দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয়ে আশাবাদী বিভিন্ন কোম্পানির প্রধান নির্বাহীরা (সিইও)। একটি জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেকের বেশি প্রধান নির্বাহী বলেছেন, স্বল্প (এক বছর) ও মধ্য মেয়াদে (তিন বছর) তাদের ব্যবসার প্রবৃদ্ধি হবে। ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারা ব্যবসার বহুমুখীকরণে সচেষ্ট।
প্রাইসওয়াটারহাউজ কুপার্স বাংলাদেশের জরিপে অংশ নেওয়া প্রধান নির্বাহীরা এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। সেই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কিছু হুমকিও চিহ্নিত করেছেন তারা। ৪৭ শতাংশ প্রধান নির্বাহী বলেছেন, আগামী এক বছরে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। ৩৪ শতাংশ প্রধান নির্বাহী বলেছেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কথা, ২২ শতাংশ বলেছেন ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার কথা।
এসব চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রধান নির্বাহী মনে করছেন, ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুনত্ব নিয়ে আসতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য বর্তমান ধারায় চললে কতদিন তা অর্থনৈতিকভাবে টেকসই হবে বা টিকে থাকতে পারবে, এমন প্রশ্নের জবাবে জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেক প্রধান নির্বাহী বলেছেন, এই ধারায় চললে ব্যবসা অর্থনৈতিকভাবে টেকসই হবে না।
মুনাফা হ্রাসের আশঙ্কার কারণ হিসেবে প্রধান নির্বাহীরা নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন। ৬৯ শতাংশ প্রধান নির্বাহী বলেছেন, গ্রাহকদের অগ্রাধিকার বদলে যাওয়াই প্রধান চ্যালেঞ্জ। পিডব্লিউসির বৈশ্বিক জরিপেও প্রধান নির্বাহীরা এই বিষয়কে মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। নিয়মকানুনের পরিবর্তনের চেয়ে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহীরা চলমান বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়া নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। এ ছাড়া প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, বিধিবিধান পরিবর্তন, শ্রমিক ও দক্ষতার সংকট, নতুন প্রতিযোগীর আবির্ভাব ও নতুন জ্বালানির ব্যবহার এসব বিষয়ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় প্রভাব ফেলবে। তবে দেশের তৈরি পোশাক খাতে নতুন চিন্তার সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পিডব্লিউসি দেখেছে, বেশ কয়েকটি তৈরি পোশাক কোম্পানি উদীয়মান দেশগুলোকে নতুন বাজার হিসেবে দেখছে। ইতিমধ্যে নতুন কিছু দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। ফলে ইউরোপ আমেরিকায় যে মন্দাভাব বিরাজ করছে, সেই ক্ষতি কিছুটা পোষানো সম্ভব হবে। দেশের ৬৬ শতাংশ প্রধান নির্বাহী মনে করেন, আগামী ১২ মাসে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার কমবে। তা সত্ত্বেও ৫৩ শতাংশ প্রধান নির্বাহী বলেছেন, আগামী বছর তাদের ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি হবে। জরিপে দেখা গেছে, পণ্য ও সেবার বহুমুখীকরণের মধ্য দিয়ে দেশের কোম্পানিগুলো অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে। সেই সঙ্গে পরিচালন ব্যয় হ্রাস ও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির মধ্য দিয়েও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে তারা। তবে বেশির ভাগ প্রধান নির্বাহী এ বিষয়ে সচেতন। প্রতি পাঁচ জনে চার জন বলেছেন, তারা ইতিমধ্যে এসব করা শুরু করে দিয়েছেন বা আগামী এক বছরের মধ্যে এসব করার চিন্তা করছেন। দেশের প্রধান নির্বাহীদের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে খুব একটা উদ্বেগ নেই। যদিও আগামী এক বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ব্যবসার ব্যয় বাড়বে এবং সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হবে।
পিডব্লিউসির বৈশ্বিক প্রধান নির্বাহীদের ওপর পরিচালিত জরিপ চলতি বছরের শুরুতে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে প্রকাশিত হয়। এবার সেই জরিপের বাংলাদেশ অংশ প্রকাশ করা হলো। বাংলাদেশের ৩২ জন প্রধান নির্বাহী এই জরিপে অংশ নেন। বৈশ্বিক জরিপে দেখা যায়, ৭৩ শতাংশ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও মনে করছেন, চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার কমবে। প্রধান নির্বাহীদের কণ্ঠে এমন হতাশার কথা গত এক দশকের মধ্যে কখনোই শোনা যায়নি।