সতর্ক থাকতেই হবে। বিশেষত ঈদ পালিত হওয়ার পরেই বেশি। সুগভীর ষড়যন্ত্র ও নাশকতার গন্ধ ফিরছে নাকে। ‘র্যাব সাপোর্ট সেন্টার’-এর কথা শুনছি। তবে পুরোপুরি আশ্বস্ত হওয়ার কারণ দেখছি না। প্রথমত, পবিত্র ঈদুল ফিতর পালনের জন্য বাংলাদেশের মানুষের আবেগ থাকবে। এই সুযোগটাই দেশের চিহ্নিত রাজনৈতিক অপশক্তি জামায়াত-বিএনপি নিতে পারে। গেল কিছুদিন ধরে রাজধানী ঢাকায় যেভাবে আগুন লাগছে, তা নিছকই দুর্ঘটনা—এভাবে দেখবার সুযোগ কম।
দেশের নামধারী রাজনৈতিক দল বিএনপি তার দোসরদের নিয়ে পুনরায় ফিরে এসেছে। নিজেও ভাবছিলাম, তারা যে বেশ কিছুদিন ধরে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে গোছালো রাজনীতিতে রয়েছে, এ-ও কি সম্ভব! যদিও আমার লেখায় বারবার করে বলেছি, তারা কোনো কিছুর জন্য অপেক্ষা করছে। এই ‘কোনো কিছুই’ আগুন নিয়ে কাজকারবার কি না, তা নিয়ে এখন আর বসে থাকার সুযোগও নেই। তারা কোনো দিনই সুস্থ ধারার রাজনীতি করেনি, করবে না। একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে নিয়ে তারা ফলত এখন রাজধানীর পেট্রোল পাম্প, মার্কেট ও হাসপাতালকে টার্গেট করে থাকতে পারে। একত্রে যদি ঢাকার ২০টি স্পটে আগুন জ্বালিয়ে দেয়, বিষয়টিকে তখন কি আর স্বাভাবিক হিসাবে দেখবার সুযোগ আছে?
বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাসের দল। অতীতে তা করে দেখিয়েছে। এরা জনগণের জানমালের তোয়াক্কা করে না। তারা জনস্বার্থে রাজনীতি করে না। নিজেদের যদি কোনো চাওয়া পাওয়া থাকে, তা নাশকতার মাধ্যমে কেন সমাধান খুঁজতে হবে?
বিএনপির নেতৃত্বে ঘাটতি রয়েছে। এখনো সুযোগ রয়েছে। রাজনীতির মূলধারায় ফিরুন। সাধারণ মানুষ পর্যন্ত বলাবলিতে আছে যে, সাম্প্রতিক সময়ের আগুন লাগার যে হিড়িক—সেখানে ঐ কথিত জাতীয়তাবাদী শক্তির হাতই রয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে বলেছেন, আগুন লাগার কারণগুলো কী এবং এর পেছনে নাশকতাবাহিনী আছে কি না তদন্ত করতে। আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগুন নিয়ে খেলেন না, নিজেরাই পুড়ে যাবেন। এর অর্থ হলো যে, সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে বা প্রমাণ অর্থাৎ, এমন উদ্যোগে বিএনপির হাত রয়েছে।
অন্যদিকে মানুষ এখন রাজধানী ছাড়ছে। ঘরমুখী মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জনসমাগম হয় এমন স্থানগুলোতে ‘র্যাব সাপোর্ট সেন্টার’ স্থাপিত হয়েছে। অন্যদিকে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাবের ব্যাটালিয়নগুলো নিজ নিজ এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করবে ও পর্যাপ্তসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করছে। সারা দেশে র্যাবের কন্ট্রোল রুম, স্ট্রাইকিং রিজার্ভ, চেক পোস্ট ও সিসিটিভি মনিটরিংসহ যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড ও হেলিকপটারগুলো সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হবে বলে শুনছি। কিন্তু রাজধানী ঢাকা তখন অরক্ষিত থেকে যাচ্ছে। কাজেই আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।
সাধারণত কেউ জিজ্ঞাসা না করলে আমি সচরাচর বলি না। বদলে যাওয়া রাজশাহী শহর প্রশ্নে। যেমন, রাজশাহী নগরীকে বদলানোর জন্য নতুন নতুন পরিকল্পনা করে এগিয়েছি। গর্ব করে এখন বলতে পারি যে, এসো আমার শহরে বেড়িয়ে যাও। এদিকে সামনেই রাসিক নির্বাচন। তা নিয়ে ব্যস্ততাও রয়েছে। তবে আমি যেটা বলতে চাইছি, তা হলো, কীভাবে মানুষ নিজের দেশের সম্পদ নষ্ট করার জন্য আগুন দিতে পারে? তারা কি বোঝে না যে, এতে করে কতগুলো মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা করা হচ্ছে? আমি একটা শহরকে বদলিয়ে দিয়েছি আর একজন শেখ হাসিনা পুরো দেশকে। সেই সোনার বাংলায় আর যা-ই হোক, নাশকতাকে বরদাশত করতে পারব না। আগামী জুন থেকে আমি নিজেও জাতীয় রাজনীতিতে অধিকতর মনোযোগী হয়ে এই ধরনের রাজনৈতিক অপশক্তি মোকাবিলায় সেরাটা দেব বলে মনে করছি।
‘জীবন হোক কর্মময়, নিরন্তর ছুটে চলা। চিরকাল বিশ্রাম নেওয়ার জন্য তো কবর পড়েই আছে’—বলেছিলেন হজরত আলি (রা.)। এভাবেই যাক আমারও জীবন। নেলসন ম্যান্ডেলার একটা উক্তি মনে পড়ে। বলেছিলেন যে, ‘সম্পন্ন করার আগে সবকিছুই অসম্ভব মনে হয়।’ আমার মনে হয়, টানা প্রায় ১৫ বছর রাষ্ট্রের সেবায় থেকে শেখ হাসিনাই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরেছেন, যা অনিশ্চিত ছিল। বাংলাদেশ কার্যত এগিয়ে যাচ্ছে। স্বপ্ন দেখতে হয়। জগতটার সবকিছু পরখ করতে হয়। যদিও কার্ল মার্কস বলেছেন, শুধু দেখলেই চলবে না, ব্যাখ্যা করাটাই কাজ। একজন রাজনীতিকের প্রধান কাজগুলোর একটি হলো, নিজেরও অনুসন্ধানী একটা মন থাকতে হবে। সেই মন দিয়ে গোষ্ঠীগত চিন্তায় মুখর হয়ে জনশ্রেণির জন্য স্বপ্ন দেখতে শুরু করতে হবে।
ওয়াল্ট ডিজনি বলেছিলেন, ‘যদি স্বপ্ন দেখতে পারো, তবে তা বাস্তবায়নও করতে পারবে।’ বাংলাদেশ সঠিক কক্ষপথে আছে। সামনে রাস্তায় অপশক্তির অস্ত্রগুলোর দেখা মিলবে। তাদের আগুনের খেলাও দেখতে হবে। কিন্তু, আমরা দেশের মানুষ মন জয় করে তাদের সেবক হয়ে লড়তে চাইব।
জয় বাংলা! জয় বঙ্গবন্ধু! জয় শেখ হাসিনা!