বিশ্ব এখন একটি গ্লোবাল ভিলেজ বা বৈশ্বিক গ্রাম। তাই আমাদের এই শান্তিময় পৃথিবীতে যখন অশান্তির অনল লাগে, তখনই দেখা দেয় ছন্দপতন। তার নেতিবাচক প্রভাব দ্রুত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেমনই এক অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে দেশে দেশে। পৃথিবীর সব সচেতন শান্তিপ্রিয় মানুষই আজ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এই যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন দেশে দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো পড়েছে বিপাকে। সেই সব দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ আছে খুবই চাপের মুখে। অথচ ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। এই যুদ্ধের ভবিষ্যৎ কী? এ নিয়ে কি বিশ্বযুদ্ধ বাধবে, নাকি শান্তিনিকেতনে ফিরে যাবে আমাদের মাটির পৃথিবী? সর্বত্র এখন একই প্রশ্ন, একই জিজ্ঞাসা।
ন্যাটোর দিকে ঝুঁকে পড়া ইউক্রেনের দাবার ঘুঁটি সাজাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, পোল্যান্ডসহ ইউরোপের প্রভাবশালী দেশগুলো। তারা বলছে, পুতিন, ইউনেসকো, তোমরা যুদ্ধাপরাধী। অন্যদিকে পুতিনের রাশিয়া নিষেধাজ্ঞার বলয় থেকে বেরোতে চীনকে কাছে টানছে। রুবল নিষিদ্ধ। তাই ইয়েনে ভর করে বিশ্ববাণিজ্য চলমান রেখেছে। বাংলাদেশ ও ভারত যখন ভয় পেয়ে রূপপুর পারমাণবিকের মালপত্র আসা রাশিয়ান জাহাজ বন্দরে ভিড়তে নিষেধ করেছে। তখন চীন রাশিয়ার বিপদের বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। মস্কোতে হয়ে গেল শি জিনপিং-পুতিন বন্ধুত্বের বৈঠক। শি জিনপিংয়ের বারো দফা শান্তি প্রস্তাবে শান্তির আশা দেখছেন বিশ্বের কোনো কোনো শান্তিপ্রিয় মানুষ।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ভালো ব্যালে নৃত্য জানেন, যা তিনি বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপকে নিয়ে নেচে যাচ্ছেন পুতিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। যদিও যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের দিকে তাকালে কান্না পায়। তিনি একসময় অভিনয় করেছেন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে। তার বিখ্যাত একটি সিরিজ নাটকের নাম ‘দ্য সার্ভেন্ট অব দ্য পিপল’। এই নাটকে অভিনয় করেই তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এভাবেই তিনি ইউক্রেনবাসীর মন জয় করে সে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। নাটকের প্রেসিডেন্ট থেকে বাস্তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। কিন্তু রাশিয়ার ব্যালে নৃত্য দলের সঙ্গে তিনি বিরুদ্ধাচরণ করে বসেন। এতে পুতিন ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। ন্যাটোর সঙ্গে বন্ধুত্বের অপরাধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন পুতিন। মাইলের পর মাইল সাজোয়া ট্যাংকের বহর ইউক্রেনে ঢুকে পড়ে হাইপারসনিক মিসাইল ছুড়তে থাকে। ধ্বংসপুরীতে পরিণত হয় ইউক্রেন। শীতার্ত বরফাচ্ছন্ন ইউক্রেন বিদ্যুদিবচ্ছিন্ন হয়ে বরফে ঢেকে যায়। ইউক্রেনবাসী বাঁচার জন্য ইউরোপ জুড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, ছুটে বেড়াচ্ছে কর্মসংস্থানের জন্য। নিজেদের সমর্পণ করছে। কিছুদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পোল্যান্ড হয়ে ইউক্রেন সফর করেছেন। এদিকে রাশিয়া যে চারটি অঞ্চল দখল করেছে, তার দখলদারিত্ব প্রমাণ করতে মারিয়োপল সফর করলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
জেলেনেস্কি, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ বলছে, লুকাশেংকো পুতিন যুদ্ধপরাধী। অন্যদিকে পুতিন বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করছেন। তাহলে কি বিশ্ব পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে অগ্রসর হচ্ছে? আমেরিকান এয়ারফোর্সের গুলি খেয়ে আকার পরিবর্তন করে আটলান্টিকে পড়ে চীনা বেলুনকে যেতে হয়েছে এফবিআইয়ের গবেষণাগারে। যা হিরোশিমা, নাগাসাকির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আবার আমেরিকার ড্রোন যখন রাশিয়ান এয়ারফোর্সের গুলিতে ছিন্নভিন্ন হয়ে কৃষ্ণসাগরে পড়ছে, তখন লাতিনপ্রিয় বিশ্ববাসী আেক উঠছে। এমন ছোটখাটো ঘটনা থেকেই যে কোনো সময় বড় কিছু যে ঘটে যাবে না, তা নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যায় না। ছোট স্ফুলিঙ্গও অনেক সময় বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে।
ই সমান এমসি স্কয়ার (ঊ = সপ২) । অর্থাৎ এটম বোমার জনক আলবার্ট আইনস্টাইন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে এই সমীকরণের কথা বলেছিলেন। তারপর যুদ্ধ করার জন্য শুধু ছুরি, কাঁচি অবশিষ্ট থাকবে আর সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। অতএব, তার আগে বলতে চাই, এই যুদ্ধ বন্ধ করুন। ক্ষুধামুক্ত শান্তির পৃথিবী গড়ে তুলুন।