সৃষ্টিলোকের সেই আদিপ্রাণ বৃক্ষ পৃথিবীকে যুগ যুগ ধরে রক্ষা করেছে ধ্বংসের হাত থেকে। গাছ আমাদের পরম বন্ধু। গাছ আমাদের অক্সিজেন সরবরাহ করে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষায়ও বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম; কিন্তু জনসংখ্যার চাপে প্রতিনিয়ত গাছ নিধন হচ্ছে। এর কারণে বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, আবহাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে; বাস্তুসংস্থান ভেঙে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ফলে অসময়ে অনাবৃষ্টি, খরা, অতিবৃষ্টি, প্রচণ্ড দাবদাহ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা দুর্যোগ ঘটে চলেছে।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য যে কোনো দেশের ২৫ শতাংশ ভূমিতে বনজঙ্গল থাকা দরকার। ২০২২ সালের জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও) বনবিষয়ক এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের মোট ভূখণ্ডের সাড়ে ১৩ শতাংশ বনভূমি। জাতীয় বননীতি অনুযায়ী দেশের মোট স্থলভাগের অন্তত ৩৩ শতাংশ গাছ এবং অরণ্যবেষ্টিত রাখতেই হবে, না হলে জলবায়ুর পরিবর্তনের এই ভয়ংকর প্রভাব থেকে এ দেশকে বাঁচানো যাবে না। একটি গাছ কাটলে দুটি গাছ লাগাতে হবে—এমন স্লোগান বাংলাদেশে থাকলেও বাস্তবে তার দেখা মেলে না। প্রকৃতপক্ষে ‘গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান’—কথাগুলো আমরা মুখে বলি; কিন্তু কাজে পরিণত করি না। পরিবেশ বাঁচাতে হলে বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে। গাছের সঠিক পরিচর্যা করতে হবে।
একটি পরিপূর্ণ গাছ বছরে ৪৮ পাউন্ড হারে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে এবং যে পরিমাণ অক্সিজেন প্রদান করে, তাতে অন্তত দুই জন মানুষ নিঃশ্বাস নিতে পারে। অর্থাৎ যে বৃক্ষটি দুই জন মানুষকে জীবিত রাখার দায়িত্ব পালন করছে, আমরা তাদের নির্বিচারে কেটে ফেলছি। মানুষ হত্যার বিচারে যদি মৃত্যুদণ্ড কিংবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে, তাহলে যে গাছ আমাদের বছরের পর বছর স্বার্থহীনভাবে বাঁচিয়ে রাখছে জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন দিয়ে, সেই পরম বন্ধুটির হত্যার বিচার কী হবে?
১৯৪৭ সালে দেশের আয়তনের ২৪ শতাংশ বনভূমি ছিল। ১৯৮০-৮১ সালে তা কমে হয় ১৭ দশমিক ২২ শতাংশ এবং বর্তমানে মাত্র ১৩ শতাংশ বনভূমি রয়েছে। ভবিষ্যতে হয় তো এই বৃক্ষ নিধনের ফলাফল আরো মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। ফলে সংশ্লিষ্ট সবার উচিত বৃক্ষ নিধন নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সেই সঙ্গে জনগণকেও সচেতন হতে হবে। গাছকে ভালোবাসতে হবে। তবেই দেশের সর্বত্র গড়ে উঠবে বৃক্ষ নিধনবিরোধী প্রতিবাদী মনোভাব।