যেভাবে রক্ষা পাচ্ছেন ইমরান খান : ক্রিকেটের মাঠে তিনি লড়াই করেছেন বীরদর্পে। ১৯৯২ সালে পাকিস্তানকে এনে দিয়েছিলেন বিশ্বকাপের মুকুট। এরপর আর ক্রিকেট খেলা হয়নি তার। সেই সময় থেকে তিনি দেশটির জনপ্রিয় একজন তারকায় পরিণত হন। ক্রিকেটের মাঠ থেকে তিনি নামেন রাজনীতির মাঠে। এই মাঠে তাকে তেমন একটা কষ্ট করতে হয়নি বলে অনেকে মনে করেন। কারণ দেশটির প্রভাবশালী সামরিক বাহিনী তার পক্ষে ছিল বলে মনে করা হয়। আবার ২০২২ সালের এপ্রিলে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। এজন্য তিনি সামরিক বাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেন। যদিও তারা সবাই ইমরান খানের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু তাই বলে এসব আলোচনা পাকিস্তানে থেমে যায়নি।
নতুন করে আবার পাকিস্তানে সংকট সৃষ্টি হয়েছে ইমরান খানের গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে। গত ১৫ মার্চ তোশাখানা মামলায় ইমরান খানকে গ্রেফতার করতে পুলিশ দুই দিন তার লাহোরের বাসভবন জামান পার্কের বাসার সামনে অবস্থান নিয়েছিল। এমনকি আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্সও সেখানে গিয়েছিল। কিন্তু তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। কারণ তাকে গ্রেফতার করা হবে এমন খবর শুনে হাজার হাজার সমর্থক জামান পার্কের সামনে হাজির হয়। তারা বিক্ষোভ করতে থাকে। এমনকি বাসার সামনে শিপিং কনটেইনারও রেখে দেয়। পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। শেষ পর্যন্ত পুলিশ হটতে বাধ্য হয়।
পুলিশের পিছু হটার খবর সারা বিশ্বের গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। একই সঙ্গে জানা যায়, ক্রিকেট দলের সাবেক বিশ্বকাপজয়ী ক্যাপ্টেনকে ক্রিকেটই বাঁচিয়ে দিয়েছে। কারণ ১৫ মার্চ ছিল পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) নকআউট ম্যাচ। পাঞ্জাব প্রদেশের তথ্যমন্ত্রী আমির মীর জানান, লাহোরের একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট যাতে ঠিক মতো হতে পারে সেজন্য পুলিশ খানকে গ্রেফতারের অভিযান স্থগিত করেছে। আমির মীর ক্রিকেটের কথা বললেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ বলেছেন অন্য কথা। তিনি জানিয়েছিলেন, ইমরান খান গ্রেফতার থেকে বাঁচতে সমর্থকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন। তার কথায় বোঝা যায় যে, ইমরান খানের জনপ্রিয়তা কম নয়।
কেবল ১৫ মার্চের ঘটনা নয়, গত ১৮ মার্চ রাজধানী ইসলামাবাদে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের পর ইমরান খানের বিরুদ্ধে মামলার নির্ধারিত এক শুনানি বাতিল করা হয়। তাকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে। আবার যে কোনো দিন গ্রেফতারও করা হতে পারে।
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। সম্প্রতি গ্যালাপ পাকিস্তান দ্বারা পরিচালিত একটি দেশব্যাপী জরিপ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুসারে, ৬১ শতাংশ পাকিস্তানি ইমরান খানকে ইতিবাচক রেটিং দিয়েছেন। দ্বিতীয় অবস্থানে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) সুপ্রিমো নওয়াজ শরিফ এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো ৩৬ শতাংশ পাকিস্তানিদের সমর্থন পেয়েছেন। ৬৫ শতাংশ পাকিস্তানি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে নেতিবাচকভাবে রেট করেছেন এবং ৩২ শতাংশ তাকে ইতিবাচক রেটিং দিয়েছেন।
পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদমাধ্যম একটি নিবন্ধ লিখেছেন আম্বের রহিম শামসি। করাচির সেন্টার ফর এক্সিলেন্স ইন জার্নালিজমের এই পরিচালক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। সামনের নির্বাচন আসলে হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তিনি আবার সেনাশাসনের আশঙ্কা করছেন। তবে তিনি ইমরান খানের তার অবস্থানে অটুট থাকার কথা জানিয়ে বলেছেন, ইমরানের বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলা রয়েছে। এর কিছু বেশ গুরুতর, কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। এরপরও ইমরান খান তীব্র সরকারবিরোধী অবস্থানে অবিচল। এক্ষেত্রে ইমরান খান ব্যতিক্রম। সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে ক্ষমতা হারানোর পর পাকিস্তানের আর কোনো নেতা এত বিপুল জনপ্রিয়তা ও পরাক্রম নিয়ে রাজনীতি করতে পারেননি। এমন নজির পাকিস্তানে নেই বললেই চলে। ইমরান সেই ইতিহাস ভেঙে দিয়েছেন।
পরমাণু কর্মসূচি ছাড়বে পাকিস্তান! : পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেছেন, পাকিস্তান সংকটের এক ‘পারফেক্ট স্টর্ম’ বা যথার্থ ঝড়ের মুখোমুখি। এক সপ্তাহ আগে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ৪০৩ কোটি ডলার। দেশটির পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে, ৫১টি অতি প্রয়োজনের পণ্যের দাম এতটা বেড়েছে যে, এগুলোর মুদ্রাস্ফীতি ৪৫ শতাংশে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে আইএমএফ পাকিস্তানকে জানিয়েছে, ঋণ পেতে পরমাণু কর্মসূচি ত্যাগ করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় কমাতে হবে অন্তত ১৫ শতাংশ। এছাড়াও আরো চারটি শর্ত রয়েছে আইএমএফ-র। তবে আপাতত ইসলামাবাদের সবচেয়ে বড় মাথা যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পরমাণু কর্মসূচি ত্যাগের শর্তটি। আইএমএফ জানিয়েছে, ঋণ পেতে হলে চীনা ঋণ এবং চীন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরে বেইজিংয়ের বিনিয়োগের নীরিক্ষা করার অনুমতি দিতে হবে। সেই নীরিক্ষা করবে তৃতীয় পক্ষ। পাশাপাশি বন্ধু দেশগুলোর থেকে দ্বিপাক্ষিক অর্থায়নের বিষয়ে আশ্বাস দিতে হবে পাকিস্তানকে। যদিও সৌদি সরকার জানিয়েছে, সহজ শর্তে আর ঋণ দেবে না তারা। তাছাড়া দেশের বিরোধীদের থেকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতিশ্রুতি দাবি করেছে আইএমএফ। এরপরই অর্থমন্ত্রী ইশাক দার বলেছেন, পাকিস্তান দূরপাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র রাখবে কি না, তা নিয়ে কথা বলার অধিকার কারো নেই। অর্থমন্ত্রী স্পষ্ট করেছেন, পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগ সংক্রান্ত আইএমএফ-র শর্ত মানা পাকিস্তানের পক্ষে সম্ভব নয়।