ক্রমশ বেড়েই চলছে মাছ, মাংস, ডিম, সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে ব্রয়লার মুরগির দামও। এক মাসের ব্যবধানে ব্রয়লারের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ১০০ টাকার মতো। ফলে অস্বস্তিতে রয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।
শুক্রবার (১০ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪৫-২৫৫ টাকায়। লেয়ার সাদা জাতের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকায়। সোনালি জাতের মুরগির প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকায়। সাধারণ মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে দেশি মুরগির দাম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজান ঘিরে আরও অস্থির হয়ে উঠতে পারে ডিম ও মুরগির বাজার।
এদিকে মুরগির পাশাপাশি বাজারে বেড়েছে ডিমের দামও। আজ প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা দরে। দেশি মুরগির ডিম হালি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে হাঁসের ডিমও।
মুরগি ও ডিমের মতো মাসের ব্যবধানে প্রায় ৫০ বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। আজ প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে। পূর্বে ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকায়।
দাম বৃদ্ধির একই চিত্র দেখা গেছে মাছের বাজারেও। প্রতি কেজি রুই মাছ ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া তেলাপিঁয়া প্রতি কেজি ২০০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, শিং প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, কই প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, টেংড়া প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, পাঙাস প্রতি কেজি ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি কাতল মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়, শোল মাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বছরখানেক আগেও যে পাঙ্গাস মাছ ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো, এখন সেই পাঙ্গাস কিনতে হচ্ছে প্রায় ২০০ টাকা কেজিতে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সপ্তাহের বাজার করতে আসা ইব্রাহীম খলিল বলেন, ‘আমাদের দেশে সব কিছুর দাম শুধু বেড়েই যায়, কিছুই কমে না। সবজির দাম বাড়ছে, মাছের দাম বাড়ছে, ডিমের দাম বাড়ছে। জানিনা এর সমাধান কবে হবে। তবে আমাদের উচিত যখন যে পণ্যের দাম বাড়বে তখন সেই পণ্য খাওয়া কমিয়ে দেওয়া। সম্ভব হলে সেই পণ্য সাময়িকভাবে বাদ দেওয়া, তাহলে হয়তো আমরা সাধারণ মানুষ মুনাফা লোভী সিন্ডিকেটের হাত থেকে মুক্তি পাবো। আমি যেমন মুরগি খাওয়া বাদ দিয়েছি, যতো দিন দাম কমবে না, ততো দিন মুরগি খাবো না!
এদিকে শীতের মৌসুম শেষ হওয়ায় সব ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, পটল প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, শসা ৪০-এ। বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ১২০ টাকা, করল্লা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, সজনে প্রতি কেজি ২০০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৪০ টাকা এবং কাঁচা কলা প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে বেড়েছে ছোলা, অ্যাংকর ডাল, বেসনসহ মুদি পণ্যের দাম। বাজারে গত এক মাসে ছোলার দাম
কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। মাসখানেক আগে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮০-৮৫ টাকা দরে, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০ টাকা। ছোলার সঙ্গে ছোলাবুটের দামও বেড়েছে ৫-১০ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি ছোলাবুট বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। এছাড়া অ্যাংকর ডাল কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে এসেছেন চাকরিজীবী আনিসুল ইসলাম। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু আমাদের বেতন তো বাড়ছে না। সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। জানিনা রোজার মাসে কিভাবে চলবো!
গত কয়েক মাস ধরেই বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে তেল-চিনি মিলছে না। বেঁধে দেওয়া দামে প্রতি লিটার খোলা পাম তেল ১১৭ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। একইভাবে সরকার নির্ধারিত প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকার পরিবর্তে বিক্রি হচ্ছে ১৭২ থেকে ১৭৫ টাকায়। খোলা চিনির ক্ষেত্রে নির্ধারিত দাম ১০৭ টাকা হলেও এখনো খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাল চিনি (দেশি) বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা দামে।
অন্যদিকে মসলার বাজারে আদা-রসুনের বাড়তি দাম কমেনি। উল্টো পেঁয়াজের দাম সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে ৫ টাকা। এখন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায় এবং আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা দরে। তবে বাজারে কিছুটা কমেছে কাঁচামরিচের দাম। কেজিতে ২০ টাকা কমে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে।