আগামী জুনে ভারতের বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত হবে দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপখ্যাত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ১৪তম আসর। আসন্ন সাফে দক্ষিণ এশিয়ার ছয় দেশসহ আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করবে এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তি দুই দেশ লেবানন ও কুয়েত। ফুটবল বিশ্লেষকদের মতে, এবারের সাফ চ্যাম্পিয়শিপ বাংলাদেশের জন্য বেশ কঠিন হবে। কেননা, লেবানন এবং কুয়েতের বিপক্ষে ম্যাচ জেতা অনেক কঠিন, পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বিপক্ষে বাংলাদেশ এখন আর চোখে চোখ রেখে খেলতে পারে না।
উল্লেখ্য, আসন্ন সাফের জন্য বাফুফে ৩৫ সদস্যের প্রাথমিক স্কোয়াড ঘোষণা করেছে। কয়েক জন নতুন মুখ ব্যতীত বরাবরের মতো এবারও একই খেলোয়াড়দের নিয়ে স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাফুফে, যা নিয়ে জোর বিতর্ক আছে! অধিকাংশ দর্শক উল্লেখ করছেন, ‘এবারের সাফেও বাংলাদেশের ভরাডুবি সুনিশ্চিত! কিন্তু তার পরও কেন বাফুফে ঘুরেফিরে একই খেলোয়াড়দের সুযোগ দিচ্ছে? বাফুফের হাতে কি বিকল্প খেলোয়াড় নেই? আমরা সাধারণ দর্শকেরা চাই, বাংলাদেশ শক্তিশালী জাতীয় ফুটবল টিম গঠন করুক এবং ২০০৩ সালের মতো এবারও দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরিধান করুক। বাফুফের আন্তরিক সদিচ্ছা না থাকার কারণে আমাদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে, আলোর মুখ দেখছে না!’
বাংলাদেশ ফুটবলের বর্তমান দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় রয়েছে। জানি না, বাফুফে সেই পথ ধরে হাঁটবে কি না। যদিও ফুটবল বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি ফ্রান্স, জার্মানি, ইংল্যান্ড, মরক্কোসহ অনেকেই অনুসরণ করে আসছে সেই পথ। শুধু অনুসরণই করছে না, বরং বরাবরই একে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে তারা। পথটি হলো, ‘বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত’ খেলোয়াড়দের দেশের হয়ে খেলতে উদ্বুদ্ধ করা। তাদের নিয়ে শক্তিশালী ‘জাতীয় ফুটবল দল’ গঠন করা। আমরা দেখেছি, মরক্কো এই নীতি অনুসরণ করে সাফল্য অর্জন করেছে। কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলেছে মরক্কো।
সম্প্রতি ফিফা উইন্ডোতে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকেও হারিয়েছে তারা! মরক্কোর মতো আমাদেরও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সারা বিশ্বে। বাংলার লাল-সবুজ জার্সি জড়িয়ে মাঠ মাতানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে তাদের। উল্লেখ করা দরকার, হামযা দেওয়ান চৌধুরী, কুইন সুলিভান, সামিত সোম, নাবিল ইরফান, ফারহান আলী ওয়াহেদ, গোলাম ইফতেখার, জিবরান আহমেদ, ওবায়দুর রহমান নবাব, রাহবার ওয়াহেদ খান, ইউসুফ হক জুলকারনাইন, ম্যাক্স রহমান, কাভান সুলিভানসহ আরো অনেক সম্ভাবনাময়ী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার রয়েছেন, যাদেরকে দলে যুক্ত করার বিষয়ে আমরা ভাবতে পারি। পাশাপাশি বিপিএল খেলা কয়েক জন বিদেশি খেলোয়াড়দের যদি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে জাতীয় দলের হয়ে খেলানো যায়, তবে তো সোনায় সোহাগা!
আগামী জুনে সাফসহ ২০২৬ বিশ্বকাপ ও ২০২৭ এশিয়া কাপের বাছাইপর্ব রয়েছে বাংলাদেশ দলের সামনে। এখনই যদি বাফুফে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তবে আসন্ন টুর্নামেন্টগুলোতে ভালো ফলাফল আসবে না—এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়। বাংলাদেশে খেলোয়াড় তৈরির কার্যকরী তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকার কারণে নতুন সম্ভবনাময় খেলোয়াড় উঠে আসার সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে বাফুফে কর্তারা ঘুরেফিরে একই স্কোয়াড ঘোষণা করছেন এবং জাতীয় ফুটবল দল আমাদের বারবার হতাশ করছে! এ অবস্থায়, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়, আদিবাসী ও বর্তমান জাতীয় ফুটবল দলের যোগ্য খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে একটি ‘শক্তিশালী জাতীয় ফুটবল দল’ গঠন করা এখন সময়ের দাবি।