আন্তর্জাতিক জোনাল দাবার মহিলা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হওয়া জান্নাতুল ফেরদৌস বিশ্বকাপে খেলবেন। একই সঙ্গে এই দাবাড়ু সর্বকনিষ্ঠ মহিলা মাস্টার হওয়ার খেতাব পেয়েছেন। দেশের নারী দাবাড়ুদের মধ্যে জান্নাতুল ফেরদৌস সবচেয়ে কম বয়েসে মহিলা মাস্টার হয়েছেন। তবে এখনই তিনি এই খেতাব ব্যবহার করতে পারবেন না। দাবা ফেডারেশনের কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক দাবা বিচারক হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌসকে তার রেটিং বাড়িয়ে ২ হাজার করতে হবে। বর্তমানে তার রেটিং ১ হাজার ৮৫০।
দেশের দাবায় জান্নাত সবচেয়ে কম বয়সে খেতাব পেয়েছেন। এখন তার বয়স সাড়ে ১৭ বছর। এর আগে দেশের তিন নারী দাবাড়ু রানী হামিদ (৪১ বছরে), শামীমা আক্তার লিজা (২২ বছরে) এবং শারমিন সুলতানা শিরিন (৩২ বছরে ) আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার খেতাব জয় করেন। এশিয়ান বিভাগের চ্যাম্পিয়ন জান্নাতুল ফেরদৌস যত দ্রুত ২০০০ রেটিং পূর্ণ করতে পারবেন তত দ্রুতই এই খেতাবটি তার নামের আগে যুক্ত করতে পারবেন।
জান্নাতুল ফেরদৌস মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এবার আগ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছিলেন চ্যাম্পিয়ন হবেন। কঠিন লড়াই করেছেন। দেশি-বিদেশি দাবাড়ুদের সঙ্গে লড়াই করে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন জান্নাতুল ফেরদৌস পারিবারিকভাবেই দাবা শিখেছেন। বাবা আজীজুল হক আইডিয়াল প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক, দাবা খেলতেন, মা কোহিনূর আক্তার দাবা খেলতে পারেন। ছোট ভাইও এখন খেলছেন। এইচএসসি টেস্ট পরীক্ষা পিছিয়ে এক মাস পিছিয়ে যাওয়ার কারণে খেলার সুযোগ পেয়ে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস। বললেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল বিশ্বকাপে খেলব।’ আজারবাইজানের বাকু শহরে বিশ্বকাপ দাবা।
জান্নাতুল ফেরদৌস বললেন, ‘আমি সবচেয়ে কম বয়সে আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার হলাম। এখন আমার বয়স সাড়ে ১৭।’
বাবার কাছ থেকে শেখা। আমার কাছ থেকে ভাই শিখেছে। মা-ও খেলতে পারে। কিন্তু মা খেলে না।। বাবার স্বপ্ন ছিল আরো বড় দাবাড়ু হবেন তিনি সেটা হতে পারেননি। আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন আমি আবার ভাই ভালো দাবাড়ু হবো।’ জান্নাতুল বললেন, ‘খেলতে গেলে লেখাপড়ায় হ্যাম্পার হয়। মা আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। যখন টেস্ট পরীক্ষা চলে এলো আমি খেলতে চাইনি। পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় আমি খেলতে এসেছিলাম। দাবা খেললে সময় দিতে হয়। এতে পড়াশোনায় ক্ষতি হয়। কলেজের প্রিন্সিপাল, ক্লাস টিচাররা আমাকে অনেক বেশি সহযোগিতা করেন। শিক্ষকরা বলেন, তুমি দেশের পতাকা নিয়ে যাবে। দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। আমরা তোমার পাশে আছি।’
মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে থাকেন জান্নাতুল ফেরদৌস। কষ্ট করেই চলতে হয় তাকে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী বাবা। জান্নাতুল ফেরদৌস বললেন, ‘বাবার আয় খুব বেশি না। দাবা খেলতে গেলে অর্থেরও প্রয়োজন হয়। ভালো প্রশিক্ষণ পেতে হয়। ভালো টুর্নামেন্টে খেলতে হয়।’
দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন শামীম তার স্ত্রী ফেডারেশন সদস্য মাহমুদ হক চৌধুরী মলি, যুগ্ম-সম্পাদক ড. শোয়েব রিয়াজ আলম নানা ভাবে জান্নাতুল ফেরদৌসকে সহযোগিতা করে আসছেন।
জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘বাবার স্বল্প আয় থেকে পরিবার নিয়ে চলা এবং খেলাটা ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে যায়। আমি আমার ভাই যদি পরিবারকে সাপোর্ট দিতে পারি সেটা খুব ভালো হয়। ধরুন আমার ভাই এবং আমাকে কেউ যদি স্পন্সর করে তাহলে পরিবারের জন্য একটা বড় সাপোর্ট হয়। বিদেশে খেলতে গেলে যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়া অনেক খরচ। স্পন্সর পেলে পরিবারের জন্য সাপোর্ট হতো।’