গভর্নর ফজলে কবীর তার বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, পদটি তিনি উপভোগ করেননি। কারণ, তার কাছে মনে হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি অধিদপ্তরে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘকাল সরকারের আমলা থেকে গভর্নর হওয়া মানুষটির তো অনেক আগেই বোঝা উচিত ছিল, সচিবালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশন উইং থাকলে গভর্নরের পদ কোনোভাবেই উপভোগ্য হওয়ার কথা নয়
পরিসংখ্যানশাস্ত্রের অন্যতম গুরু স্যার রোনাল্ড ফিশার মার্ক টোয়েনের এক নিবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেট ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন ডিজেরেলির (১৮৬৮, ১৮৭৪-১৮৮০) করা বিখ্যাত উক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে তিন ধরনের মিথ্যা আছে। যথা মিথ্যা, ডাহা মিথ্যা ও পরিসংখ্যান।’ জোসেফ স্ট্যালিন বলেছিলেন, ‘একজন মানুষের মৃত্যু ট্র্যাজেডি। কিন্তু এক মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ট্র্যাজেডি না, পরিসংখ্যান।’ আসলে ফাঁকি মারলে যে ফাঁকে পড়তে হয়, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই ডিজেরিলি ও স্ট্যালিন পরিসংখ্যান নিয়ে এমনতর মন্তব্য করেছিলেন। কথাগুলো মনে পড়ে গেল ট্রেনে করে ঢাকার বাইরে যাওয়ার পথে গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া এক প্রতিবেদনসূত্রে, যেখানে বলা হয়েছে, ‘৩ মাসে খেলাপি ঋণ কমল ১৪ হাজার কোটি টাকা।’ খেলাপি ঋণ কমার এই খবরে যারা স্বস্তি পেতে চান, তাদের জন্যেই লেখার শুরুতে পরিসংখ্যানের মাহাত্ম্য তুলে ধরেছি। পরিসংখ্যানের গড়ের খেলার জোরেই তো বাংলাদেশে একজন ভিক্ষুক ও সর্বোচ্চ ধনীর বার্ষিক আয় সমান অর্থাৎ ২ লাখ ৯৬ হাজার ৫২০ টাকা (২০২১-২২ মাথাপিছু জাতীয় আয়), সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুটির মাথায়ও প্রায় সোয়া লাখ টাকার ঋণ। আসলে যেসব দেশে পরিসংখ্যানিক অর্থনীতি বা সরকারি অর্থনীতি আর বাস্তব জগতের প্রকৃত অর্থনীতি নামক দুই ধরনের অর্থনীতি বিরাজ করে, সেখানে পরিসংখ্যানিক সরকারি অর্থনীতি দিয়ে বাস্তবের প্রকৃত অর্থনীতির বিচার করা কূপমণ্ডূকতা।
স্বাধীন বাংলাদেশের ১১তম গভর্নর ফজলে কবির ৬৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণকে ছয় বছরে প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকায় রেখে গিয়েছিলেন, যা আবার ১২তম গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাসের মধ্যে বেড়ে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দাঁড়িয়েছিল ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা; ‘জাদুর চেরাগ’ দিয়ে ডিসেম্বর প্রান্তিকে তা বিশেষ এক দাওয়াইয়ের মাধ্যমে এক নিঃশ্বাসে ১৩ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা কমিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৭ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে আসা আসলে স্রেফ পরিসংখ্যানেরই খেলা। ইংল্যান্ড থেকে ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজমেন্ট এমএসসি আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করা গভর্নর আবুদর রউফ তালুকদার পরিসংখ্যানে তার দক্ষতা দেখিয়েছেন সরকারি মালিকানার ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের ১০ শতাংশ এবং বেসরকারি খাতে ৫ শতাংশের নিচে নিয়ে আসার লক্ষ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করে ব্যবসায়ীদের আরো এক দফা বিশেষ ছাড় দিয়ে, বণিক সমিতির পরামর্শে সুদের কিস্তি সুবিধায় ৭৫ শতাংশ অর্থ জমা দেওয়ার বিধান বাতিল করে। এখন ৫০ শতাংশ দিলেই কেউ আর খেলাপি হবেন না।
গভর্নরের পরিসংখ্যানিক দক্ষতা দেখানোর পাশাপাশি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অর্থমন্ত্রী মহোদয়ও তার পাটিগাণিতিক দক্ষতা দেখাচ্ছেন, ক্রমাগত ভর্তুকি তুলে দিয়ে। সে অনুযায়ী ইতিমধ্যেই জ্বালানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি খাতে ভর্তুকি কমছে। তীব্র মূল্যস্ফীতির মধ্যেও জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে, সমন্বয়ের নামে বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির দামও বাড়ছে। আইএমএফ এসবে খুশি হয়ে ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড় করেছে। শোনা যাচ্ছে, নতুন করে গোল বেধেছে ব্যাংকিং ও রাজস্ব খাতের সংস্কার নিয়ে। তাই আইএমএফের কিস্তি ছাড় নিয়ে টানাপড়েন চলছে। তবে যত টানাপড়েনই হোক ঋণ ছাড় হবে। কারণ, উন্নয়নকামী দেশগুলোকে ঋণের জালে আটকে ফেলাই আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের মূল কাজ। আসন্ন অর্থবছরে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়িয়ে রাজস্ব খাতের পাটিগাণিতিক সংস্কার করে দেখানো হবে। ব্যাংকিং খাতের সংস্কারেরও ভান-ভণিতা করা হবে। কারণ দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত এই খাতের ‘কারসিনোমা’ নামক ক্ষতিকর কোষকলা যেমন প্রকল্প ঋণ, এলটিআর, ক্যাশ ক্রেডিট, পিএডি, পুনঃ তপশিলকরণ, ঋণের অবলোপন, আমদানি বাণিজ্যে ওভার ইনভয়েসিং, রপ্তানি বাণিজ্যে আন্ডার ইনভয়েসিং ইত্যাদি অপসারণে যে অপারেশন প্রয়োজন, তা নির্বাচনি বছরে এসে করা সম্ভব না। এ জন্যই সরকারকে নির্বাচনের বছরে এসেও অজনপ্রিয় হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের ভর্তুকি কমানোসহ দরিদ্রবিদ্বেষী সব সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে।
এখানে বলা প্রয়োজন, ২০২২-২৩ সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। ভর্তুকির টাকা যেহেতু জনগণের দেওয়া সরাসরি করের টাকা, সেহেতু এই টাকা উন্নয়নকাজে ব্যয় করাই জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রের কাজ। অথচ আমাদের ভর্তুকির কাঠামোটাই ধনিক শ্রেণিবান্ধব করে বিন্যাস করা। এ জন্যই ৫০ বছর হয়ে গেলেও পোশাক খাত ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর এখনো বড় বড় ভর্তুকি, ঋণ, প্রণোদনা আর কর-শুল্ক ছাড়ের প্রয়োজন হয়; জনগণের আমানত লুটপাট করা দেউলিয়াপ্রায় ব্যাংকগুলোকে উদ্ধার করতে হয়; আর চতুর্থ শিল্পবিপ্লব প্রসারের গুরুত্বপূর্ণ খাতসমূহ অবহেলিত থেকে যায়; বহুকষ্টে শিক্ষা খাতে ১২.০১ শতাংশ, স্বাস্থ্যে ৫.৪০ শতাংশ, সংস্কৃতিতে ১ শতাংশের কম বরাদ্দ দিতে হয়। এজন্যই যথেষ্ট বেতন-ভাতা পেলেও সরকারি চাকরিজীবীদের ঘুষ-দুর্নীতির ক্ষুধা মেটে না, কালোটাকা-অর্থপাচারের রমরমা ভাব কমে না।
আইএমএফ বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার কমানো, ডলারের মূল্য বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়াসহ আরো কিছু শর্তও দিয়েছে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক পরিসংখ্যানের কারসাজিতে বিভিন্ন সূচকের দৃষ্টিকটু অংশগুলো সংশোধন করছে, ডলারের দাম ছেড়ে দিয়েছে ব্যাংকগুলোর হাতে। এসব করে আসলে ঋণের টাকা ফেরত দেওয়ার সংস্কৃতি ও ব্যাংকিং খাতকেই ধ্বংস করা হচ্ছে। ব্যাংকিং খাত ও ঋণখেলাপিরা অতীতেও অনেক ধরনের সুবিধা পেয়েছে। তারা সংশোধনও হয়নি, ঋণও শোধ করেনি। ভবিষ্যতে যে হবে না—করবে না, তাও নিশ্চিত। কারণ, স্বজনতুষ্টিবাদী পুঁজিবাদে যে ঋণ ফেরত দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, তা আমাদের ঋণখেলাপিরা বুঝে গেছে। এরা বুঝে গেছে, দেউলিয়া হলে অর্থনীতিতে যখন মন্দা আসে, তখন আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক-এডিবি ঋণ দিতে এগিয়ে আসে! এরা ভালো করেই জানে, ঋণের বোঝা বাড়লে বাড়ে প্রতিটি নাগরিকের ঘাড়ে, তাতে তাদের কী আসে-যায়। এরা জানে, বিদেশি ঋণ ২০২৪ সাল শেষে দাঁড়াবে ১৩০ বিলিয়ন ডলার বা ১৩,৮০৫,৪১৪,৭৪০ টাকা; যা জনগণকে নিংড়ে-পিষেই তুলে ফেলা হবে। লুকোনো-ছাপানো পরিসংখ্যান হাজির করে আরো বিদেশি ঋণ নিলে, তা যে আবার ঘুরেফিরে সেই ঋণখেলাপি-কালোটাকার মালিক-অর্থপাচারকারীরাই খেয়ে নেয়; তা বুঝতে এখন আর অর্থনীতিশাস্ত্র-এমবিএ-সিএ বিষয়ে পণ্ডিত হতে হয় না, নামসর্বস্ব ঠিকানা দিয়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া পান-দোকানি হলেই যথেষ্ট।
বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সৎ ও সাধারণ মানুষ বহুজাতিক কোম্পানি, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ডব্লিউটিও, এডিবি, আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ব্রিকস ব্যাংককে তীব্র সন্দেহের চোখে দেখে। কারণ এরা সংকটকালেও গ্যাস-বিদ্যুৎ-তেল-পানিতে ভর্তুকি কমাতে (আসলে মূল্যবৃদ্ধি) বলে। কিন্তু বলে না যে কৃষি, শিল্প, বাণিজ্যে ধনীবান্ধব সরকারি সব ভর্তুকি ও প্রণোদনা তুলে দাও। কোভিড-১৯ আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অভিঘাতে তেল-গ্যাস-সারের দাম তো বিশ্বব্যাপী রেকর্ড পর্যায়ে, ভর্তুকি দেওয়া ছাড়া তো দরিদ্র ও জনকল্যাণকামী সরকারের কোনো উপায় নেই, তা এরা স্বীকার করবে না। এরা বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রগুলো তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, টিউশন ফিসের বিল পরিশোধে জনগণকে আর্থিক সহায়তার নামে সরাসরি ভর্তুকি দিচ্ছে, সে নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করবে না। এরা একদিকে ভুলভাল মূল্যসূচক ও সূচকসংখ্যা ব্যবহার এবং ফাঁকিজুকির পরিসংখ্যানকে প্রশ্রয় দেবে, অন্যদিকে সুদের হার ১-২ শতাংশ রাখলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সঙ্গে মিলেমিশে সুদের হার (রেপো রেট) বাড়িয়ে চলতি ডলারমূল্যে ঋণের সুদ আদায় করবে। এরা ধনী-সম্পদশালীদের সম্পদ পুনর্বণ্টন, সম্পদ কর, অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর, পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার, কালোটাকা জব্দ, ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে কোনো শর্ত আরোপ করে না। এরা বলে না যে বাংলাদেশের বাজেটে কোন খাতে কত পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া হয়, তা যেন পুরোপুরি স্পষ্ট করা হয়। এরা ভর্তুকির অনেক হিসাব ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন করতে উৎসাহিত করে। আর এ কারণেই এদের ঋণ নিয়ে কোনো দেশ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছে, তার নজির নেই। এদের (বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ) প্রধান পদে নিয়োগ দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বেশির ভাগেরই নিয়োগ হয় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মাধ্যমে। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণ নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর দিবাস্বপ্ন বুদ্ধিমান কোনো দেশই দেখে না। এখানে উল্লেখ্য, আমেরিকা বিশ্বের সর্বোচ্চ ঋণগ্রস্ত দেশ, কিন্তু কখনো দেউলিয়া হয় না, হবেও না। কারণ, দেউলিয়া হওয়ার আগেই তারা ঋণের সিলিং বাড়িয়ে নেয়।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সরকারের অনেক বড় সাফল্য জনগণের কাছে ম্লান হয়ে গেছে তীব্র মূল্যস্ফীতির ধকলে। কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাত আর ইউরোপে চলমান যুদ্ধের ফলে বিশ্বের কোনো দেশই মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে এখন মুক্ত নয়। সত্যি কথা বলতে কি, বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অনেক ভালো আছে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের এ-সংক্রান্ত দাবিদাওয়া পুরোপুরি অমূলক নয়। জনগণ কিছুটা হলেও এসব বোঝে। তাই তো কষ্ট হলেও সুদিনের আশায় মুখ বুজে আছে। কিন্তু যখন তারা দেখে ব্যাংকিং খাতে তীব্র অরাজকতা চলছে, যেখানে মুষ্টিমেয় মানুষের ধনিক শ্রেণি একচেটিয়া রাজত্ব করছে; আর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তার কুফল ভোগ করছে, তখন তাদের রাগে গা জ্বলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। একদিকে একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে ১০ লাখ টাকা ঋণের জন্য ছয় মাস ব্যাংকের পেছনে দৌড়াতে হচ্ছে, অন্যদিকে তথাকথিত বড় উদ্যোক্তার সাড়ে ২২ কোটি টাকার ঋণের অর্থ শীর্ষ ১০ ঋণখেলাপিসমৃদ্ধ একটি ব্যাংকের পর্ষদে সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে নবায়ন ও অনুমোদনের পর রাত ৯টায় তুলে ফেলার দৃশ্যায়ন হচ্ছে। একদিকে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করা শ্রমিকটি স্বদেশের বিমানবন্দরে নাজেহাল হচ্ছে; অন্যদিকে কালোটাকায় বিত্ত-বৈভব গড়া শতকোটি টাকা বিদেশে পাচারকারী ব্যক্তিটি বিনা পাসপোর্টে দেশে ঢুকে অনুষ্ঠান করছেন। এসব কারণেই হয়তো গভর্নর ফজলে কবীর তার বিদায়ি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, পদটি তিনি উপভোগ করেননি। কারণ, তার কাছে মনে হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি অধিদপ্তরে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘকাল সরকারের আমলা থেকে গভর্নর হওয়া মানুষটির তো অনেক আগেই বোঝা উচিত ছিল, সচিবালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশন উইং থাকলে গভর্নরের পদ কোনোভাবেই উপভোগ্য হওয়ার কথা নয়, ব্যাংকিং খাতের উন্নয়ন করা যায় না।
সবকিছু দেখে-শুনে-বুঝে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের খেয়েপরে বিদেশে যারা সম্পদের পাহাড় গড়ছেন, তাদের সঙ্গে জাতির পিতার কন্যা পেরে উঠছেন না। কিন্তু এদের দমন করা তো জরুরি। কারণ, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির এসব এজেন্টই কিন্তু বাংলাদেশের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তানটিকে খুন করায় ইন্ধন যুগিয়েছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিশেষ শ্রেণিকে ভর্তুকি আর ছাড় দিতে দিতে পাকিস্তানের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক হাল কী হয়েছে, তা নিশ্চয় দেখতেই পাচ্ছেন। দেশটিতে একদিকে সরকারি কর্মকর্তাদের বাড়ি-গাড়ি নিলামে তুলে নিজের পয়সায় বাসে করে অফিসে যাওয়ার নির্দেশনা জারি করা হচ্ছে, বেতন কমানো হচ্ছে, ব্রয়লার মুরগি লাক্সারি ক্যাটাগরিতে পড়ে বাংলাদেশি ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে; অন্যদিকে ভর্তুকির পয়সায় পোষা হাতিদের সদর দপ্তর ও মসজিদে আত্মঘাতী হামলায় বিপুল প্রাণহানি ঘটছে। এমনকি মার্কিন আগ্রাসনে ছিন্নবিচ্ছিন্ন আফগানিস্তানের তালিবানরাও তাদের হুমকিধামকি আর জ্ঞান দিচ্ছে; বলছে, দেখেছ আমেরিকান সৈন্যদের কী হাল করেছি। আর গর্তে পড়ে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বিড়ালকণ্ঠে সিংহের দর্পে বলতে চাইছেন, পাকিস্তানের কিন্তু পরমাণু বোমা আছে। নিজেকে দেউলিয়া করে শ্রীলঙ্কা আমাদের কিছু শিক্ষা দিয়েছে, এখন পাকিস্তান থেকেও কিছু শিক্ষা নিতে হবে। তা না-হলে আট দেশের দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু ভারত ও ভুটানকে সঙ্গে নিয়ে তুলনামূলক ভালো থাকা বাংলাদেশের হালও খারাপ হতে পারে।