সাহেল্যানথ্রোপাস চাদেন্সিস (Sahelanthropus tchadensis) সেই প্রায় ৬০ লাখ (৬ মিলিয়ন) বছর আগে দুই পায়ে হাঁটার চেষ্টা শুরু করেছিল, শিখে পরিচয় হলো অরোরিন টিউজেনেন্সিসের সঙ্গে। সেই শুরু। কালের বিবর্তনে, আবহাওয়া, পারিপার্শ্বিকতার পরিবর্তন ও অন্য প্রজাতির সঙ্গে মেলামেশার সুযোগে অনেক মানব পূর্বপুরুষ প্রজাতির আবির্ভাব ও তিরোভাব ঘটেছে। এরা এথিওপিকাস, অস্ট্রালোপিথেকাস, প্যারেন্থ্রোপাস শেষে হোমো হ্যাবিলিস, যেখানে বর্তমান মানব আকৃতি স্পষ্ট। হোমো এরগসটারের বুদ্ধি ঐ যাবৎ সকল পূর্বপুরুষের অধিক। আবির্ভূত হলো হোমো ইরেক্টাস, সে প্রায় ১৫ লাখ বছর আগের কথা। মানবের পূর্বপুরুষের আর কোনো গল্প বলা হয়নি।
৬ লাখ বছর আগে বর্তমান মানবের প্রায় সমবুদ্ধির প্রজাতি হোমো হাইডেলবার্গেনসিসের আবির্ভাব ঘটে। মনে করা যেতে পারে যে, হোমো হাইডেলবার্গেনসিস প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হলো নিয়ান্ডারথালদের আগমনে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার বছর আগে। মাত্র ২৮ হাজার বছর আগেও নিয়ান্ডারথালদের অস্তিত্ব ছিল। ২ লাখ বছর আগে হোমো সেপিয়েন্সের আবির্ভাব ঘটে এবং প্রায় ২ লাখ ২ হাজার বছরে নিয়ান্ডারথালদেরকে হোমো সেপিয়েন্স দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করেছে। অন্যান্য মানব-পূর্বপুরুষ বিলীন হওয়ার পেছনে হোমো সেপিয়েন্স কতখানি বা সম্পূর্ণ দায়ী কি না এটাও বিচার্য। জিজ্ঞাস্য, হোমো সেফিয়েন্স নিঃশেষ করবে কে? বর্তমান বিরাজমান পরিস্থিতি ইঙ্গিত করে যে হোমো সেপিয়েন্সের ব্রেনের পরিমাপ ১ হাজার ৩৫০ ঘন সেন্টিমিটার, অতি বৃহৎ। জন্মসংক্রান্ত যে বাধাটি দাঁড়িয়েছিল সেটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সুরাহা করা গেছে। অতএব ব্রেন আরো বাড়বে। হোমো সেফিয়েন্সের অধিক বুদ্ধিমত্তার কোনো প্রজাতির আর্বিভাব কল্পনাতীত। অতএব, হোমো সেফিয়েন্সের ভবিষ্যৎ হোমো সেফিয়েন্সের ওপরই নির্ভর করে।
বিশ্বে আমেরিকা সমরশক্তিতে যে কোনো দেশকে পরাজিত ও কুক্ষিগত করতে পারে। পছন্দনীয় দেশের মানুষকে ভোক্তা এবং শ্রমিক হিসেবে বাঁচিয়ে রেখে অপছন্দনীয় দেশের মানুষকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে নতুন বসতি স্থাপন করতে পারে। এক বিশেষ ধরনের হোমো সেপিয়েন্স, যারা আমেরিকার জোটে থাকবে, পৃথিবীতে থাকবে, হয়তো নতুন নাম ধারণ করে। কল্পনা করা যায় আমেরিকান আর ইউরোপিয়ান জাতিগুলো নতুন নামে টিকে থাকবে। অনেকের ধারণা, রাশিয়া ভেঙে যাওয়ার পরেই ঐ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে ৪-৫ হাজার বছর ধরে চলবে। অন্যথায় যদি বহুজাতিক জোট, রাশিয়ার ইউনিক উইপন দ্বারা আমেরিকাকে ধ্বংস করতে পারে, চায়নার ম্যাজিক সাবমেরিন আমেরিকাকে মোকাবিলা করে, চীন রাশিয়ার সঙ্গে জোট বাঁধে, সেক্ষেত্রে একটা শান্তিচুক্তি হলেও হতে পারে, অন্যথায় রাশিয়া নিউক্লিয়ার অস্ত্র ব্যবহার করতে বাধ্য হবে। হোমো সেপিয়ান্সের অতি বৃহৎ অংশ বিলীন হবে এবং বেঁচে থাকা অংশ বিকলাঙ্গ হবে। এর অর্থ দাঁড়ায় যে, হোমো সেপিয়েন্স নিজেরায় নিজেকে নিশ্চিহ্ন করবে। এ দুটির একটিও কাম্য নয়।
হোমো সেপিয়েন্স বর্তমান অবস্থায় দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করছে, হয়েছে মানব, আশরাফুল মাখলুকাত। যদি নির্বিঘ্নে শান্তিতে আর মাত্র এক সহস্রাধিক বছর হোমো সেপিয়েন্স অতিবাহিত করতে পারে, মানবগোষ্ঠী পৃথিবীতে কাল্পনিক বেহেশত বা স্বর্গের মতো পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে। ঐ উন্নয়ন বা প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজন ‘নির্বিঘ্ন শান্তি’। আজ বিশ্বশান্তি সম্পূর্ণ বিপন্ন। বিশ্বশান্তি বিপন্নের অন্যতম কারণ যুদ্ধ। যুদ্ধ বন্ধের জন্য জাতিপুঞ্জ ও জাতিসংঘের জন্ম হলেও যুদ্ধ বন্ধ হয়নি।
মানুষের সবচেয়ে ঘৃণ্য, জঘন্য কার্যক্রম যুদ্ধ ও যুদ্ধের ছোট-বড় যে কোনো ধরনের প্রস্তুতি। সজ্ঞানে মানব সংহারের চিন্তা বা পরিকল্পনা মানুষকে জন্তু জানোয়ার বা পশুর অধম প্রজাতিতে পরিণত করেছে। পৃথিবীতে কোনো জীব যা প্রজাতিকে মেরে ফেলতে চায় বা স্বজাতির ক্ষতি সাধন করে, হত্যা করে বা হত্যার ষড়যন্ত্র করে, খুঁজে পাওয়া দুষ্কর । যুদ্ধংদেহিরা প্রায়ই প্রচার করে যে, যুদ্ধ যুগে যুগে মানব ইতিহাসে গতি পরিবর্তন ও মানবের উন্নয়ন করেছে। এমনকি গান পাউডার বা কামান তৈয়ার করা বিজ্ঞানকে অগ্রসরমাণ করছে। কোনো বিবেকবান চিন্তাবিদের জন্য এটা চরম ধিক্কার। যেমন, অ্যাটম বোম আবিষ্কার করে মানবের সম্ভাব্য ক্ষতির চিন্তায়, সেই স্বজ্জন ব্যক্তিত্ব নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিলেন অথচ আজ ড্রোন ব্যবহারের উন্নত সফটওয়ার লুক্কায়িত সম্পদ। প্রস্তুতকারীর দাবি যে, ড্রোনে ঐ সফটওয়্যার ব্যবহারে ড্রোন ইমুন হবে, অর্থাৎ বিধ্বংসী সব অস্ত্রের চোখ ফাঁকি দেবে। ধ্বংসের হাত থেকে মানবজাতির বাঁচার আর কোনো উপায় রইল কি? আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স ও মেশিন ইনটেলিজেন্স উন্নত দেশগুলোকে অর্থলোভী ও রক্তপিপাসু করে তুলেছে।
যুদ্ধের কোনো উপকারিতা নেই, এতে কেউ অমত পোষণ করবে না। তাহলে যুদ্ধ কেন, সমর সরঞ্জামের পেছনে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ অপচয় কেন, গুটিকয়েক মানুষের স্বাচ্ছন্দ্য জীবনযাপন বা কাজ পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টির জন্য? যুদ্ধ মানুষের প্রাণ ও সম্পদ ধ্বংস করছে, জীবনের আনন্দ কেড়ে নিয়ে দুঃখ ভারাক্রান্ত করছে, বাস্তুহারা, পঙ্গুত্বের বোঝা চাপিয়েছে, জাতিতে জাতিতে বিভেদ সৃষ্টি করেছে পুনঃপুন বিশ্বশান্তি বিনষ্ট করেছে। নিঃসন্দেহে এই সকল কার্যক্রম বিবেকবানকে স্তব্ধ করে। পৃথিবী থেকে যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ হোক এবং মানব জাতি রক্ষা পাক, এটাই আমাদের কামনা ও প্রার্থনা।