বরিশাল থেকে লঞ্চে এসেছেন নুরুল আমিন মিয়া। লঞ্চ থেকে হাসিমুখে নেমেছেন তিনি। দ্রুত ছুটে যাচ্ছিলেন জনসভার মঞ্চের দিকে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে প্রশ্ন করেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কি আইয়া পড়ছে? প্রধানমন্ত্রী এখনো আসেনি শুনে স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, তারে দেখতে মুই আইজি।
মোগো শেখের বেটি কাম বা কী করছে অনেক। দেখাইয়া দিতে। মোগো হেরপিন্নে আর ঘাড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বইয়া থাকতে হইবে না।
মাদারীপুরের শিবচরের কাঠালবাড়ি ফেরি ঘাটে নুরুল মিয়ার মতো লাখো মানুষ জড়ো হয়েছেন।
বাঙালির গর্বের প্রতীক পদ্মা সেতুর উদ্বোধন সকাল ১১টায় মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে। পরে এই ফেরিঘাটে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভোর থেকেই দেশের দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসতে শুরু করেছেন এখানে। রোদের তাপদাহের পর ১০টার দিকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে জনসতে শামিল হচ্ছেন সবাই। জনতার ঢল বেড়েই চলছে।
সকাল ৯টা ২১ মিনিটে ধর্মীয় গ্রন্থের পাঠের মাধ্যমে শুরু হয় জনসভার কর্মসূচি। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আ. সোবহান গোলাপের সঞ্চালনায় সবার শুরুতে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। আসন গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রীয় অতিথি ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। প্রধানমন্ত্রী আসার আগে অন্য নেতারা বক্তব্য রাখবেন।
জড়ো হওয়া মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী বাস ও লঞ্চযোগে জনসভাস্থলে আসছেন তারা। জনসভাস্থলের পায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাস থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে আসা শত শত বাস থেকে নেমে হেঁটে সবাই সভাস্থলের আসছেন।
ভোরে বাসে এসে পৌঁছান বাগেরহাটের মোল্লারহাটের লাভলু শেখ। তিনি বলেন, রাত ১০টায় আমরা পায় ২০ হাজার মানুষ একসঙ্গে রওনা দিই। এখানে এসে মন জুড়িয়ে গেছে। আজ আমাদের একটা কষ্ট শেষ হওয়ার দিন। ‘
পটুয়াখালী থেকে আসা নজরুল ইসলাম বলেন, ইতিহাস রচিত হচ্ছে আজ। এখানে ইতিহাসের সাক্ষী হতে এসেছি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মিছিল নিয়ে বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়ে জনসভায় ঢুকছেন অনেকে। লঞ্চ ও ট্রলার থেকে নেমে জড়ো হচ্ছেন অনেকে। একের পর এক যাত্রী বোঝাই লঞ্চ এসে থামছে জনসভাস্থলের পাশে অস্থায়ী পল্টুনে। পদ্মা সেতুর আদলে মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি রয়েছে।
জনসভাস্থলে কয়েকটি অস্থায়ী হাসপাতাল, সাড়ে পাঁচ শতাধিক শৌচাগার স্থাপন করা হয়েছে। সুপেয় পানির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে অগ্নি নির্বাপণী ব্যবস্থা। ওয়াচ টাওয়ার থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে পোস্টার, ব্যানার আর বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, হাটবাজার আর অলিগলি। বিভিন্ন সড়কের ডিভাইডার, জনসভাস্থলসহ দুই পাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাতে আলোকসজ্জা করা রাতে। তাঁর আগমন ঘিরে মাদারীপুরবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। এ জনসভায় ১০ লাখ মানুষের জমায়েত করার পরিকল্পনা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।