আদালতের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো ব্যক্তির বিচারকে গণমাধ্যমে বিচার কিংবা মিডিয়া ট্রায়াল বলা হয়। সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনবহির্ভূত এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না, যাতে কোনো ব্যক্তির জীবন, সুনাম ও সম্পত্তির হানি ঘটে। এছাড়াও কোনো ব্যক্তির দোষ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত তাকে অপরাধী বলা যায় না। তা সত্ত্বেও একশ্রেণির গণমাধ্যম কর্মী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা তথ্য যাচাই-বাছাই না করে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে ইচ্ছেমতো বিচার করে বসেন। পরবর্তী সময়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি আদালতের বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্দোষ প্রমাণিত হলেও ততক্ষণে তার সম্মানহানি হয়ে বসে। যা কখনো ক্ষতিপূরণযোগ্য নয়।
আদালতের মধ্যে সাধারণত বাদী ও বিবাদী—উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে রায় হয়; কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে সঠিক কারণ উদ্ঘাটন না করে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দায় দিতে থাকে। যা সম্পূর্ণ ন্যাচারাল জাস্টিসের নীতিকে ভঙ্গ করে। অভিযুক্ত ব্যক্তির কারণ দর্শানোর সুযোগ কিংবা সংবিধানের ৩১(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তার পছন্দমতো আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে তার বক্তব্য প্রদানের অধিকার আছে। যেগুলোর আগেই মনগড়া যুক্তি দিয়ে কোনো ব্যক্তির বিচার করা যায় না। মিডিয়া ট্রায়ালের ফলে কোনো ব্যক্তি শুধু তার সম্মান হারান না, পাশাপাশি মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। এমনকি মানসিক ট্রমা একসময় আত্মহত্যায় রূপ নেয়।
আজকাল গুজব, কুৎসা রটানো, অপপ্রচার ইত্যাদির অনেক বড় জায়গা হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। অনেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত স্ট্যাটাস দেয়। আবার একশ্রেণির অসাধু গণমাধ্যমকর্মী রয়েছেন যারা অর্থের বিনিময়ে ভুল তথ্য ও অপপ্রচার করেন। এটা আইনের দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ। আবার আত্মপক্ষ সমর্থনে অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য না নেওয়া হলে, তা হবে সাংবাদিকতার ইথিক্স বা নৈতিকতাবিরোধী। এর মাধ্যমে সহজে ও অল্প সময়ে কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ভ্যালু নিচে নামিয়ে ফেলা হয়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, রাজনৈতিক সহিংসতা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বিচার করতে আমরা অনেক সময় একটুও চিন্তা করি না। এর লাগাম টেনে ধরতে না পারলে দেশ যেমন অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অত্যাচারের ভীতির কারণে অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি হারিয়ে যেতে পারেন। এ ধরনের অসুস্থ সংস্কৃতি বন্ধ করতে প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।