মহারাষ্ট্রে শিবসেনার ৫৫ জন বিধায়ক। তার মধ্যে ৩৯ জনই একনাথ শিন্ডের সাথে হাত মিলিয়েছেন। শিন্ডেকে নিয়ে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৪০। বুধবার উদ্ধব ঠাকরের আবেদন ছিল, আর কোনো বিধায়ক যেন শিন্ডে-শিবিরে না যান। কিন্তু তারপরেও ছয়-সাতজন বিধায়ক গুয়াহাটি গিয়েছেন এবং বিজেপি’র আশ্রয়ে থাকা শিন্ডেসহ বাকি বিধায়কদের সাথে ভিড়ে গেছেন।
উদ্ধব ঠাকরে বুধবার রাতেই মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন বর্ষা থেকে পৈত্রিক বাসভবন মাতোশ্রীতে চলে গেছেন। যাবার সময় তিনি বেশ কয়েকটি বড় বড় সুটকেস নিয়ে যান। একনাথ শিন্ডে এখনো অনুষ্ঠানিকভাবে দল ভাঙেননি। বিজেপি বা শিন্ডে কেউই সরকার গঠনের জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। যে বিজেপি সচরাচর দল ভাঙানোর সাথে সাথে সরকার গঠনের দাবি জানায়, কিন্তু এখানে ব্যতিক্রম।
বিজেপি সূত্র জানাচ্ছে, দলের শীর্ষ নেতারা চান, উদ্ধব ঠাকরে এবার কংগ্রেস ও এনসিপি-কে ছেড়ে তাদের সাথে চলে আসুক। হয়তো সেজন্যই এই অপেক্ষা। বিহারে তারা ঠিক এভাবেই নীতীশ কুমারকে নিজেদের দিকে নিয়ে এসেছিলেন। মহারাষ্ট্রেও তাদের আসল লক্ষ্য উদ্ধব ও তার ছেলে আদিত্য ঠাকরেকে এনডিএতে নিয়ে আসা।
সূত্র জানিয়েছে, শিবসেনায় উদ্ধব ঠাকরে বালাসাহেবের উত্তরাধিকারী। শিবসৈনিকদের কাছে তার আবেদন এখনো শেষ হয়ে যায়নি। একনাথ শিন্ডে বা অন্য বিধায়কদের খুব একটা কর্মি নেই। ফলে ভোটের ময়দানে সাফল্য পেতে গেলে উদ্ধবকে তাদের দরকার।
প্রশ্ন হলো, উদ্ধব কি বিজেপির সাথে হাত মেলাবেন? শিবসেনার বিক্ষুব্ধ বিধায়ক দীপক কেসরকার বৃহস্পতিবার বলেছেন, তারা চান উদ্ধব কংগ্রেস-এনসিপিকে ছেড়ে বিজেপির সাথে জোট করুন। তাহলে সব সমস্যা মিটে যাবে। উদ্ধব বলেছেন, তিনি হিন্দুত্বকে ছাড়েননি। ছাড়বেনও না। কিন্তু কংগ্রেস, এনসিপি জোট ছেড়ে দিয়ে তিনি বিজেপির সাথে হাত মেলাবেন কি না, তা উদ্ধব এখনো স্পষ্ট করেননি।
শিবসেনার মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত বলেছেন, ‘যারা যাওয়ার চলে যাক। ওরা একবার নির্বাচনে জিতে দেখাক। নেতা তো উদ্ধব ঠাকরে। বিধায়ক চলে গেছে, পার্টি আছে।’ বিজেপির সাথে কি যাবেন? সঞ্জয়ের জবাব, ‘যাদের যাওয়ার যাবে। ওরা দরকার হলে বিজেপির সাথে মিশে যাক।’
এনডিটিভিকে সঞ্জয় রাউত বলেছেন, ‘ওই বিধায়কদের মহারাষ্ট্রে আসতে হবে, বিধানসভায় আসতে হবে। তখন দেখা যাবে। মহারাষ্ট্রে ওদের ঘোরাফেরা করাই মুশকিল হবে।’
সঞ্জয়ের বক্তব্য, ‘ক্ষমতায় না থাকলে কি হবে? আমাদের পিছনে ইডি, সিবিআই লাগবে। জেলে পাঠাবে। তার বেশি কিছু তো হবে না। আমাদের ছেড়ে অতীতে অনেকে চলে গেছে। কিন্তু শিবসেনা থেকেছে।’
বস্তুত, শিবসেনার কর্মীরা রাস্তায় নেমে পড়েছেন। মুম্বাইয়ে দলের মুখপাত্র সামনার অফিসের পাশে বিক্ষুব্ধ বিধায়কের ছবির মুখ কালো করতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু পুলিশ তা করতে দেয়নি। বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের নির্বাচনকেন্দ্রে শিবসেনা কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাতেও শুরু করেছেন। চাপের পাল্টা চাপও চলছে।
ঘটনা হচ্ছে, শিবসেনা পরিষদীয় দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক একনাথ শিন্ডের সাথে। উদ্ধবের সাথে দলের ৩০ শতাংশ বিধায়কও নেই। এখন একনাথ শিন্ডে তার সাথে থাকা বিধায়কদের নিয়ে আসল শিবসেনা বলে দাবি করেন, তাহলে কি হবে? এই বিধায়করা দলত্যাগবিরোধী আইনের আওতায় পড়বেন না, কারণ উদ্ধবের সাথে ১৩ জন বিধায়ক আছেন। আর শিন্ডের সাথে আছেন অন্ততপক্ষে ৪২ জন। বিজেপি বা বিক্ষুব্ধরা সরকার গঠন করলে বিধানসভায় শিবসেনার স্বীকৃতি পেতে শিন্ডের খুব বেশি অসুবিধা হবে না। কিন্তু দলের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। সেই সিদ্ধান্ত অত তাড়াতাড়ি হয় না। দীর্ঘ সময় লাগে।
বৃহস্পতিবার শারদ পাওয়ার বিধায়কদের বৈঠক ডেকেছিলেন। সেখানে তিনি বিধায়কদের বলেছেন, তিনি উদ্ধব ঠাকরের সাথেই আছেন। কংগ্রেস নেতা কমলনাথও বুধবার একই কথা উদ্ধবকে জানিয়েছেন।