‘আমাগো বহুদিনের আশা ছিল পদ্মা সেতু হইব। এই সেতু হইল, আমাগো আর কষ্ট থাকব না। অসুস্থ হইলে দ্রুত ঢাকা যাইতে পারমু। আইজ পদ্মা সেতু উদ্বোধন হইল।
বিজ্ঞাপন
এত দিন পর আমাগো স্বপ্ন সত্যি হইল। ’
কথাগুলো বলছিলেন কৃষক রহিম জমাদ্দার (৬০)। তিনি মাদারীপুরের খোয়াজপুর এলাকা থেকে বাংলাবাজার ঘাটে এসেছেন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শুনতে।
গতকাল শনিবার খুব ভোরেই বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বাংলাবাজার ফেরিঘাট এলাকায় আসতে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। একসময় তা রূপ নেয় জনসমুদ্রে। দুপুর আড়াইটার দিকে জনসভা শেষ হলে সবাই ফিরতে থাকে নিজ নিজ ঠিকানায়।
শরীয়তপুর থেকে জনসভায় আসা পিকআপ ভ্যানের চালক মো. হেলাল সরদার বলেন, ‘আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মালামাল নিয়া ঘাটে অপেক্ষা করতাম ফেরির জন্য। এখন আর সেই কষ্ট নাই। আমাগো দুর্ভোগে পড়তে হবে না। এই সেতু আমাগো জন্য আশীর্বাদ। ’
মাদারীপুরের শিবচর বাহাদুরপুর এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল রশীদ আকন (৭৬) আসেন প্রধানমন্ত্রীর জনসভায়। তিনি বলেন, ‘একাত্তর সালে স্বাধীনতা ঘোষণার সময় যে আনন্দ পেয়েছি, আজ পদ্মা সেতু উদ্বোধনে ঠিক সেই দিনের মতো আনন্দ পেয়েছি। আমরা আজ সত্যিই খুব খুশি। ’
জনসভায় নানা জন এসেছে নানা রূপে। সেতু উদ্বোধনের আনন্দে কেউ এসেছে ১২ হাত লম্বা নৌকা বানিয়ে ফুলে ফুলে সাজিয়ে, কেউ এসেছে মাথার চুল কেটে নৌকার আকৃতি বানিয়ে, কেউবা বাঘ সেজে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের ভোগান্তির সমাপ্তি ঘটায় মানুষ যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছে।
ভৈরব থেকে জনসভায় এসেছেন সত্তরোর্ধ্ব শফিকুল ইসলাম। আট বছরের নাতি রবিন তাঁর সঙ্গী। দাদা-নাতি দুজনেরই মাথার চুল কেটে নৌকার মতো করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু শুধু দক্ষিণবঙ্গকে নয়, সারা দেশের অর্থনীতির মুক্তির সেতু। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া এই সেতু কারো পক্ষে করা সম্ভব ছিল না। ’
শাহাদাত হোসেন ঢাকা থেকে এসেছেন রয়েল বেঙ্গল টাইগার সেজে। সেতু উদ্বোধনের আনন্দে অংশীদার হতে পেরে গর্বে ভরে উঠেছে তাঁর বুক। শাহাদাত বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের দেশকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে বিশ্ব দরবারে। উদ্বোধন উৎসবে যোগ দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে। ’
খুলনা থেকে ফুলে ফুলে নৌকা সাজিয়ে জনসভাস্থলে এসেছেন দেলোয়ার হোসেন। সঙ্গে এনেছেন সাত বছরের কন্যা মিথিলাকে। দেলোয়ার বলেন, ‘এই সেতু হওয়ায় ঢাকার সঙ্গে আমাদের দূরত্ব অনেক কমে গেল। ঘাটে ঘাটে ভোগান্তির দিন শেষ হলো। ’
পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখতে এসেছিলেন আলীবর্দী (৩০)। তাঁর বাড়ি ঝিনাইদহে। তবে আর দশজনের মতো করে নয়, তিনি এসেছিলেন একেবারেই ভিন্ন সাজে। এই সাজে মানুষের নজর কাড়েন আলীবর্দী। রং-তুলির আঁচড়ে পুরো শরীর রাঙিয়েছেন তিনি। তাতে ফুটে উঠেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পদ্মা সেতুর ছবি।
আলীবর্দী তাঁর এই ভিন্ন সাজ নিয়ে বলেন, ‘আমরা দক্ষিণবঙ্গের মানুষ রাজধানী থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। রাজধানীতে যেতে ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুর্ভোগের শিকার হয়েছি। এই সেতু আমাদের অহংকার, এটা আমাদের আবেগ। ’