বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচনি মাঠে সরব রয়েছেন। এছাড়া অপর দলগুলো গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত দলের কে প্রার্থী হবেন তা নিশ্চিত করতে পারেনি। যদিও আজ বুধবার বেলা ১১টায় সিটি নির্বাচন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। এছাড়া আগামীকাল বৃহস্পতিবার চরমোনাই মাদ্রাসা অডিটরিয়ামে হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বরিশাল মহানগর সেক্রেটারি। অন্যদিকে নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থিতা নিয়ে বিএনপির নেতাদের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
বিএনপির বিগত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দলের যুগ্ম মহাসচিব সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, যেখানে বিএনপির ছয়জন সংসদ সদস্যকে পদত্যাগ করানো হয়েছে সেখানে পদে থেকে যে কোনো নির্বাচন করলে তার বিষয়ে দল কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে। বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিন জানিয়েছেন, বিএনপি এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না—এটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তবে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রয়াত সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল পুত্র কামরুল আহসান রূপন স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন।
বরিশাল সিটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বোন আমেনা বেগমের ছোট ছেলে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত ইতিমধ্যে নাগরিক সংবর্ধনায় সিক্ত হয়েছেন। তিনি রমজানের শেষের দিকে ও ঈদে নগরবাসীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। তিনি বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছোট ভাই এবং বরিশাল সিটির বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর চাচা। মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও সাদিক আবদুল্লাহ তার নেতা-কর্মীদের ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সকলকে কাজ করতে হবে। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ যৌথ সভা ডেকে দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মাঠে নামবেন। এছাড়া ইতিমধ্যে নৌকা প্রার্থীর পক্ষে বরিশাল সদর আসনের এমপি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তার অনুসারীদের নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছেন। প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরনের কর্মী-সমর্থকদেরও সরব উপস্থিতি দেখা গেছে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে। নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, ১৯৮০ সাল থেকে বিদেশগামী পণ্যবাহী জাহাজের ব্যবসা করি। হালাল রোজগার করে উপার্জন করছি। জাতির পিতার ভাগিনা পরিচয়ে কোথাও কোনো ক্ষমতা দেখিয়েছি বা প্রভাব খাটিয়েছি, তা কেউ বলতে পারবে না। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যখন আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই, এখন মানুষের সেবা করে কাটাতে চাই। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন বরিশালের মানুষের সেবা করার। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া দায়িত্ব পালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
এদিকে জাতীয় পার্টি (এ) চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও বরিশাল মহানগরের সদস্যসচিব ইকবাল হোসেন তাপস দীর্ঘদিন নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন। ইতিমধ্যে তার দলের নেতাকর্মীরা একাধিক মিছিল-মিটিং করে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। রমজানে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ইফতার মাহফিলসহ নানা কর্মকাণ্ড লক্ষ করা গেছে। সর্বশেষ সোমবার সন্ধ্যায় সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডে একযোগে মিছিল বের করে বড় ধরনের শো-ডাউন দেয় দলের নেতাকর্মীরা। ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, ‘মানুষ আমাকে ভোট দেবে সেটি আমি বিশ্বাস করি, কারণ বরিশাল সিটি করপোরেশন হওয়ার পরে নগরবাসীর একটা প্রত্যাশা ছিল, বরিশাল শহরটা একটা আধুনিক শহর হবে। কিন্তু কোনো মেয়রই সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। যদিও খানিক সময়ের জন্য মরহুম শওকত হোসেন হিরন চেষ্টা করেছেন এবং তিনি কিছুটা উন্নয়ন করেছেনও। তার পরে যারা এসেছেন তারা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। তিনি বলেন, মানুষ যদি ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তাহলে আমরা বিজয়ী হব।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনি মাঠে থাকা কামরুল আহসান রূপন বলেন, বরিশালে কোনো উন্নয়ন হয়নি। কোনো প্রকল্প পাশ করেনি। সিটি করপোরেশন এরিয়ার রাস্তাঘাট এবং জলাবদ্ধতা-যে বেহাল দশা তা আমাদের চোখের সামনেই দৃশ্যমান। আমি যদি জয়লাভ করি অবশ্যই রাস্তাঘাট, জলাবদ্ধতা নিরাসনে কাজ করব। রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন করাই হবে আমার প্রধান লক্ষ্য।