বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে বিসিবির বিরোধের জেরে বলি হয়েছে বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম। অসহযোগিতার অভিযোগে বিসিবি বৃহস্পতিবার বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম থেকে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং মালামাল প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এই ঘটনায় বগুড়ায় বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মিলন পালটা অভিযোগ করে বলেছেন, ১৬ বছর ধরে এই স্টেডিয়ামে বিসিবি কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করেনি। স্টেডিয়ামের সংস্কার বা উন্নয়নকাজও করেনি।’ তিনি উলটো বিসিবির বিরুদ্ধেই ‘অসহযোগিতা’র অভিযোগ করেন।
জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, গত ২ মার্চ বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরী জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে একটি চিঠি দিয়ে জানান যে, ‘বিগত কয়েক বছর যাবত্ বগুড়া ক্রীড়া সংস্থার অসহযোগিতার ফলে শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে বিসিবি কর্তৃক নিয়মিতভাবে টুর্নামেন্ট, ক্রিকেট লিগ আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, বিসিবি উক্ত স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় দায়দায়িত্ব জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নিকট হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। উক্ত ভেন্যুতে কর্মরত বিসিবির সব কর্মকর্তা/কর্মচারীবৃন্দকে ইতিমধ্যেই অন্য ভেন্যুতে বদলি করা হয়েছে।’ এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে বগুড়াবাসী বিসিবির সমালোচনা করে।
মাসুদুর রহমান মিলন বলেন, বিসিবি কেন রাগ করেছে আমাদের উপর সেটা জানা উচিত। আমরা ১ মার্চ প্রিমিয়ার লিগ উদ্বোধন করেছি । এ বিষয়ে একটা চিঠি দিয়ে বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্টকে জানানো হয়েছে। ১ মার্চ বাতেন নামের (বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির ম্যানেজার আব্দুল বাতেন) একজন (বিসিবির) আমাকে রিং দিয়ে বলেন, আমাদের যে খেলা আছে (ইয়ুথ ক্রিকেট লিগ) তাহলে কেন আপনি এখানে (চান্দু স্টেডিয়ামে) খেলা দিলেন । আমি বললাম, আমি খেলা দিলাম তাতে সমস্যা কি । আপনারাও খেলবেন, আমরাও খেলব— নো প্রবলেম। সামনে ২৫ মার্চ রমজান মাস। আমাদের খেলাগুলো আমরা কবে করব। খেলা করতে হবে না আমাদের, খেলা না করলে আমরা ডেভেলপ করব কেমন করে?’ ওনারা পরে বললেন ঠিক আছে দেখা যাক কি করা যায়। একটু পর আবার ফোন করে বললেন আপনাদের ভেন্যুতে সব লোক এবং মালামাল তুলে নিয়ে যাব।
তিনি বলেন, বিসিবি নাকি এখানে মাসে ১৫ লাখ টাকা খরচ করে। ১৫ লাখ টাকা খরচ করে ১ হাজার ৫০০ টাকার কোনো উপকার নেই। ১৫ লাখ টাকা কাকে দেয়। আর সেই টাকার বাস্তবায়ন কীভাবে হয়। গত ১৫ বছরে কি একটা ফ্লাডলাইট
জ্বালাতে পেরেছে বিসিবি? ১৫ বছরে কী কোনো রাস্তা-ঘাটের সংস্কার হয়েছে? আমাদের ব্যক্তিগত টাকায় স্টেডিয়ামের রাস্তা সংস্কার করেছি।’ বিসিবির কিছু কর্মকর্তার দৃষ্টিভঙ্গি বগুড়ার প্রতি পক্ষপাতমূলক বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। দুই সংস্থার এসব বিরোধ মিটিয়ে দ্রুতই বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম আগের অবস্থায় ফিরে আনা হোক।
চান্দু স্টেডিয়ামের ঘটনায় শনিবার দুপুরে বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম থেকে বিসিবি লোকবলসহ মালামাল গুটিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদ জানানো হয়। এই প্রতিবাদে প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের বগুড়া স্পোর্টস জোন ও মেঘদ্বীপ ক্রীড়া চক্রের খেলোয়াড়রা অংশ নেন। স্পোর্টস জোন বগুড়া দলের ব্যানারে বিসিবির এই সিদ্ধান্তকে অগ্রহণযোগ্য, হটকারী ও হাস্যকর আখ্যা দিয়ে এ প্রতিবাদ জানায় খেলোয়াড়রা।
বগুড়া স্পোর্টস জোন দলের সংগঠক মাহির আহমেদ নিলয় বলেন, ‘বিসিবির এই সিদ্ধান্তে বগুড়ায় উদীয়মান ও নবীন ক্রিকেটারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বগুড়ায় আন্তর্জাতিক মানের যেই মাঠ এটিও নষ্ট হয়ে যাবে। অতিবিলম্বে এই সমস্যার নিরসন হোক।’বগুড়া ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আতিকুর রহমান মেহেদী বলেন, এই স্টেডিয়াম ছিল উত্তরাঞ্চলের গর্ব। ক্রিকেটের নক্ষত্র তৈরির মাঠ কিন্তু বিসিবির এই ভুল সিদ্ধান্তে সব ভেস্তে যেতে বসেছে। শুধু মুশফিকুর রহিম বা শরিফুল ইসলাম নয় অনূর্ধ্ব—১৯ দলের তামিম, তৌহিদ হূদয়ই নয় বরং খাদিজাতুল কোবরা, শারমিন সুলতানা, ঋতু মনিসহ আরো অনেক নারী ক্রিকেটার তৈরির ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম। বিসিবি চলে গেলে বগুড়া তথা উত্তরাঞ্চলের নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটার তৈরিতে বড় ধরনের ক্ষতি হবে। উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা বিপথে যাবে।