মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা। রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলে পেশাদার বক্সিং এক্সবিসি ফাইট নাইট শেষ। চ্যাম্পিয়ন রুকসানা বেগম তখনও ব্যস্ত। তাকে নিয়ে টানাটানি। হোটেলেই তার রুম। চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিজের রুমে গিয়ে ঘামে ভেজা খেলার পোশাক পরিবর্তন করে আবার বক্সিং রিংয়ে ফিরে আসা ক্লান্ত রুকসানাকে নিয়ে টানাটানি শেষ হচ্ছিল না।
আবার রুকসানাকে তোলা হলো বক্সিং রিংয়ে। সেখানে নিয়ে ফটোসেশন শুরু হয়। বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পেশাদার বক্সারদের নিয়ে দ্বিতীয়বার আয়োজিত বক্সিং টুর্নামেন্টের আয়োজকরা ব্যস্ত রুকসানাকে নিয়ে। ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আদনান হারুন সবার আবদার মেটানোর চেষ্টায়। হোটেলের বলরুমে সাজিয়ে তোলা বক্সিং রিং এবং এর চারপাশের বসার ব্যবস্থা যেন ভায়া হাটের মতোই। আলো ঝলমলে রাতটা যেন বক্সারদের জন্য অন্যরকম ছিল। পেশাদার বক্সিং খেলতে হলে নিজেদের প্রস্তুতিটাও হতে হয় সেকরম। দেশের বক্সিং এখনো সেই শৌখিন যুগেই পড়ে রয়েছে। অথচ বক্সিংয়ে পদক জিতেছিল এশিয়ান গেমসে।
সিলেটের বালাগঞ্জের কন্যা পেশাদার বক্সার রুকসানা বেগম। ২০১৬ সালে কিক বক্সিংয়ে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। জন্ম ইংল্যান্ডে। বাবা-মা সিলেটের হলেও সেভাবে বাংলা বলতে পারেন না। শিশু বয়সে এসেছিলেন বাংলাদেশে। কিন্তু খেলায় অংশগ্রহণ করতে আসাটা এবারই প্রথম। ইউরোপে রুকসানার কদর আছে। জয় করেছেন অনেক পদক।
পঞ্চম বাউটে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সুপারস্টার রুকসানা বেগমের মুখোমুখি হন প্রতিভাবান বাংলাদেশি বক্সার তানজিলা। ফ্লাইওয়েট ক্যাটাগরিতে ১০ রাউন্ডের খেলায় লড়াই হয়। দুই নারী বক্সারের মধ্যকার ম্যাচটিই সবচেয়ে বেশি জমাট বেধে ছিল। প্রত্যেক রাউন্ডই ছিল উত্তেজনাকর। দুর্দান্ত লড়াইয়ের পর রুকসানা বেগম ডব্লিউবিইউ ইন্টারকন্টিনেন্টাল শিরোপা জয় করেন। বক্সিং রিংয়ে রুকসানা বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্যের পতাকা জড়িয়ে ধরেন। ব্রিটিশ বাংলাদেশি নারী হলেও রুকসানার গায়ে জড়ানো জাতীয় পতাকা উপস্থিত দর্শকদের আবেগী করে তোলে। করতালির আওয়াজ বেড়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশ বক্সিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আদনান হারুন, রুকসানার হাতে ডব্লিউবিইউ ইন্টারকন্টিনেন্টাল চ্যাম্পিয়শিপ বেল্ট তুলে দেন।
আন্তর্জাতিক পেশাদার বক্সিং টুর্নামেন্ট বেক্সিমকো এক্সবিসি ফাইট নাইট রিংয়ে ১৪ জন বক্সার সাতটি বিভিন্ন বিভাগে লড়াই করেন। ফেদারওয়েট, লাইট হেভিওয়েট, ব্যান্টামওয়েট, ক্রুজারওয়েট, ফ্লাইওয়েট, লাইটওয়েট এবং ওয়েল্টার ওয়েট ক্যাটাগরিতে লড়াই হয়। বক্সার কাওসার, সুরো কৃষ্ণ চাকমা, আল-আমিন, উৎসব আহমেদ, আমিনুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম, শাহরিয়ার শান্ত, আবু তালহা হূদয়, নারী বক্সার তানজিলা, ফ্রান্সের এলিয়ট মিশেল, থাইল্যান্ডের আনান পংখেতে, ভারতের আশিষ কুমার, দুষ্যন্ত শ্রীবাস্তব বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অংশগ্রহণ করেন।