বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের ১১ মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২ লাখ ৫২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করেছে। এই সংগ্রহ মোট লক্ষ্যমাত্রার ৭৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আর গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি। অর্থবছরের পুরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে শেষ মাস অর্থাৎ জুনে ৭৭ হাজার ৭৯ কোটি টাকার রাজস্ব সংগ্রহ হতে হবে। তবে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, জুন মাসে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রয়োজনীয় রাজস্বের এক-তৃতীয়াংশও সংগ্রহ হবে না। ফলে মোট রাজস্ব সংগ্রহে কমপক্ষে ৫০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি থাকবে।
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের মাধ্যমে সরকার তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নেয়। পরে সংশোধিত বাজেটেও এই লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত রাখা হয়। যদিও অন্যান্য বছর বাজেট সংশোধনের সময় এনবিআরের রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনা হয়ে থাকে।
সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান সমকালকে বলেন, রাজস্ব সংগ্রহের প্রবৃদ্ধি গত কয়েক বছরের তুলনায় ভালো। তবে এটা হয়েছে বিশ্ব বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে। গত অর্থবছরের সমান পণ্য আমদানি হলেও রাজস্ব সংগ্রহ বেশি হয়েছে। ফলে কর প্রশাসনের দক্ষতা উন্নয়নের কারণে যে রাজস্ব সংগ্রহ বেড়েছে, বিষয়টি তেমন নয়। রাজস্ব সংগ্রহে প্রবৃদ্ধি থাকলেও কর খাতের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা রয়েই যাচ্ছে। তা না হলে পণ্যমূল্য কমে যাওয়ার রাজস্ব সংগ্রহ কমে আসতে পারে। তিনি বলেন, অর্থবছর শেষেও রাজস্ব সংগ্রহে প্রবৃদ্ধি থাকবে। কিন্তু তাতেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলে মনে হচ্ছে না।
রাজস্ব সংগ্রহ-সংক্রান্ত এনবিআরের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আমদানি খাত থেকে ৮০ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা এসেছে। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। আর মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে মোট রাজস্ব এসেছে ৯৫ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। এ খাতে রাজস্ব সংগ্রহে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর আয়কর ও ভ্রমণ কর তথা প্রত্যক্ষ করে ১৭ দশমিক ৬২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ খাত থেকে ১১ মাসে মোট রাজস্ব এসেছে ৭৭ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা।
এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরে আমদানি ব্যয়, ভ্রমণ ব্যয় বেড়েছে। আবার দেশের ভেতরে ব্যবসা-বাণিজ্যও বেড়েছে। যে কারণে রাজস্ব সংগ্রহ বেড়েছে। তবে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া এবং বাজেটের কারণে জুন মাসে আমদানি কিছুটা কমবে। ফলে এ মাসে রাজস্ব সংগ্রহ অন্যান্য মাসের মতোই হবে।