ঘরের মাটিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচের চতুর্থ দিনে গতকাল ৭ উইকেটে জয় পেয়েছেন টাইগাররা। এ ম্যাচে টাইগারদের হয়ে ব্যাট হাতে মুশফিকুর রহিম খেলেছেন একটি সেঞ্চুরি এবং একটি অর্ধশত রানের ইনিংস ও স্পিনার তাইজুল ইসলাম বল হাতে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯ উইকেট তুলে নিয়ে দলকে জেতাতে সহায়তা করেছেন। এছাড়া দলের সবাই কম বেশি নিজেদের দিক থেকে সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছেন। তৃতীয় দিনে আইরিশরা ঘুরে না দাঁড়ালে সেইদিনই টাইগাররা দাপট দেখিয়ে জয় নিয়ে ম্যাচ শেষ করে দিতে পারতো। তবে ম্যাচ শেষে আলোচনায় বাংলাদেশের জয় নয়, রয়েছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। আর থাকাটা একদমই স্বাভাবিক।
গত মাসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শেষেই আলোচনা উঠেছিল সাকিব আল হাসান এবং লিটন দাসকে হয়তো দেখা যাবে না আইরিশদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে। কারণ তারা দুই জনই খেলতে যাওয়ার কথা ছিল আইপিএলে। অনেক দিন এমন আলোচনা চলার পর শেষ অবদি দলের সঙ্গে টেস্ট খেলেন। বোর্ডের কাছে টেস্ট না খেলার আবেদন করেও সেখান থেকে সাড়া পায়নি তাড়া। তবে টেস্ট ম্যাচে মাঠে নামার আগের দিন রীতিমতো বোমা ফাটানো কাণ্ড ঘটিয়ে বসে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। নিজেকে সরিয়ে নেন আইপিএল থেকে। সে সময় কারণ হিসেবে কিছুই জানাননি। বিষয়টি সেখানেই শেষ নয় এরপর আইরিশদের বিপক্ষে তাকে প্রথম ৬৫ ওভারেও দেখা যায়নি বল নিয়ে হাত ঘোরাতে। শুধু তাই নয় আইরিশদের বিপক্ষে দুই ইনিংস মিলিয়ে তিনি বল করেছেন মাত্র ১৬ ওভার। এর মধ্যে প্রথম ইনিংসে তিন ওভার ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩ ওভার। আর তার এই কর্মকাণ্ড সকলেরই নজরে আসে।
অবশেষে গতকাল ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে সবকিছুর খোলাসা করেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এ সময় জানান, তার আইপিএল না যাওয়ার কারণও। শুক্রবার নিজের বোলিংয়ের প্রসঙ্গে সাকিব বলেন, ‘কোনো ব্যাখ্যা নেই। বোলিং কাউকে করতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। আপনার কাছে পাঁচ-ছয় রকমের অস্ত্র থাকলে সব অস্ত্র ব্যবহার করার দরকার নেই তো সবসময়।
তখন পালটা প্রশ্ন করে বসেন সাকিব, এটার মানে কী আমি ছাড়া বাংলাদেশ দলের বোলিং চলে না? এরপর বলেন, ‘আমাদের যথেষ্ট বোলার আছে ২০ উইকেট নেওয়ার মতো, আমার তাদের প্রতি বিশ্বাস আছে। সেটা ওরা করে দেখিয়েছে। বিশেষত এমন একটা জায়গাতে খেলা হয়েছে এ ধরনের পিচে আমরা খুব বেশি খেলি না। প্রথম তিন দিন খুবই ভালো উইকেট ছিল আমি বলবো, মিরপুরে সাধারণত তিন দিন এত ভালো উইকেট থাকে না। এমনকি আজকেও ভালো উইকেট ছিল।
অধিনায়ক আরো বলেন, ‘আপনার যদি ২০ উইকেট নিতে হয়, বোলিং অপশনটা বেশি নিতে হবে। এটার বিকল্প আসলে নেই। কম বোলিং অপশন তখনই থাকে যখন আপনি রক্ষণাত্মক মানসিকতায় থাকেন। ড্র করার চিন্তা বা কোনো রকম ব্যাটিংটা ভালো করার চিন্তা থাকে। যখন আপনি জিততে চাইবেন পাঁচ বোলার, ছয় বোলারের অপশন নিয়ে খেলবেন। বড় বড় দলগুলো এরকম অবস্থাতে আছে। বিশেষত আপনি যদি ইংল্যান্ড-ভারতে দেখেন, ওদের পাঁচ-ছয় জন মেইন বোলার; ছয় জন ব্যাটার নিয়ে ওরা খেলে।
এ সময় চলতি বছর টাইগারদের ভালো সময় যাবে উল্লেখ করে সাকিব বলেন, ‘আমি তো আগেই বলছিলাম ২০২৩ সাল আমাদের খুব ভালো যাবে। যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ বছর। বিশ্বকাপ আছে, এশিয়া কাপ আছে। অবশ্যই চাইবো পরের ছয় মাস যেন ভালোভাবে খেলতে পারি। প্রথম ছয় মাসের চার মাস খুব ভালো গেছে। অর্ধেক বছর আমরা ভালো করেছি, আশা করি। যেহেতু আমরা বেশির ভাগ ম্যাচ ওয়ানডে খেলবো…আমরা মনে করি এটা এমন এক ফরম্যাট যেটায় আমরা মনে করি ভালো দল।’
সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে সাকিব খোলাসা করেন নিজেকে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ থেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও। এ প্রসঙ্গে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার বলেন, ‘অবশ্যই ভালো একটা সুযোগ ছিল। যেহেতু বিশ্বকাপের বছর (ভারতে খেলা) যেতে পারলে খুব ভালো হতো। কিন্তু ফ্যামিলি ইমার্জেন্সি তো ফ্যামেলি ইমার্জেন্সি।’ এদিকে এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের হয়ে একটি ম্যাচ খেলেছেন সাকিব। আইপিএলে না যাওয়ার দলটির হয়ে বাকি ম্যাচগুলোতেও খেলবেন তিনি, এমনই গুঞ্জন ছিল। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন সাকিবকে জিজ্ঞেস করা হলে বিষয়টি ধোঁয়াশায় রেখে তিনি জাবাব দেন, ‘সেটা সময়ই বলে দিবে, দেখি!