ঢাকার সাভারের আশুলিয়া এলাকায় গত সপ্তাহে যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক ছাত্রের হাতে শিক্ষক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজ থেকে আবার ক্লাস শুরু হয়েছে।
হাজী ইউনুছ আলী কলেজ নামে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানো হয়।
গত শনিবার এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমিক পর্যায়ের একজন ছাত্রের আক্রমণে একজন শিক্ষক নিহত হওয়ার ঘটনায় কদিন ধরে সারা বাংলাদেশে তোলপাড় চলছে।
ওই ঘটনার পর প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়া হলেও গত এক সপ্তাহে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে রীতিমতো উত্তাল ছিল আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকা।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইফুল হাসান জানান স্কুলের প্রভাতী ও দিবা শাখার ক্লাস সময়মত শুরু হয়েছে, তবে শিক্ষার্থী উপস্থিতি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম রয়েছে।
মি. হাসান বলেন, স্কুল ও কলেজ শাখা মিলিয়ে অর্ধেকের কিছু বেশি শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছিল।
এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, “ঈদকে সামনে রেখে অনেক শিক্ষার্থী আগে আগে বাড়ি চলে যাওয়ায় উপস্থিতির হার কিছুটা কম।”
মি. হাসান জানান এক-দুইদিন ক্লাস করিয়েই তারা তাদের প্রতিষ্ঠানে ঈদের ছুটি ঘোষণা করবেন।
পাঁচদিন বন্ধ থাকার পর স্কুল খোলার পর পুলিশের উপস্থিতিতে ক্লাসের কার্যক্রম শুরু হয়। ক্লাস চলাকালীন সময়েও স্কুলের ভেতরে কিছুক্ষণ পরপর পুলিশ টহল দিচ্ছিল বলে নিশ্চিত করেন সাইফুল হাসান।
এদিকে শিক্ষক হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার পাশাপাশি ‘প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলাভঙ্গ’র দায়ে কলেজ শাখার এক ছাত্রীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
সাইফুল হাসান জানান, “শিক্ষককে আঘাত করায় জড়িত থাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলাভঙ্গ করা, প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ ঐ ছাত্রীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।”
আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুছ আলী কলেজে পাঁচদিন পর নিয়মিত ক্লাস শুরু হলেও সেখানকার পরিস্থিতি অন্যান্য দিনের মত ছিল না।
প্রধান শিক্ষক সাইফুল হাসান বলছিলেন, সকালে পুলিশের উপস্থিতিতে স্কুলের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ পরে পুলিশ আসে। পুলিশ সময়মতো না আসায় উপস্থিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
তবে কিছুটা দেরি করলেও পরে পুলিশ আসে এবং প্রতিদিনের মত স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয়।
সেসময় সেখানে উপস্থিত থাকা একজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেন, “বাচ্চার স্কুলে যে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে, তা কোনদিন চিন্তাও করি নাই। তার উপর এই কয়দিন হইচই, আন্দোলন কত কিছু হল। একটু ভয়ে থাকাটাই তো স্বাভাবিক।”
প্রধান শিক্ষক সাইফুল হাসান অবশ্য বলছেন অভিভাবকরা কিছুটা আতঙ্কের মধ্যে থাকলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমে সন্তুষ্ট তারা।
“পুলিশ সকালে স্কুল শুরু করার সময় এসেছিল। এখনও একটু পরপর টহল দিচ্ছে। বিকালে কলেজ শেষ করার সময়ও আসবে।”
“স্কুলের ভেতরে ছাড়াও স্কুলের বাইরে চারদিকে এলাকার ভেতরে, সব চায়ের দোকানে গিয়ে পুলিশ জানিয়ে এসেছে যেন কোথাও কেউ আড্ডা দিতে না বসে। এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রাখার উদ্দেশ্যে পুলিশ এই পদক্ষেপ নিয়েছে”, বলেন মি. হাসান।
ঈদের ছুটির পরে ১৬ তারিখ থেকে আবারো নিয়মিতভাবে স্কুল-কলেজের ক্লাস শুরু হবে বলে জানান মি. হাসান।
গত শনিবার স্কুলের একজন ছাত্রের আক্রমণে শিক্ষক নিহত হওয়ার পর থেকে আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী কলেজ বন্ধ থাকলেও গত এক সপ্তাহে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে রীতিমতো উত্তাল ছিল আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকা।
শনিবার দুপুরে কলেজের মাঠে স্কুলের মেয়েদের ক্রিকেট খেলার সময় দশম শ্রেণির এক ছাত্র স্ট্যাম্প দিয়ে বেশ কয়েকবার আঘাত করে কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমারকে।
এই ঘটনার পরপরই বন্ধ ঘোষণা করা হয় হাজী ইউনুছ কলেজ।
এর কিছুদিন পর অভিযুক্ত ছাত্রকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার কথা জানায় কর্তৃপক্ষ।
তবে কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হলেও সোমবার সকালে শিক্ষক উৎপল কুমারের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে চিত্রশাইল এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয় কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রকাশ করলে।
তারা অভিযুক্ত ছাত্রের গ্রেফতার ও শিক্ষক হত্যার বিচার দাবি করে।
এরপর দুইদিন ধরেই শিক্ষার্থীরা কলেজের আশেপাশে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করে।
পরে বৃহস্পতিবার রাতে অভিযুক্ত ছাত্রকে গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করে র্যাব।
এই হত্যাকাণ্ডের সাথে বহিষ্কার হওয়া কলেজ ছাত্রী কীভাবে জড়িত, তা কলেজ কর্তৃপক্ষ বিস্তারিত না জানালেও গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরগুলোতে উঠে এসেছে যে ঐ ছাত্রী অভিযুক্ত ছাত্রের বান্ধবী। স্থানীয় পত্রিকার খবরে আরো বলা হয়েছে, ওই ছাত্রীটিকে নিহত শিক্ষক তিরস্কার করেছিল বলে অভিযুক্ত ছাত্র তার উপর আক্রমণ করেছিল।