মাহবুবা রহমান আঁখি ও তার নবজাতকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. সংযুক্তা সাহা। তবে তার এ সুনামকে পুঁজি করে সেন্ট্রাল হাসপাতাল আর্থিক লাভের চেষ্টায় বেআইনিভাবে কাজ করেছে বলে অভিযোগ করেন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পরিবাগের একটি ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডা. সংযুক্তা।
তিনি বলেন, প্রয়াত আঁখিকে ১০ জুন, সেন্টাল হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে আমার কোনো ধরনের মৌখিক বা লিখিত অনুমতি নেয়নি। এ সময় আমার উপস্থিতির বিষয়ে হাসপাতাল মিথ্যা তথ্য দিয়েছে যে, আমি বাংলাদেশে আছি। ডা. সংযুক্তা বলেন, আঁখি যখন হাসপাতালে আসে, তখন আমি দেশে ছিলাম না। আমার টিকিট ও বোর্ডিং পাস আমার কাছে আছে। আমি ভিডিও কলেও অপারেশন মনিটর করিনি। যা সবই মিথ্যা।
তিনি বলেন, এ ঘটনার আগ পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আমি ছিলাম গর্ব। আর আজ নিজেদের গাফিলতি লুকানোর জন্য আমার নামে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়াচ্ছে।
আঁখি ও তার নবজাতকের মৃত্যুর জন্য শোক প্রকাশ এবং বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে তিনি বলেন, নবজাতকের পিতার প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। আমাদের সবার জন্য এই অবহেলাজনিত মৃত্যু কাম্য নয়। এ সমস্যা এড়িয়ে না গিয়ে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসি। একটি স্বার্থান্বেষী মহল এ ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ও নিজেদের দোষ আড়াল করার জন্য সর্বপন্থা অবলম্বন করছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। ‘আমি একজন সন্তানের মা, চিকিৎসক এবং এদেশেরই লোক। দেশ ও সমাজের প্রতি যে দায়বদ্ধতা, তা নিয়েই আজ আমি সত্যতা তুলে ধরতে চাই। সেন্ট্রাল হাসপাতালে আমি ২০০৭ সাল থেকে কর্মরত। সেন্ট্রাল হাসপাতালে কোনো চিকিৎসকের অধীনে রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলি নেই।’
‘আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনিয়ম সাম্রাজ্য রক্ষার ক্ষেত্রে সহজ লক্ষ্যে পরিণত হয়ে গেছি। আমাদের আন্দোলন ছিল অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান করব না, নরমাল ডেলিভারিতে উৎবুদ্ধ করব। এটাই কি আমাদের অপরাধ?’
আঁখি তার নিয়মিত রোগী ছিলেন না বলেও দাবি করেন ডা. সংযুক্তা। তিনি বলেন, ঐ প্রসূতি কুমিল্লার একটি স্থানীয় হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়েছেন। এ বছরের মার্চে তিনি দুই বার সেন্ট্রাল হসপিটালে এসে আমাকে দেখিয়েছিলেন। নিয়মিত রোগী হতে হলে একজন গর্ভবতীর গর্ভাবস্থার শুরুতে প্রতি মাসে একবার এবং শেষের দিকে দুই সপ্তাহে একবার করে দেখাতে হয়।
আঁখি ও তার নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় নিজেকে ‘মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার’ বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সিজার (সি-সেকশন) রুটিনে পরিণত হয়েছে। আর আমার নরমাল ডেলিভারিতে যারাই ব্যাবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারাই আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশে সব প্রতিকূলতার বিপরীতে বিপুলসংখ্যক নবজাতক শিশুর সফল স্বাভাবিক প্রসবের জন্য বেশি পরিচিত।
আঁখির মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত এই চিকিৎসক আরো বলেন, ‘আমি বছরের পর বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম এবং কঠোর প্রচেষ্টার মাধ্যমে সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করেছি। তাছাড়া একজন মা প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে সি-সেকশন করালেও দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব, আমি এই অসম্ভবকে বাংলাদেশে বহুবার সক্ষম করেছি। অথচ অপ্রয়োজনীয় সি-সেকশনের বিরুদ্ধে আমার চলমান আন্দোলন আজ আমার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ স্বার্থান্বেষী মহলের লস অব বিজনেস (ব্যাবসায়িক ক্ষতি)। তাই আমি সর্বশেষে আপনাদের আহ্বান জানাব, আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা পরিশুদ্ধকরণের স্বার্থে অনিয়মের সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য এবং ওনাদের বোনা ষড়যন্ত্রের ধূম্রজালে আবদ্ধ না থাকার জন্য একবার নিরপেক্ষভাবে ভাবুন।’
যা বলেছিল সেন্ট্রাল হসপিটাল
এর আগে গত সোমবার সেন্ট্রাল হসপিটালের সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. এ টি এম নাজমুল ইসলাম আঁঁখির মৃত্যুর জন্য সংযুক্তা সাহাকে দায়ী করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে সংযুক্তা চলে গিয়েছিলেন। সেই কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে আছেন কী নেই, বিষয়টি যদি শুরুতেই পরিষ্কার করে দেওয়া হতো তাহলে বিষয়টি এ রকম হতো না। তিনি দেশে নেই জানলে রোগী হয়তো আমাদের হাসপাতালের অন্য সিনিয়র কনসালটেন্টের অধীনে ভর্তি হতেন, অথবা অন্য কোনো হাসপাতালে চলে যেতেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘সংযুক্তা সাহা ঐ দিন হাসপাতালে থাকবেন না সেটি তিনি আমাদেরও জানাননি। আমরা যদি জানতাম তিনি কর্মস্থলে নেই, তাহলে তার রোগীদের জন্য আমরা বিকল্প চিকিৎসকের ব্যবস্থা রাখতাম। তাই আমরা মনে করি, এটি তার জন্যই হয়েছে। এমনকি যারা রোগীদের সংযুক্তার দেশে থাকার বিষয়ে ইনফরমেশন দিয়েছিলেন তারা হাসপাতালের স্টাফ নন, পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট।’