চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। এটি লক্ষ্যমাত্রার ৫৩ শতাংশ। অর্থাৎ বাকি চার মাসে বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় করতে হবে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরেরর লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। সংস্থাটি গত আট মাসে রাজস্ব আদায় করেছে ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এনবিআরকে গড়ে প্রতি মাসে ৪৩ হাজার ৫০০ কোট টাকা সংগ্রহ করতে হবে।
অবশ্য এনিবার এই আট মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি রাজস্ব আয় করেছে। তবে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে। অন্যান্য চলতি অর্থবছর সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা কমানো হলেও বেশি রাজস্ব প্রাপ্তির তাগিদ থেকে এবার এনবিআরের লক্ষ্য কমানো হচ্ছে না। ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে বাকি চার মাসে এনবিআরকে ১ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে হবে।
গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারের আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার-সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের মোট রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সংশোধিত বাজেট এনবিআরের অংশের লক্ষ্যমাত্রাও একই থাকছে। রাজস্ব সংগ্রহ না কমলেও সরকারের মোট ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা কমানো হচ্ছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী পণ্যমূল্য বাড়তে থাকায় ডলারে টান পড়ায় সরকার গত বছরের এপ্রিল থেকে আমদানি নিরুত্সাহিত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়। এর ফলে আমদানি কমেছে, যার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, আমদানি কমায় রাজস্ব আদায় বাড়ানো চ্যালেঞ্জিং। এর পরেও অর্থবছরের বাকি সময়ে লক্ষ্যমাত্রার পুরোটা অর্জন সম্ভব না হলেও কাছাকাছি থাকবে। তাছাড়া অর্থবছরের শেষ দিকে রাজস্ব সাধারণত বেশি আদায় হয়।
এদিকে আগামী অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার। আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার-সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় আগামী অর্থবছরের বাজেটের একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। যা আগামী জুনে সংসদে উপস্থাপন করা হবে। এর জন্য স্বাভাবিক ভাবে এনবিআরকে বাড়তি রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যের চেয়ে অন্তত ৬৭ হাজার কোটি টাকা বা ১৫ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে পরের অর্থবছর। মোট রাজস্ব আদায়ের মধ্যে এনবিআরের জন্য ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, এনবিআর বহির্ভূত খাত হতে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে আরো ৫০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে।