প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের মতো রপ্তানি আয়ের গতিও কমেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও সবাইকে অবাক করে দিয়ে টানা তিন মাস ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলারের বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছিল। কিন্তু সদ্য শেষ হওয়া ফেব্রুয়ারি মাসে তা কমে ৪ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন (৪৬৩ কোটি) ডলারে নেমে এসেছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
সর্বশেষ চার মাসের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে সর্বনিম্ন হলেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয় বেড়েছে ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪ দশমিক ২৯ বিলিয়ন (৪২৯ কোটি ৪৫ লাখ) ডলার আয় করেছিলেন রপ্তানিকারকরা। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার এসেছিল দেশে। আগস্টে আসে ৪ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে আসে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ও ৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। এরপর নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রপ্তানি আয় ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ১০, ৫ দশমিক ৩৬ ও ৫ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করে মোট ৩৭ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এনেছেন রপ্তানিকারকরা। এই পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। তার পরও পূরণ হয়নি লক্ষ্যমাত্রা; ৩৭ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যের তুলনায় অর্জন শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ কম। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের এই আট মাসে ৩৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় দেশে এসেছিল। ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ের মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৩১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার বা ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে।
দেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস হচ্ছে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। রপ্তানি আয়ের মতো ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্সেও ছিল নিম্ন গতি। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স প্রবাহের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারিতে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার (১.৫৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এটিও চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। তবে রপ্তানি আয়ের মতোই ফেব্রুয়ারিতে দেশে আসা রেমিট্যান্স গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এর আগে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের বছরের (২০২০-২১) চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম।
তবে বেশ উল্লম্ফনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর। প্রথম মাস জুলাইয়ে ২১০ কোটি (২ দশমিক ১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে আসে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ (২ দশমিক শূন্য ৩) ডলার। পরের মাস সেপ্টেম্বরে হোঁচট খেয়ে এক ধাক্কায় রেমিট্যান্স নেমে আসে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলারে। অক্টোবরে তা আরও কমে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলারে নেমে আসে। পরের তিন মাস অবশ্য রেমিট্যান্স টানা বেড়েছে। নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ ডলার, গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ১৭০ কোটি ডলার ও ২০২৩ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে আসে ১৯৬ কোটি ডলার। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে তা বেশ কমে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ডলারে নেমে এসেছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের এই ধীরগতির কারণে রিজার্ভ আরও কমেছে। বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। এক বছর আগে গত বছরের ১ মার্চ রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৬ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ৩২ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। তার আগে ছিল প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলার। আগামী সপ্তাহেই আকুর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের ১ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।