স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও বাংলাদেশকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। চিঠিতে জো বাইডেন লিখেছেন, সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে বাংলাদেশ যে প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছে, তার জন্য আমরা অভিনন্দন জানাই। বিশেষ করে শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের অবদান সবচেয়ে বেশি। গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান সহ-আয়োজনে বাংলাদেশকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। কারণ, এই উদ্যোগ বৈশ্বিক মহামারি দমনে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। আরও লিখেছেন, সহমর্মিতা ও উদারতা চর্চায় বিশ্বে একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন আপনি। তিনি চিঠি শেষ করেন জয় বাংলা বলে। ভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট আমাদের জাতীয় স্লোগানকে অফিশিয়ালি সম্মান জানাচ্ছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্লোগানকে সম্মানিত করে বাংলাদেশকেই বরং সম্মানিত করেছে। অথচ আমাদের দেশে কিছু রাজনৈতিক দল রয়েছে, যারা জয় বাংলাকে স্লোগান হিসেবে স্বীকৃতি দিতে দ্বিধাবোধ করে। প্রকৃত অর্থে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি তাদের অনুরাগ নেই, তারা সর্বদা কূটকৌশলের মন্ত্রে রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। অবশ্য জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তারাও ষড়যন্ত্রের ক্রীড়নকের তকমা থেকে কখনোই মুক্ত হতে পারেনি। তবে বাংলাদেশের জনগণ কিন্তু এককাট্টা হয়ে দেশের তরে আত্মনিয়োগ করে দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রেখে বিশ্বব্রহ্মান্ডে বাংলাদেশকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করছে।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গর্ব করার মতো অনেক কারণ রয়েছে। দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি, ক্রমবর্ধমান সুশিক্ষিত জনশক্তি এবং অগ্রসরমান তরুণ জনসংখ্যা নিয়ে দ্রুত আঞ্চলিক নেতা হয়ে উঠছে দেশটি। তিনি বলেন, গণহত্যার মুখে পড়ে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবতার প্রতি তার অঙ্গীকার তুলে ধরেছে।
প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশ সর্বক্ষেত্রে প্রশংসিত হচ্ছে, এটি কিন্তু কারোর দয়ার দান নয়। কারো সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বলে বাংলাদেশের প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থনের প্রতীক হিসেবে রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশকে গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে বিষয়টি তেমন নয়। বাংলাদেশের প্রতি তাবৎ বিশ্বের সমীহ জাগানো সম্মান ও অর্থবহ গুরুত্ব অর্জনের স্বীকৃতি পেতে বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন নির্দিষ্ট ছকে এগোতে হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতি বজায় রেখে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতৃত্ব প্রদানসহ পলিসি প্রণয়নে ভূমিকা রেখে চলেছে প্রিয় স্বদেশ। শুধু তাই নয়, বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ মোমেন্টে বাংলাদেশ নীরব না থেকে সরব হয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে দায়িত্বশীল ও কর্মক্ষম ভূমিকা রাখছে। তৃণমূল পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে তরুণ শিক্ষিত যুবকেরা উদ্যোক্তা হয়ে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন, যা দেশের প্রবৃদ্ধিতে ব্যাপকভাবে কাজে লাগছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের যেসব দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়তে পারে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বর্তমান পৃথিবীতে বাংলাদেশ পাট উৎপাদনে প্রথম, ইলিশ উৎপাদনে প্রথম, ধান উৎপাদনে তৃতীয়। এসব বিষয় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধিতে দারুণ ভূমিকা রাখছে, নিজস্ব উৎপাদন বৃদ্ধিতে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে গুরুত্ব প্রদান করছে। পুরো পৃথিবী যেভাবে সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে, সেই বিবেচনায় অন্যের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে এনে নিজস্ব সম্পদে নির্ভর করে সক্ষমতা বৃদ্ধিই হচ্ছে আধুনিক অর্থনীতির অন্যতম সমীকরণ। বিশেষত্ব হলো :অর্থকরী ফসলে ঝুঁকছে কৃষক এবং কৃষিতে বিনিয়োগ তথা কৃষি উদ্যোক্তা হচ্ছেন শিক্ষিত তরুণেরা। সবকিছুর সংমিশ্রণে মূলত বাংলাদেশের দেশজ উত্পাদন বাড়ছে এবং পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে দেশীয় অর্থনীতির ওপর নির্ভর করেই ভবিষ্যৎ কল্যাণকর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ক্রমান্বয়ে সাহসী হয়ে উঠেছে।
একসময় যারা বাংলাদেশকে নিয়ে কটাক্ষ করেছে, তারাই আজ বাংলাদেশকে আঞ্চলিক নেতার স্বীকৃতি দিয়ে সম্মানিত করছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করেছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে—এই সবকিছুর সমন্বয়েই বিশ্ববাসী বুঝতে সক্ষম হয়েছে এই বাংলাদেশ অদম্য, এই বাংলাদেশকে কোনোভাবেই দাবিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। শত প্রতিকূলতা, চক্ষুশূল, মিথ্যা প্রোপাগান্ডা প্রভূত সমস্যাকে অবদমিত করে বাংলাদেশ করোনা মোকাবিলায় সফলতা দেখিয়েছে, প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে, জাতীয় অর্থনীতি প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ হচ্ছে। জলবায়ুর সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব প্রদান করছে, বৈশ্বিক বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশের মর্যাদার সুমহান আসনে সমাসীন করে যাচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিতে বাংলাদেশ ইত্যবসরে শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। দুটি দেশ করোনার সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শত প্রতিকূলতার মধ্যেও ধরে রাখতে পেরেছে। দুর্দশায় পতিত রাষ্ট্রকে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে সাহায্য প্রদান করেছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভূমিকা সর্বত্র প্রশংসিত। বাংলাদেশের অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, রাজনীতির চিরায়ত পথপরিক্রমা বিশ্ব গণমাধ্যমে ইতিবাচকভাবে প্রচারিত হচ্ছে। আবার কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই একটি পক্ষ যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি, তারা বরাবরের মতোই দেশবিরোধী প্রচারণায় ব্যস্ত। এ ধরনের নেতিবাচক প্রচারণাও বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত শক্ত হাতে দমনে সক্ষম হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরে প্রযুক্তিনির্ভর প্রজন্ম বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ইতিবাচক ভূমিকা রেখে চলেছে। কাজেই বাংলাদেশ সগৌরবে একটি থিংকট্যাংক হিসেবে নিজের পরিচয় তৈরি করেছে। আইনশৃঙ্খলা মোকাবিলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি মডেল অনেকেই অনুসরণ করছে, বিশেষ করে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার ক্ষেত্রে। বাংলাদেশ কৃষিতে বিপ্লব নিয়ে এসেছে, নতুন উৎপাদনের মডেল দাঁড় করাচ্ছে প্রতিনিয়ত। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন বিশ্ব গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে এবং বিশ্ব নেতৃত্বের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন ফোরামে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন সংগঠনে বাংলাদেশ সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বিশ্বের একটি বড় অংশের জনগণ বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে থাকে। এসব পটভূমিতে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক নেতা হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। কূটনৈতিক দক্ষতায় বাংলাদেশের ঈপ্সিত লক্ষ্যে দেশটি পৌঁছেছে, সে জন্যই দক্ষিণ এশিয়ায় নেতা হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান সুস্পষ্ট। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সুসংহত অবস্থান বিশ্বমোড়লদের নজর কেড়েছে সহজেই।