পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। উভয়পক্ষের এই সম্মুখ সমরে রাশিয়ার ‘অর্জনই’ বেশি। মূলত পুরো ইউক্রেন ছেড়ে দেশটির পূর্বাঞ্চলেই এখন চলছে তীব্র লড়াই। এই লড়াইয়ে দিন দু’য়েক আগেই পূর্ব ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় শহর সেভেরোদোনেৎস্কের দখল করে নিয়েছে রুশ বাহিনী। আর এরপরই রুশ সেনা ও মস্কোপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধাদের নজর এখন লুহানস্ক প্রদেশে ইউক্রেনীয় সেনাদের হাতে থাকা শেষ বড় শহর লিসিচানস্ক। যোদ্ধাদের এরই মধ্যে এই শহরের ভেতরে পাঠানো শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি, আল-জাজিরা
গত শনিবার ইউক্রেনের লুহানস্কের সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের দখল নিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। এর মাধ্যমে পুরো লুহানস্ক অঞ্চলটি রাশিয়ার দখলে চলে গেছে। অবশ্য একই দিন দেওয়া ওই ভাষণে জেলেনস্কি রুশ নিয়ন্ত্রণ থেকে ভূখন্ড ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকারও করেছেন।
সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের দখল নেওয়ার পর রাশিয়ার নজর এখন লিসিচানস্ক শহরে। এই শহরটি সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের ‘জমজ শহর’ (টুইন সিটি) নামে পরিচিত। সেভেরোদোনেৎস্ক শহরটি মূলত পূর্ব ইউক্রেনের লুহানস্ক অঞ্চলের সিভারস্কি দোনেৎস নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। আর এর পার্শ্ববর্তী ছোট শহর লিসিচানস্ক এবার দখলে নিতে পারলে মস্কো লুহানস্কের পুরোটাই দখল করতে সক্ষম হবে। মূলত লুহানস্ক হচ্ছে দনবাসের দুটি প্রদেশের একটি, যা রাশিয়া বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রক্ষার নামে দখলের জন্য হামলা চালাচ্ছে।
রোববার রুশ বার্তা সংস্থা ‘তাস’ মস্কোপন্থি এক বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী বিভিন্ন দিক দিয়ে লিসিচানস্কে প্রবেশ করেছে এবং ইউক্রেনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ বলেছেন, রুশ বাহিনী কামান ব্যবহার করে দক্ষিণ থেকে লিসিচানস্ককে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে। তবে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা শহরে প্রবেশ করেছে কি-না, সেটি উলেস্নখ করেননি তিনি।
ইউক্রেন অভিযানের পর প্রথম
বিদেশ সফর পুতিনের
ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের পর প্রথম বিদেশ সফরে যাচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। চলতি সপ্তাহে মধ্য এশিয়ার দুটি সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্র সফর করবেন তিনি। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন রোববার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
রোশিয়া-ওয়ান রাষ্ট্রীয় টিভি স্টেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুতিন তাজিকস্তান ও তুর্কমেনিস্তান সফর করবেন। এরপর মস্কোয় ফিরে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। তাজিকস্তান সফরকালে রাজধানী দুশানবেতে তাজিক প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রাখমনের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের। সাবেক এই সোভিয়েত রাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট রাখমন। তিনি রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবেও পরিচিত। তুর্কমেনিস্তান সফরকালে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন রাজধানী আশগাবাতে কাস্পিয়ান দেশগুলোর একটি সম্মেলনে যোগ দেবেন। সেখানে থাকবেন আজারবাইজান, কাজাখস্তান, ইরান ও তুর্কমেনিস্তানের শীর্ষ নেতারাও।
এর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট সর্বশেষ বিদেশ সফর করেন চলতি বছর ফেব্রম্নয়ারির শুরুতে। সে সময় তিনি চীনের রাজধানী বেইজিং সফর করেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ‘অসীম বন্ধুত্বের’ ঘোষণাও দেন তিনি সে সময়। তখন শীতকালীন (উইন্টার) অলিম্পিকের উদ্বোধন অনুষ্ঠানেও যোগ দেন পুতিন। সে সময় ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার যে দ্বন্দ্ব চলছিল, তাতে রাশিয়ার পক্ষে থাকার প্রতিশ্রম্নতি দেয় চীন। অন্যদিকে, তাইওয়ান ইসু্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের চলমান বৈরিতায় বেইজিংয়ের পক্ষে অবস্থান স্পষ্ট করে রাশিয়া।
আর সেই সফর শেষে ফেরার পর গত ২৪ ফেব্রম্নয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রুশ সেনারা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
মস্কো অবশ্য ইউক্রেনে তাদের এই হামলাকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ আখ্যায়িত করছে। এ ছাড়া যুদ্ধের শুরুতে পুরো ইউক্রেনীয় ভূখন্ড আক্রান্ত হলেও রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর মূল মনোযোগ এখন দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস এলাকায়।