আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আবারও আলোচনায় এসেছে আগুন-সন্ত্রাস। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের মতো অগ্নিসন্ত্রাসের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস সম্পর্কে দেশবাসীকে সচেতন করতে এবং নিজেদের সতর্ক থাকতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল বুধবার সকালে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের যৌথ সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন।
একই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি আবারও অগ্নিসন্ত্রাসের পাঁয়তারা করছে। সারা দেশের মার্কেটগুলোতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পাহারায় থাকার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, কেউ নাশকতা করতে এলে তা রুখে দিতে আইনশৃঙ্খলা র ক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করবেন দলের নেতাকর্মীরা।
বৈঠক চলাকালে প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ উপস্থিতি নেতাদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় তিনি প্রায় ১০ মিনিট ভিডিও কলে কথা বলেন। তিনি পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে জনসংযোগ করার পাশাপাশি সরকারি প্রকল্পের উপকারভোগীদের খোঁজখবর নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, ঈদুল ফিতর ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নেতাকর্মীদের অন্তত ‘হাফ ডজন’ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে রয়েছে বিরোধীদের সম্ভাব্য নাশকতার ব্যাপারে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকা, ঈদের ছুটিতে নিজ নিজ এলাকার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ করা, সরকারি প্রকল্পের উপকারভোগীদের খোঁজখবর এবং সরকারের উন্নয়নের চিত্র মানুষের কাছে তুলে ধরা, বিএনপির অপশাসন ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা এবং তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সময়ের তুলনা করে মানুষকে বোঝানো, স্থানীয় নেতা ও সংসদ সদস্যদের গ্রুপিং না করা এবং যাকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা, কৃষকদের ধান কাটার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা ও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং উৎপাদন বাড়াতে অনাবাদি জমি না রাখতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, আসন্ন ঈদ সামনে রেখে দলীয় নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি নির্বাচন সামনে রেখে জনসংযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের অসংখ্য প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধসহ সব পর্যায়ের জনগণকে নানা ধরনের ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। এই ভাতাগুলো উপকারভোগীদের কাছে সরাসরি যাচ্ছে কি না, সে বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বলেছেন তিনি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে কি না, সে বিষয়েও সরেজমিনে খোঁজখবর নিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ :সভায় উপস্থিত নেতারা জানান, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে অসহায়, দুস্থ ও গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে দলকে আরো গতিশীল করার জন্য সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। এছাড়া দলীয় নেতাদের কর্মীদের বৃক্ষ রোপণ করতেও নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী।
সূত্র জানায়, ঈদের সময় গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে বিএনপির আমলের অপশাসন, দুর্নীতির চিত্র ও পার্থক্য মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্য বলেন তিনি।
কোনো গ্রুপিং নয় :সভায় অংশ নেওয়া একজন নেতা জানান, দলের সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এলাকায় কোনো গ্রপিং-দ্বন্দ্ব করা যাবে না। সবাইকে দলের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে। যারা এলাকায় কাজ করতে চান, একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতা করা যাবে না। কৃষকদের ধান কাটার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা এবং সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যার যার এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের মানুষের খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি এলাকায় কোনো ভূমিহীন, গৃহহীন থাকলে খোঁজ নিতে হবে। এছাড়া অনাবাদি জমি আবাদে মানুষকে উত্সাহিত করতে হবে।
নেতাকর্মীদের সাদাসিধে জীবন যাপন করতে হবে :জানা গেছে, দলীয় নেতাকর্মীদের সাদাসিধে জীবনযাপনের পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সাদাসিধে জীবন যাপন করতে হবে। মানুষের সঙ্গে মিশে থাকতে হবে, তাদের কথা চিন্তা করতে হবে। সম্প্রতি মার্কেটে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা নাশকতা করবে, তাদের সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। সেই সঙ্গে যাতে নাশকতা করতে না পারে, সে ব্যাপারেও দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন তিনি।
ছাত্রলীগকে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার নির্দেশ :জানা গেছে, সভায় অংশ নেওয়া ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঙ্গেও কথা বলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি। এ সময় সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বকে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার নির্দেশনা দেন তিনি। তারা দলীয় প্রধানকে জানিয়েছেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রস্তুত করা হয়েছে। ঈদের দুই-এক দিন পরে কমিটি দেওয়া হবে।
এর আগে ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন।
যৌথ সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে অশুভ শক্তি কাজ করছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অপতত্পরতা আবারও শুরু হয়েছে। পরপর কয়েক জায়গায় আগুন লাগার ঘটনা তো অগ্নিসন্ত্রাসের মতোই। মার্কেটে আগুন লেগেছে, নাকি লাগানো হয়েছে, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের মার্কেটগুলোতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পাহারায় থাকবেন জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, গণতন্ত্র, সংবিধান ও দেশের স্থিতিশীলতার প্রশ্নে শেখ হাসিনা আপসহীন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অগ্নিসন্ত্রাসের কালো ছায়ার আশঙ্কা আছে। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের মতো পদধ্বনি শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। দেশব্যাপী বিক্ষোভ, পদযাত্রা, মানববন্ধনে জনসমর্থন আদায় করতে পারেনি বিএনপি। জনগণ তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি। আমেরিকার সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্কেও কোনো সমস্যা নেই জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, কারো ফরমায়েশি গণতন্ত্র বাংলাদেশে চলবে না। বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি ইইউ, মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ সবাইকে জানানো হয়েছে। নির্বাচন হবে সংবিধান মাফিক, পরিচালনা করবে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন। সরকার এখানে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।
দেশব্যাপী অসাম্প্রদায়িক শক্তির ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি চায় দেশে অস্বাভাবিক সরকার আসুক। তারা আবারও আগুন নিয়ে খেলা শুরু করল। আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে তারা শেখ হাসিনাকে হটানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
সভায় সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফরুল্লাহ, শাজাহান খান, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, এস এম কামাল হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।