শেষ হয়ে গেল দ্বিতীয় শেখ কামাল যুব গেমস। সেই ২৮ ফেব্রুয়ারি হতে ঢাকায় চূড়ান্ত পর্বের খেলা শুরু হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছিলেন রাজধানীর বনানী আর্মি স্টেডিয়ামে। গতকাল রাতে সেই মাঠেই যুব গেমসের (অনূর্ধ্ব-১৭) পর্দা নেমে গেল।
আট বিভাগের লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। ৪৯ স্বর্ণ, ৪০ রুপা, ৫৭ ব্রোঞ্জ পেয়েছে চট্টগ্রাম। ঢাকা বিভাগ ৪৬ স্বর্ণ, ৩৯ রুপা, ৬১ ব্রোঞ্জ পেয়ে দ্বিতীয় এবং খুলনা বিভাগ ৪২ স্বর্ণ, ৪৩ রুপা এবং ৬৯ ব্রোঞ্জ পেয়ে তৃতীয় হয়। এছাড়াও রাজশাহী ২৫, রংপুর ২২, ময়মনসিংহ ৪, বরিশাল ৩ এবং সিলেট ৩টি করে স্বর্ণপদক জয় করে। পুরস্কার তুলে দিয়েছেন প্রধান অতিথি বিওএর সভাপতি এবং সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। যুব গেমসের সেরা ২৮ তরুণ-তরুণীর মধ্যে ১০ লাখ ভাগ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
শেষ দিনে গেমসের আকর্ষণ ছিল তরুণ তরুণীদের ১০০ মিটার স্প্রিন্ট। আর্মি স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভরা দর্শকের সামনে যুব গেমসের দ্রুততম মানব-মানবী হয়েছেন খুলনা বিভাগের নাইম শেখ এবং রংপুরের আইরিন আক্তার।
খুলনার নাইম শেখ ১০.৮০ সেকেন্ডে স্বর্ণপদক জিতে নেন। ২০১৮ সালে প্রথম যুব গেমসে চট্টগ্রাম বিভাগের হাসান মিয়া এই খেতাব জিততে সময় নিয়েছিলেন ১০.৬০ সেকেন্ড। এই ইভেন্টে ১০.৯০ সেকেন্ড সময় নিয়ে খুলনা বিভাগের রবিউল ইসলাম রুপা ও ১১.১০ সেকেন্ড সময় নিয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছেন রাজশাহী বিভাগের আরিফ বিল্লাহ।
তরুণী বিভাগের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ১২.২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে দ্রুততম তরুণীর খেতাব জিতেছেন রংপুর বিভাগের আইরিন আক্তার। প্রথম আসরে রাজশাহীর রুপা খাতুন দ্রুততম তরুণী হয়েছিলেন ১২.৩০ সেকেন্ড সময় নিয়ে। এবার ১২.৫০ সেকেন্ডে রুপা জিতেছেন খুলনা বিভাগের সুলতানা জিন্নাত এবং ১২.৬০ সেকেন্ডে ব্রোঞ্জ জিতেছেন রাজশাহী বিভাগের উম্মে সুলতানা পপি।
দেশের দ্রুততম তরুণ খুলনা বিভাগের অ্যাথলেট নাইম শেখের বাবা একজন কৃষক। দরিদ্র পরিবার থেকে খেলাধুলায় আসা। ১২ কিলোমিটার হঁটে দিঘলীয়া ওয়াইএমএর মাঠে অনুশীলন করতে যেতে হতো।
নাইম শেখ বলেন, ‘বেশির ভাগ সময় খুলনার দিঘলীয়ায় ছিলাম। কোচ মুরাদুল ইসলামের উৎসাহে অ্যাথলেটিকসে এসেছি। এটাই আমার প্রথম সোনা। জুনিয়রে মিটে ২০২২ সালে অংশ নিয়েও তখন ভালো কিছু করতে পারিনি। এবার জিতে তাই খুবই আনন্দিত।’
বকেএসপির অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আইরিন আক্তার দুদিন আগে ২০০ মিটার ইভেন্টেও স্বর্ণ জয় করেছেন। এবার ১০০ মিটারেও দ্রুততম তরুণী হয়েছেন। আইরিন জানান, ২০১২ সালে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফুটবলে খেলেছি। মধ্যমাঠের খেলোয়াড় হওয়ায় খুব দ্রুত দৌঁড়াতে পারতাম। মূলত ওখান থেকেই স্প্রিন্টে আসার ইচ্ছেটা জাগে।’
কুড়িগ্রামের স্থানীয় কোচ সোহেল রানা বাবুর প্রেরণায় ২০১৯ সালে বিকেএসপিতে অ্যাথলেটিকসে ভর্তি হওয়া আইরিন বললেন, এতটুকু আসার পেছনে মায়ের অবদান বেশি। আমার বাবা আক্কাস আলি দিনমজুরের কাজ করেন। প্রথম দিকে বাবা খেলতে দিতেন না। মায়ের অনুপ্রেরণায় খেলছি। মা আমাকে লুকিয়ে অনুশীলন করতে পাঠাতেন। যখন ভালো করলাম তখন বাবাও মেনে নিলেন।
সম্পাদক- বখতিয়ার রহমান
প্রকাশক- শাওন ফারহানা
নির্বাহী সম্পাদক- ফরিদ সুমন