প্রথম ধাপে ডিজিটাল সনদ ও পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) পাচ্ছেন ১৩ জেলার ৩৭ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা। এরপর আগামী দু’মাসের মধ্যে ভাতাপ্রাপ্ত দুই লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধার সবাইকেই এই ডিজিটাল সনদ ও আইডি কার্ড দেওয়া হবে।
রোববার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ ঘোষণা দেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ডিজিটাল সনদ ও আইডি কার্ড প্রদান, চিকিৎসা সেবা প্রদান, সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত বুকলেটের মোড়ক উন্মোচন এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সময় মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রঞ্জিত কুমার দাসসহ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বহুল প্রত্যাশিত ডিজিটাল সনদ এবং আইডি কার্ড বিতরণ কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি। প্রথম পর্যায় ১৩টি জেলার ৩৭ হাজার ৯১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ডিজিটাল সনদ ও আইডি কার্ড বিতরণ করা হবে। জেলাগুলো হচ্ছে- গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নড়াইল এবং গাজীপুর।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাকি জেলাগুলোর প্রিন্টিং কাজও দ্রুতগতিতে চলছে। আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে বাকি সবার কাছে ডিজিটাল সনদ ও আইডি কার্ড পৌঁছানো হবে। তবে মৃত মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের কাছে শুধু সনদ পৌঁছে দেওয়া হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সনদ ও আইডি কার্ড উপজেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেখান থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংগ্রহ করতে হবে।’সনদ ও আইডি কার্ডে ১৪ ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘টাকা জাল করা যতটা কঠিন, এর চেয়ে বেশি কঠিন হবে সনদ ও আইডি কার্ড জাল করা।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যেসব সেবা প্রদান করছে তা নিয়ে এ মন্ত্রণালয় বুকলেট প্রকাশ করেছে, যা আপনাদের কাছে দেওয়া আছে। এতে সেবাপ্রপ্তি যেমন সহজ হবে, জনগণও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা সম্পর্কে জানতে পারবে।’
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় হাসপাতাল এবং ঢাকার ২২ বিশেষায়িত হাসপাতালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য এরইমধ্যে ১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া আছে। হাসপাতালগুলো অতিরিক্তি অর্থ চাহিদা দিলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা নীতিমালা অনুযায়ী সব ধরনের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।’বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কোনো কিছু করার নেই। শুধুমাত্র ভোটার তালিকা তৈরি করে দেয়াই মন্ত্রণালয়ের কাজ। ভোটার তালিকা পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আদালতের যে বিধি-নিষেধ ছিল, সে বিষয়েও সুরাহা হয়েছে। এখন নির্বাচন অনুষ্ঠানে আর কোন বাধা নেই।
মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ভুল থাকলে নিজ নিজ উপজেলায় অভিযোগ দেয়ার বিষয়ে উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী বলেন, নিজ নিজ উপজেলায় দেয়া অভিযোগের শুনানির ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ভুল থাকলে তা বাতিল করা হবে। ইতোমধ্যে প্রায় ১১ হাজার নাম বাতিল করা হয়েছে।এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এক বছর আগে মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। কেউ অভিযোগ না করলে মন্ত্রণালয়ের কিছু করার থাকে না। তবে উপজেলা যে সব সময় সঠিক কাজ করে তা বলা যাবে না। তাই কেউ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কাছে ন্যায় বিচার না পেলে জামুকায় আপিল করতে পারবেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বীরঙ্গনা এবং প্রবাসীরা ছাড়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেটের জন্য দেশে থাকা আর কেউ আবেদন করতে পারবেন না। কারণ যে অনলাইনে আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়ে থাকে, তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
পরে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারবর্গকে দেয়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার তালিকা সম্বলিত বুকলেট সকলের মধ্যে বিতরণ করা হয়।