কৃতজ্ঞতা bbc bangla
কিছু দিন যাবৎ বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে সমুদ্রযাত্রায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ার ভিডিও ও ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যম এ নিয়ে বিস্তর সংবাদ প্রকাশ করেছে।
ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যাত্রার শুরুতে হাসিমুখে থাকা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ক্রিকেটাররা সমুদ্রের উঁচু ঢেউয়ের দুলুনিতে এক এক করে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
কেউ বমি করছেন, মাথা ধরে বসে আছেন, মেঝেতে শুয়ে পড়েছেন, সতীর্থরা মাথা মালিশ করে দিচ্ছেন।
টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর দুদিন আগে বিমানের বদলে সমুদ্রযাত্রা কেন সেনিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
মোশন সিকনেস কী ও কেন হয়?
জাহাজ, নৌকা, বিমানে চলাকালীন, গাড়ির গতি কিংবা দ্রুতগতিতে বারবার জায়গা পরিবর্তন, এমনকি ভবনের লিফটেও হতে পারে মোশন সিকনেস।
তবে সমুদ্রের ঢেউয়ের কারণে দুলুনি যদি অনেক বেশি হয় তাহলে অনেকেই মোশন সিকনেসে আক্রান্ত হন, যা সি-সিকনেস বলেও পরিচিত। এমনকি নিয়মিত সমুদ্রযাত্রায় অভ্যস্ত ব্যক্তিও এতে আক্রান্ত হতে পারেন।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা সংস্থা এনএইচএসের তথ্যমতে মানুষের শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে কাজ করে চোখ, কান, ঘাড়ের মাংসপেশী এবং মস্তিষ্ক।
কানের মধ্যাংশে অবস্থিত এক ধরনের তরল পদার্থ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শরীরের ভারসাম্যের জন্য এই সব অংশের মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়।
অনেক গতি, ঢেউয়ের দুলুনির সাথে চোখ ও কান সামঞ্জস্য রাখতে পারে না।
তখন এই অঙ্গ দুটি মস্তিষ্কে সঠিক বার্তা পাঠাতে পারে না এবং মস্তিষ্ক তাতে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে, শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়।
যার ফলে এই অসুস্থতা দেখা দেয়।
যা ঘটে শরীরে
জাতীয় নাক, কান, গলা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবু হানিফ বলছেন, “দেখবেন বাচ্চারা খেলার সময় অনেকেই একটানা ঘুরতে থাকে। এরপর সে যখন দাঁড়ায় তখন আর শরীরের ভারসাম্য থাকে না। সে হাঁটতে গিয়ে এদিক ওদিক চলে যায়, পড়ে যায়। কারণ কানের ভেতরে তরল পদার্থের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেছে, শরীরের ভারসাম্য ঠিক নেই। মোশন সিকনেস কিছুটা এরকম।”
তিনি বলছেন, মোশন সিকনেস হলে গা গুলিয়ে ওঠে, মাথা ঘুরায়, বমিবমি ভাব অথবা বমি হতে পারে। বেশি বমি হলে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায় এবং ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা) হয়।
অনেকের রক্তচাপ কমে যায়।
অনেক সময় শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কারণ এ সময় মানুষ ঘনঘন শ্বাস নেয় এবং শরীরে অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এরকম ব্যক্তিদের অক্সিজেন দেবারও প্রয়োজন পড়তে থাকে।
এছাড়া শরীর ঘামতে থাকে, ক্লান্তি বোধ ও মাথা ব্যথা হতে পারে।
ডা. হানিফ বলছেন, “মোশন সিকনেস খুব সাময়িক একটার ব্যাপার। সাধারণত চার ঘণ্টার বেশি এই অনুভূতি স্থায়ী হয় না। এরপর শরীরের ভারসাম্য ফিরে আসে। যদি ডিহাইড্রেশন হয় তাহলে প্রচুর পানি খেতে হবে। বিশ্রাম নিতে হবে। মোশন সিকনেসে ক্রিকেট খেলোয়াড়দের দুই দিন পরে কোন প্রভাব থাকার কোন কারণ নেই।”
এনএইচএস বলছে, যাত্রাপথে মোশন সিকনেস হলে হাঁটাহাঁটি, নড়াচড়া বন্ধ করে জাহাজ বা গাড়ির মাঝখানের অংশে গিয়ে বসুন অথবা শুয়ে পড়ুন
দ্রুত চলমান কিছুর দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিন, একটি নির্দিষ্ট কোন কিছুর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন।
চোখ বন্ধ করুন এবং ধীরে ধীরে নিশ্বাস নিন।
শরীরে হাওয়া বাতাস লাগতে দিন।
যাত্রা শুরুর আগে ভারি কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
চলমান অবস্থায় বই পড়া, ভিডিও দেখা বন্ধ করুন।
ভ্রমণের সময় পানি পান করুন, কিছুটা ঘুমিয়ে নিন, মাঝপথে বিরতি নিন।
বাহন যেদিকে যাচ্ছে তার উল্টোদিকে মুখ করে বসা উচিত নয়।
ভ্রমণের সময় যাদের মোশন সিকনেস হয় তাদের জন্য বাজারে ঔষধ পাওয়া যায়। ভ্রমণ শুরুর আগে তা খেয়ে নিন।
কানের পেছনে লাগানোর জন্য এক ধরনের প্যাচ পাওয়া যায়। সেটা লাগিয়ে নিতে পারেন।