদার সড়কসহ অনেক সাবমার্জিবল (ডুবো) সড়ক নির্মিত হওয়ায় মানুষ অনায়াসে যাতায়াত করতে পারছে। সন্তানসম্ভবা ও গুরুতর অসুস্থ রোগীদের এখন আর পথে মরতে হয় না। কৃষকরা ফসলের দ্রুত বাজারজাত করতে পারছেন এবং ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন।’
অষ্টগ্রামের ব্যবসায়ী মহসীন মীর বলেন, ‘আগে অষ্টগ্রাম থেকে মিঠামইন আসতে তিন ঘণ্টা লেগে যেত, কিন্তু এখন আমরা মাত্র ২০ মিনিটে আসতে পারি।’ একইভাবে উপজেলার ঢাকি গ্রামের গৃহবধূ হেনা বেগম বলেন, ‘আগে যেখানে নৌকা দিয়ে মিঠামইন আসতে এক-দেড় ঘণ্টা লেগে যেত, সেখানে এখন ১০-১৫ মিনিটেই আসা যায়। এজন্য আমরা হাওরবাসী প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
হাওর এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা মনে করেন, একসময় তারা ছিলেন যোগাযোগ, চিকিৎসা ও শিক্ষাবঞ্চিত। সহজ কথায়, সর্বক্ষেত্রেই পিছিয়ে থাকা এক জনপদের বাসিন্দা। তবে টানা তিন মেয়াদে থাকা বর্তমান সরকারের আমলে জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্য ও গতি এসেছে। অনেক বেড়েছে শিক্ষার হার, ফসলের উৎপাদন।
মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার বৈষ্ণব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একসময়ের পশ্চাৎপদ হাওরে ব্যাপক উন্নয়নের কারণে খেটে খাওয়া মানুষের জীবনমান পরিবর্তন হয়েছে। এজন্য মানুষ তার প্রতি কৃতজ্ঞ।’ মিঠামইন সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শরীফ কামাল বলেন, ‘ব্যাপক উন্নয়নের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনের সংবাদে অত্র এলাকার মানুষ অত্যন্ত খুশি ও আনন্দিত। এ কারণে জনসভায় ব্যাপক গণজোয়ার হবে।’ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ বলেন, ‘একসময় ‘শুনায় পাও, বর্ষায় নাও’ ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উন্নয়নের কারণেই যোগাযোগ সহজসাধ্য হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে দফায় দফায় সভা করেছে ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ। এছাড়া করিমগঞ্জ, তাড়াইল, বাজিতপুর ও নিকলীতেও নেতাকর্মীরা সমাবেশ সফল করতে প্রস্তুতি নিয়েছেন। কেউ-বা সড়কপথে আবার অনেকে নৌপথে মিঠামইনে যাবেন বলে জানা গেছে। জনসভায় লাখো মানুষের সমাগম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।।