বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী দেশে কর্মক্ষম ২৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষ বেকার। শিক্ষিতদের মধ্যে বেকার রয়েছেন ৪৭ শতাংশ। রাষ্ট্রীয়ভাবে কর্মসংস্থান উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন না করার দরুন বৃদ্ধি পাচ্ছে বেকারত্ব। এর পেছনে যেমন দায়বদ্ধতা আছে সরকারের, তেমনি দায় এড়াতে পারেন না শিক্ষার্থীরাও। আমরা যদি জাতীয় ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দিকে লক্ষ করি, তাহলে দেখতে পাবো, অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর অপ্রয়োজনীয় কাজে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। এমনটা নয় যে, বন্ধুদের নিয়ে ও ঘোরাঘুরি, আড্ডা দেওয়া জীবনের অপ্রয়োজনীয় অংশ, কিন্তু কেন এটা মাত্রাতিরিক্ত হবে? কেন আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বছরগুলো হেলায় কাটাব? যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় হলো পড়াশোনা, গবেষণার জায়গা।
কিছু শিক্ষার্থী এমন মানসিকতা নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করেন যে, শিক্ষাজীবনের ১২টি বছর তো প্রচুর পড়াশোনা করলাম, এবার না হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে একটু বিশ্রাম নিই, অনেক তো হলো, আর কত? বস্তুত, এসব শিক্ষার্থী জীবনের রূঢ় বাস্তবতা বুঝতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের তৃতীয়-চতুর্থ বর্ষে এসে, যখন দেখেন, হেলায় প্রচুর সময় ব্যয় করার দরুন অনার্স ফাইনাল পরীক্ষায় ভালো সিজিপিএ ওঠানো কঠিন হয়ে পড়ছে! যখন দেখেন, পিতামাতা বারংবার বলছেন, ‘অনেক তো হলো, বাবা—এবার কিছু একটা করো, আর পারছি না টাকা পাঠাতে!’ যখন দেখেন, ডিপার্টমেন্টের মোস্ট সিনিয়র ভাই কয়েক বছর আগে মাস্টার্স শেষ করেও হন্নে হয়ে চাকরি খুঁজছেন এখনো! যখন দেখেন, বেকার হওয়ার কারণে প্রেয়সী পিতামাতার চাপে বাধ্য হয়ে প্রতিষ্ঠিত কোনো ছেলের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে। বাস্তবতা হলো, জীবনটা নিজের কাছে বড় বোঝা মনে হয় এ সময়! অনেক শিক্ষার্থী, এই চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার মতো জঘন্য কাজকে বেঁচে নিতেও দ্বিধাবোধ করেন না! মাঝখান থেকে, তিনি নিজে তো শেষ হন-ই, একই সঙ্গে পিতামাতার স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধূলিসাৎ করে দিয়ে যান।
টিআইবির তথ্য মতে, ভারত, চীন ও শ্রীলঙ্কাসহ ৪৪টি দেশের কমপক্ষে আড়াই লাখ নাগরিক বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পকারখানা, সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এবং আন্তর্জাতিক এনজিওর মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন—কেউ সিইও, কেউ-বা টেকনিশিয়ান হিসেবে। বছরে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশ থেকে! নিজেদের অদক্ষতার জন্য এসব পদ বিদেশিদের হাতে সমর্পণ করতে হচ্ছে। অথচ আজ যদি আমরা দক্ষ হতাম, তাহলে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পদগুলো আমাদের দখলে থাকত। তাই আসুন, শিক্ষাজীবনের বছরগুলো পরিকল্পনামাফিক ব্যয় করি। একাডেমিক পড়াশোনার বাইরেও পড়াশোনার পরিসর বাড়াই। প্রবাদ আছে, ‘সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়’। সময় তার আপন গতিতে চলমান। কারো জন্য অপেক্ষা করা সময়ের নীতি নয়। একজন প্রখ্যাত দার্শনিক বলেছেন, ‘পৃথিবীতে আমি কিছু জাতি দেখেছি, যারা খুবই সমৃদ্ধশালী। কারণ হচ্ছে, তারা খুব ভেবেচিন্তে তাদের সময় ব্যয় করেন, যেমন আমরা টাকা-পয়সা ব্যয় করি।’ সুতরাং, খুব ভালোভাবে মাথায় রাখতে হবে দার্শনিক লালন সাঁইয়ের বলে যাওয়া কথা—‘সময় গেলে সাধন হবে না।’