ঈদুল আজহার বাকি দুই সপ্তাহেরও কম। প্রতিবছরের মতো ঈদকে সামনে রেখে ঢাকায় পশুর হাটের প্রস্তুতি শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় এবার মোট পশুর হাট বসবে ২০টি। এর মধ্যে স্থায়ী দুটি ও ১৮টি অস্থায়ী।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় অস্থায়ী ১০টি হাটেরই ইজারা দেওয়া শেষ হয়েছে। তবে উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় আটটি অস্থায়ী হাটের মধ্যে ইজারার কাজ শেষ হয়েছে পাঁচটির।
এরই মধ্যে স্থায়ী হাটগুলোতে পশু আনতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। হাটগুলোতে চলছে বেচাকেনা শুরুর জোর প্রস্তুতি। ইজারা পাওয়া অস্থায়ী পশুর হাটগুলোও সামনের মাসের প্রথম দিকে শুরুর কথা মাথায় রেখে এগিয়ে নিচ্ছেন হাটের কাজ। এবার বন্যার কারণে বেশি দামে পশু বিক্রি করতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
গতকাল রবিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাজানো হচ্ছে গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট। প্রস্তুত করা হচ্ছে নতুন অস্থায়ী শেডগুলো। বসানো হচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার। বিকাশ ও রকেটের মতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য বুথ তৈরি করা হচ্ছে। বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে তৈরি হচ্ছে ছাউনি। পরিষ্কার করা হচ্ছে হাটের ভেতরের রাস্তা। অপসারণ করা হচ্ছে কাদামাটি। এ বছর উত্তরের একমাত্র স্থায়ী হাট গাবতলীতে আসতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী মান্নান মিয়া বলেন, ‘গাবতলী হাটে প্রায় ৩৫ বছর ধরে গরু এনে বিক্রি করি। এবারও দুটি শেড নিয়েছি, দেড় শ গরুর পাশাপাশি মহিষ ও দুম্বা এনেছি। আশা করছি, কয়েকটি উট আনতে পারব। ’
তবে সপ্তাহখানেক পরে হাট জমে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এবার সিলেট ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বন্যায় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পশুর দাম বেশি থাকতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। ভারতীয় গরুর চোরাচালান দেশে ঢুকলে দেশি ব্যবসায়ীদের ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। গরু ব্যবসায়ী সোলায়মান বলেন, ‘এবার ভালো দামের আশা করছি। কিন্তু ভারতের গরু যদি বেশি আসে বা চোরাচালান ঢুকে, তাহলে দেশি ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ’ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, সিলেট, জামালপুর ও কুড়িগ্রাম থেকে ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন না। এসব এলাকা থেকে দেশি ছোট আকারের গরু আসে রাজধানীর হাটে। এবার এসব পশু না এলে গরুর দাম বেশি হতে পারে।
সন্ধ্যায় লালবাগ রহমতগঞ্জ ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গার পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, মাঠ সংস্কার করা হচ্ছে। প্রস্তুতি চলছে শেড করার। ক্লাবের এক সদস্য ইউসুফ জানান, অস্থায়ী পশুর হাট হওয়ায় শেষের দিকে বেশি জমে। তাই জুলাই মাসের ১ তারিখ চিন্তা করে কিছুটা ধীরে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ১৮টি অস্থায়ী হাট বসানোর দরপত্র আহ্বান করা হয়। ১৫টি হাটের ইজারা চূড়ান্ত হয়েছে। বাকি তিনটির দরপত্র চলমান। আর গাবতলী ও সারুলিয়া হাট দুটি তো স্থায়ী।
যাঁরা পেলেন ইজারা
দক্ষিণে অস্থায়ী ১০টি হাটেরই ইজারা চূড়ান্ত হয়েছে। এসবের মধ্যে উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘ ক্লাব মাঠের হাটটি এ বছরও ইজারা পেয়েছেন এ এস এম এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আব্দুল লতিফ, হাজারীবাগ ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ হাটের ইজারা পেয়েছেন অহিদুর রহমান ওয়াকিব, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসংলগ্ন খালি জায়গার হাটের ইজারা পেয়েছেন মো. মঈন উদ্দিন চিশতী, মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন খালি জায়গা হাটের ইজারা পেয়েছেন মো. আওরঙ্গজেব টিটু, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গা ও কমলাপুর স্টেডিয়ামসংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গার হাটের ইজারা পেয়েছেন খান ট্রেডার্সের মালিক গোলাম কিবরিয়া খান, যাত্রাবাড়ী দনিয়া কলেজসংলগ্ন খালি জায়গার হাটের ইজারা পেয়েছেন গিয়াস উদ্দিন গেসু, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকায় ইজারা পেয়েছেন মো. আনোয়ার হোসেন, লালবাগ রহমতগঞ্জ ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গায় ইজারা পেয়েছেন সোলায়মান সেলিম, শ্যামপুর কদমতলী ট্রাকস্ট্যান্ডসংলগ্ন খালি জায়গায় ইজারা পেয়েছেন মাসুক রহমান এবং আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গার হাটের ইজারা পেয়েছেন নওশের আলী।
উত্তর সিটিতে বসবে আটটি হাট, ইজারা চূড়ান্ত হয়েছে পাঁচটির। উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গার হাটের ইজারা পেয়েছেন মো. নুর হোসেন, ভাটারা (সাইদনগর) পশুর হাটের ইজারা পেয়েছেন মো. সুরুজ্জামান, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা হাটের ইজারা পেয়েছেন তৌফিকুর রহমান, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং আফতাবনগর ব্লক-ই থেকে এইচ পর্যন্ত এলাকার হাটটির ইজারা পেয়েছেন মিজানুর রহমান ধনু এবং মোহাম্মদপুরের বছিলার ৪০ ফুট রাস্তাসংলগ্ন খালি জায়গার হাটের ইজারা পেয়েছে মেসার্স শাহীন ইন্টারন্যাশনাল। এই কম্পানির মালিক মো. আমজাদ হোসেন।
বাকি আছে তিনটির
ডিএনসিসি গতকাল পর্যন্ত তিনটি হাটের ইজারা চূড়ান্ত করতে পারেনি। হাট তিনটি হলো ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৩০০ ফুট সড়কসংলগ্ন খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-৬-এর খালি জায়গা এবং ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাচপুরা ব্যাপারীপাড়ার রহমান নগর আবাসিক প্রকল্প। হাটগুলো তৃতীয় দফায় ইজারা দরপত্র আহ্বান করেও কাজ হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিটি করপোরেশনের (সরকারি) দামের সঙ্গে মিলছে না বলে ইজারা চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না। এই তিন হাটের আবার দরপত্র (টেন্ডার) হবে বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন।
ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, ‘আমাদের পাঁচটি হাটের ইজারা চূড়ান্ত হয়েছে। বাকি তিনটিরও হয়ে যাবে আশা করছি। সব মিলিয়ে অনলাইন ও অফলাইনে এবার রাজধানীবাসী স্বাচ্ছন্দ্যে পশু কিনতে পারবেন। ’