নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে রিটকারীদের আইনজীবীকে ১২ কোটি টাকা দিয়ে সমঝোতার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ। একই সঙ্গে কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধসংক্রান্ত প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট। প্রতিষ্ঠানটির কোন কর্মচারীকে কত টাকা দেওয়া হয়েছে তার তালিকা এবং এসংক্রান্ত নথিসহ প্রতিবেদন আগামী ২ আগস্টের মধ্যে আদালতে জমা দিতে দুই পক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি রিটকারীদের আইনজীবী ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে তিনি গ্রামীণ টেলিকম ও শ্রমিক-কর্মচারীদের মামলাসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করেছেন। এসংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আসার পর আদালত এ আদেশ দেন।
গতকাল বিষয়টি নিয়ে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার বলেন, ‘আমরা শুনেছি, টাকার বিনিময়ে কর্মচারীদের আইনজীবী পক্ষপাতিত্ব করেছেন এবং শ্রমিক-কর্মচারীরা সমঝোতার মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি করতে বাধ্য হয়েছেন। ’ হাইকোর্ট বিস্ময় প্রকাশ করে আরো বলেন, ‘আদালত ব্যবহার করে কোনো অনিয়ম করা চলবে না। সব কিছু আইন অনুযায়ী না হলে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। আমি আদালতের মর্যাদা এবং আইনজীবীদের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাই না। শুধু বাংলাদেশেই নয়, এই উপমহাদেশে এমন কোনো আইনজীবী নেই, যিনি একটি মামলার জন্য ১২ কোটি টাকা ফি নিতে পারেন। ’
কম্পানির মুনাফার ৫ শতাংশ ‘শ্রমিকের অংশগ্রহণ তহবিল গঠন’ করে ২০০৬ সাল থেকে লভ্যাংশ শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করার কথা; কিন্তু সেই লভ্যাংশ শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন না করায় শ্রম আদালত ও হাইকোর্টে মামলা করেন তাঁরা। আর গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন করে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন।
আইন অনুযায়ী পাওনা টাকা পরিশোধ করা হবে। সম্প্রতি আদালতের বাইরে এমন সমঝোতার পর মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ছাঁটাই, পাওনা নিয়ে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের করা শতাধিক মামলা গত ২৩ মে প্রত্যাহার করা হয়।
এর পরদিন অর্থাৎ গত ২৪ মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের আইনজীবী ইউসুফ আলী কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, ‘যতটুকু জানি, হিসাব-নিকাশ করে ৪৩৭ কোটি টাকায় রফা হয়েছে। ১৭৬ জন শ্রমিক-কর্মচারী এ টাকা পাবেন। ’
আর গ্রামীণ টেলিকমের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেছিলেন, ‘ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড অনুযায়ী তাদের যে টাকাটা প্রাপ্য, সেই টাকাটা তাদের দেওয়া হচ্ছে। ২০১১ সাল থেকে ফান্ডের টাকা ধরা হয়েছে। ’
গতকাল আদালতের আদেশের পর এ বিষয়ে আইনজীবী ইউসুফ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটি অখ্যাত নিউজ পোর্টাল খবর ছেপেছে যে এ বাবদ ১২ কোটি টাকা ফি নেওয়া হয়েছে। আসলে এটি একটি গুজব। এ প্রতিবেদনের কোনো সত্যতা নেই। ’