স্বর্ণ গলাতে পোড়ানো হয় নাইট্রিক অ্যাসিড। আর গয়নার সৌন্দর্য বাড়াতে ব্যবহার করা হয় সালফিউরিক অ্যাসিড। এই অ্যাসিড পোড়াতে চিমনি ব্যবহারের বিধিনিষেধ থাকলেও চট্টগ্রামের বস্ত্র ও বই ব্যবসার কেন্দ্র আন্দরকিল্লার হাজারী লেন এলাকার স্বর্ণালঙ্কার ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না। উপরন্তু অধিকাংশ জুয়েলারি কারখানার পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০২ অনুযায়ী এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ এলাকায় রয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের শতাধিক স্বর্ণের দোকান। দোকানগুলোতে স্বর্ণ পোড়ানোর কাজে অবাধে অ্যাসিডের উপরিউক্ত গ্যাসগুলোর ব্যবহার হচ্ছেই। ফলে অ্যাসিড নিঃসৃত ধোঁয়া কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবেশের জন্য। শহরে গড়ে ওঠা অধিকাংশ জুয়েলার্স কারখানার মালিক তোয়াক্কা করছেন না অ্যাসিড ব্যবহারের বিধিনিষেধ। অথচ অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬ নম্বর ধারায় এমন অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন তিন বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
কারখানাগুলো থেকে দিনরাত নির্গত হচ্ছে অ্যাসিড পোড়ানোর গ্যাস। গ্যাসের তীব্র বিষক্রিয়ায় (এলাকায় বসবাসকারী) শত শত পরিবারের লোকজন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা থেকে শুরু করে বস্ত্রব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীরা দিন পার করছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, চর্মরোগ, চক্ষুসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এখানকার মানুষ। চিকিৎসকদের মতে, অ্যাসিডের ধোঁয়া মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক। এই ধোঁয়ার কারণে মানুষের শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ হতে পারে। এমনকি হৃদরোগসহ নানাধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এলাকাটি এতোই জনবহুল যে, যার চতুর্দিকে লাগোয়া চট্টগ্রামের সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা টেরিবাজার এবং আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল, সনাতন ধর্মাবলম্বীর আবাসিক এলাকা, মসজিদ, মন্দির, কিন্ডারগার্টেন স্কুল। মসজিদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কিংবা মন্দিরে পূজোর সময় মানুষজনের দালানের সব ফাঁকফোকর বন্ধ করে থাকতে হয়, যা একপ্রকার দম বন্ধ করে বেঁচে থাকা।
এখানকার কারখানার কাজে ব্যবহৃত নাইট্রিক অ্যাসিড ও সালফিউরিক অ্যাসিড নিঃসৃত ধোঁয়া কারখানার স্বল্পদৈর্ঘ্য পাইপ দিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে পাশের বাড়িঘরে। আইন অনুযায়ী রাস্তার ধারে অ্যাসিডের ব্যবহার বেআইনি। একটি নির্ধারিত ঘরে ব্যবহারসহ ধোঁয়া নির্গমনে কমপক্ষে ১০০ ফিট পাইপ দিয়ে উপর দিকে প্রবাহিত করতে হবে। অথচ পাইপগুলো ২০ থেকে ৩০ ফিটও হবে না। তার চেয়ে বড় বিষয় এই গ্যাসগুলো ‘র’ অবস্থায় না ছেড়ে সামান্য খরচ করলেই মেশিনের মাধ্যমে পরিশোধন করে বাতাসে ছাড়া যায়—তাও করা হচ্ছে না। এদিকে দরজা-জানালা বন্ধ করেও রক্ষা পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। অ্যাসিডের ধোঁয়ায় শুধু বাতাসই বিষাক্ত হচ্ছে না, ঝাঁজে নিশ্বাস নেওয়াও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য যে, স্বর্ণালঙ্কার কারখানাগুলো কিছু দাহ্য গ্যাস ব্যবহার করে, যা ব্যবহারে অবহেলার কারণে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে এবং অতীতেও এমন ঘটনা দুর্লভ নয়। ভবিষ্যতেও প্রাণহানি, সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি এবং পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টির ঝুঁকিতে এলাকাবাসী। এমন ঘনবসতিপূর্ণ ও দেশের অর্থনৈতিক এলাকায় তাই ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ এবং গ্যাস ব্যবহার রোধ করতে সংশ্লিষ্টদের সুনজর জরুরি।