সোমবার খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে কেসিসির ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১২৮টি কেন্দ্রকে সাধারণ ও ১৬১ কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)।
সাধারণ কেন্দ্রের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার পুলিশ ও আনসার সদস্য। এছাড়া নির্বাচনকে সামনে রেখে খুলনা মহানগরীতে বসানো হয়েছে ১৬টি চেকপোস্ট।
কেএমপি জানায়, কেসিসি নির্বাচনের কাজে ৩ হাজার ৫৬৭ পুলিশ, ৩০০ আর্মড পুলিশ ও ৪ হাজার ৬৫৭ আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। ইতিমধ্যে নগরীতে ১৬টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। কেএমপি সদর দপ্তরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। এছাড়া বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা নির্বাচনের দিন সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ভোটার সংখ্যা, প্রার্থীর বাড়িসংলগ্ন কেন্দ্র, প্রভাব বিস্তার, যাতায়াতসহ বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) ভোটকেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিটি কেন্দ্রে ৭জন পুলিশ ও ১৭জন আনসার সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া সাধারণ কেন্দ্রে থাকবেন ৭ জন পুলিশ ও ১৫ জন করে আনসার সদস্য। তবে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে এটি কম-বেশি হতে পারে।
২ হাজার ৩১০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন
কেসিসি নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র ও ভোট কক্ষে স্থাপন করা হয়েছে ২ হাজার ৩১০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি)। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই সিসিটিভি বসানো হয়েছে। প্রতি বুথের সামনে ১টি ও কেন্দ্রের বাইরের অংশে ২টি করে সিসি ক্যামেরা থাকবে।
কেসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, এবারের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ২৮৯টি। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের সামনে একটি করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ৭৩২টি ভোট কক্ষের প্রতিটিতে একটি করে ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও খুলনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফারাজী বেনজীর আহম্মেদ বলেন, ইতিমধ্যে ইভিএম মেশিন খুলনায় এসেছে। ইভিএমসহ ভোটগ্রহণের সরঞ্জাম রোববার বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স থেকে ভোট কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হবে।
নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল গঠন
নির্বাচনী বিরোধ সংক্রান্ত দরখাস্ত/আপিল গ্রহণ, শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও নির্বাচনী আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। ৪ জুন কমিশন সচিবালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালন করবেন খুলনা সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ এবং নির্বাচনী আপিল ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালন করবেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত এবং খুলনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
ভোটের মাঠে ৩১ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
কেসিসির নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধ এবং নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন প্রতিরোধে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছেন ৩১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ২৬ মে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার পর থেকেই মাঠে নামেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। কেসিসির রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আচরণবিধি দেখভালের জন্য ৩১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১০ জন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতি তিনটি ওয়ার্ডে একজন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা নির্বাচনী এলাকা পর্যবেক্ষণ করবেন। যদি কোনো প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাধারণ ছুটি ঘোষণা
কেসিসি নির্বাচন উপলক্ষে সোমবার (১২ জুন) খুলনা মহানগরী এলাকায় ছুটি ঘোষণা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মোতাবেক ভোট গ্রহণের দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলো।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত
কেসিসি নির্বাচনে দুটি ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দুই আওয়ামী লীগ নেতা কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন, নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে এসএম খুরশিদ আহম্মেদ টোনা ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ।
এসএম খুরশিদ আহম্মেদ টোনা ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও জেড এ মাহমুদ ডন মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক।
জানা যায়, গত ১৬ মে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এছাড়া ঋণখেলাপির কারণে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মো. শমসের আলী মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। আপিলেও তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, এ দুটি ওয়ার্ডে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় দুজনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।
মেয়র ও কাউন্সিলরসহ প্রার্থী ১৮০
কেসিসি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ৫ জন, ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ১৩৬ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ৩৯ জনসহ ১৮০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মেয়র প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুদকার আব্দুল খালেক (নৌকা), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মাওলানা আব্দুল আউয়াল (হাতপাখা), জাতীয় পার্টির (জাপা) মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু (লাঙ্গল), জাকের পার্টির মেয়র প্রার্থী এস এম সাব্বির হোসেন (গোলাপ ফুল) ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান (টেবিল ঘড়ি)।
সাধারণ ওয়ার্ডে দুই নারী প্রার্থী
কেসিসি নির্বাচনে দুই নারী সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ছয় নারী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও শেষ মুহূর্তে চারজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। তারা হলেন, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের রোজিনা শেখ আয়শা ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদা বেগম।
মোট ভোটার ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন
কেসিসি নির্বাচনে মোট ভোটার ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন। এছাড়া নারী ভোটারের সংখ্যা হচ্ছে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন।
নতুন ভোটারে জয়-পরাজয়
কেসিসির নতুন ভোটার বেড়েছে ৪২ হাজার ৪৩৫জন। এই নতুন ভোটারদের ওপর নির্ভর করছে অনেকাংশে কেসিসির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের জয়-পরাজয়। নতুন এই ভোটারদের কথা মাথায় রেখেই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা খুলনা মহানগরীকে স্মার্ট নগরীতে পরিণত করার পাশাপাশি প্রচার-প্রচারণায় শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলাসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।