কক্সবাজারের নাজিরারটেক সমুদ্র উপকূলে টেনে আনা ডুবন্ত ট্রলার থেকে ১০ জনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৫০-৬০ জনকে অভিযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের ৪৮ ঘণ্টার মাথায় প্রধান অভিযুক্তসহ দুইজনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। নিহতদের একজন ক্ষতিগ্রস্ত ট্রলারমালিক শামশুল আলমের স্ত্রী রোকেয়া আকতার বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন। মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তার দুইজন হলেন, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ির সাইরার ডেইল এলাকার মুহাম্মদ ইলিয়াছের ছেলে বাইট্টা কামাল (৪৫) ও হোয়ানক ইউনিয়নের মোহরাকাটা গ্রামের মৃত মকবুল আহমদের ছেলে নরুল করিম ওরফে করিম সিকদার মাঝি (৫৫)। তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আগের কোনো মামলার নথি পাওয়া যায়নি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম।
দশজন খুনের সঙ্গে গ্রেপ্তার দুইজন জড়িত উল্লেখ করে এসপি বলেছেন, কী কারণে তাদের হত্যা করা হয়েছে এখনও জানা সম্ভব হয়নি। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে সঠিক তথ্য বের হবে বলে তিনি আশাবাদী।
প্রেস ব্রিফিংয়ে এসপি মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ভাসমান ট্রলারে অর্ধগলিত ১০টি লাশের রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ চলছে। উদ্ধারকৃত লাশগুলোর পরিচয় শনাক্তে প্রথাগত পদ্ধতি ব্যবহার করে পুলিশ ৬ মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত করেছে। লাশের দাবিদার স্বজনদের কাছে লাশগুলো হস্তান্তরও করা হয়েছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাকি ৪টি লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে। সেসব লাশ কক্সবাজার সদর হাসাপাতালের হিমাগারে রেখে ডিএনএ নমুনা ইতোমধ্যেই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
উপকূলে টেনে আনা ডুবন্ত ট্রলারে পাওয়া যায় ১০ জনের লাশ।
এসপি বলেন, ঘটনার পর পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের পাশাপাশি জেলা পুলিশের ৫টি বিশেষ চৌকস টিম প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে। টানা ৪৮ ঘণ্টা অভিযানে সোর্স ও গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাইট্টা কামাল ও করিম সিকদারকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তারা এজাহারভুক্ত ১ নম্বর ও ৪ নম্বর আসামি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার সত্যতা পাওয়ায় আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড আবেদন করা হবে। ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন এবং এর সাথে জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এসপির ভাষ্যমতে, তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে জেলা পুলিশের ৫টি টিম ওই হত্যার তদন্ত চালাচ্ছে। এর মাঝে নিহত শামসুল আলম মাঝির সাথে পূর্বশত্রুতা, নিহতরা জেলে নাকি জলদস্যু, নাকি মাদকের লেনদেন নিয়ে খুন হয়েছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেননা ক্ষতিগ্রস্ত বোট মালিক নিহত সামশুল আলমের নামে হত্যা ও মাদকের পৃথক মামলা রয়েছে। তার সহযোগী হিসেবে পরিচিত খুন হওয়া নুরুল কবির নামে অপরজনের নামেও অস্ত্র ও ডাকাতি প্রস্তুতির মামলার তথ্য মিলেছে।
উপকূলে টেনে আনা ডুবন্ত ট্রলারে পাওয়া যায় ১০ জনের লাশ।
গ্রেপ্তার দুইজন হত্যার সাথে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে বলে এসপি দাবি করলেও কী কারণে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা অজানা বলে উল্লেখ করেছেন।
তবে বাবু সানি নামে এক জেলে বলেন, অর্ধমাস আগে করিম সিকদার মাঝির ট্রলার এবং বাইট্যা কামাল ও তার আরেক ভাইয়ের ট্রলার একসঙ্গে গভীর সমুদ্রে সামশুল আলমের ট্রলারকে জলদস্যুর ট্রলার উল্লেখ করে ধাওয়া করে। সেসময় ওই তিন ট্রলারের মাঝিরা আমার (বাবু সানি) ট্রলারের সহযোগিতা চান। কিন্তু তীরে ফেরার তাড়ায় আমাদের ট্রলারটি ওই তিন ট্রলারের সঙ্গে যোগ না দিয়ে ঘাটে ফিরে আসে। সেই থেকেই সামশুল আলমের ট্রলারটি মাঝি-মাল্লাসহ খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে ২৩ এপ্রিল কক্সবাজার শহরের নাজিরা টেক পয়েন্টে ডুবন্ত ট্রলারের কোল্ডস্টোরেজ থেকে সামশুল আলমসহ ১০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এদের মাঝে অনেকেই আগে কখনও সাগরে যাননি বলে দাবি করেছেন নিহতদের স্বজনরা।