জাতি হিসেবে দিন দিন আমাদের অবনতি হচ্ছে—এ কথা আমরা সবাই জানি! কিন্তু এই অবনতি তো দিন দিন চরম আকার ধারণ করছে! মননে, মানসিকতায়, নৈতিকতায়, সততায় নিয়মিত ভাটা পড়ছে আমাদের। প্রতি বছরই যেন একটু একটু করে নৈতিকতা বিসর্জন দিচ্ছি আমরা। যাহোক, যা বলতে চাই তা হলো—মাহে রমজান আমাদের মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি পবিত্র মাস। এই মাসে সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভে মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা রোজা রাখেন। এটা ইসলাম ধর্মের একটি বিধান। প্রতিটি সুস্থ মুসলমানের জন্য এই রোজা রাখা ফরজ। সেই ফরজ কাজটি করার জন্য ধর্মপ্রাণ মানুষরা যখন প্রস্তুতি নেয় তখনই খায় বড় ধাক্কাটা। প্রতি বছর রমজানকে কেন্দ্র করে বাড়ানো হয় সমস্ত নিত্যপণ্যের দাম। মধ্যবত্তিদের জন্য রমজান মাস হয়ে উঠে মারাত্মক কঠিন! অসহায়ত্ব নিয়ে সেহরি আর ইফতার করতে যাওয়া মধ্যবিত্তরা না বলতে পারে দুঃখের কথা, না চাইতে পারে সহায়তা। এই সমাজ যেন শুধু উচ্চবিত্তের আর নিম্নবিত্তের! উচ্চবিত্ত নিজেও খাবে দানও করবে। নিম্নবিত্তরা চেয়েচিন্তে সেটা নিতে পারে। যদিও অনেক সময় নিম্নবিত্তরাও কষ্টে থাকে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বেশি মানুষ মধ্যবিত্ত। এসব মানুষের দুঃখ যেন শেষ নেই!
রমজান এলেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চক্র সিন্ডিকেট গেড়ে বসে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। প্রতি বছরই এই কাজটি করে থাকে দুষ্কৃতকারীর দল। এর যেন শেষ নেই! দেখার কেউ নেই! সরকার কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণ করে বটে, কিন্তু কোনো ‘অদৃশ্য’ কারণে পরিবর্তন ঘটে না অবস্থার—কী পরিহাসের কথা!
প্রতি বছরই রমজান আসলে ‘সিন্ডিকেট’ আরো সক্রিয় হয়ে যায়। গত বছরের সঙ্গে এই বছরের ভোগ্যপণ্যের পার্থক্য বলছে, গত বছর রমজানে ভোজ্য তেলের দাম ছিল ১৫৪ টাকা, এবার সেটা ১৯০ টাকা। ছোলার কেজি ছিল ৭০ টাকা, এবার সেটা ৯৫ টাকা। গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৫০ টাকা, এবার সেটা ৮০০ টাকা। চিনির দাম ছিল ৮০ টাকা, এবার সেটা ১২০ টাকা। খোলা আটার দাম ছিল ৩৫ টাকা, এবার সেটা ৬০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৫০ টাকা, এবার সেটা ৩০০ টাকা। এভাবে সবকিছুরই দাম এ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দু-তিন মাস আগেও যেসব পণ্যের দাম ছিল হাতের নাগালে এখন তা দ্বিগুণ হয়ে নাগালের বাইরে—কী সাংঘাতিক বিষয়!
মানুষ কতটা নোংরা হতে পারে তা এই রমজান মাস এলেই উপলব্ধি করা যায়। আরো সহজ করে বলতে গেলে, আমাদের ব্যবসায়ীরা রোজাও রাখেন, ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে মানুষের ভোগান্তিও বাড়িয়ে তোলেন—কী অদ্ভুত সমাজে আমাদের বাস! কিন্তু এভাবে তো চলতে পারে না। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের মানুষ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জিনিসপত্রের দাম এমনিতেই বেশ বেড়ে গেছে। এই বাস্তবতা কারো অজানা নয়। কিন্তু আমাদের ব্যবসায়ীরা এসব জেনেও না জানার ভান করেন! মানুষের জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়ছে—এ সত্য জানার পরও কেন তারা অমানবিকভাবে পণ্যের বাজারকে অস্থির করে তোলেন? এর শেষ কোথায়? শুধু রমজান মাসেই নয়, সারা বছর জনগণ যেন নায্য দামে নিত্যপণ্য কিনতে পারে—এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাজার মনিটরিং বাড়াতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের নজরদারিতে রাখতে হবে, দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সর্বোপরি, দেশে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন হয়ে মানুষের পিঠে ক্রমাগত চাবুক মারতেই থাকবে—এটা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। এর একটা চূড়ান্ত বিহিত হওয়া দরকার।