ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (আইএবি) দলীয় সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পিরসাহেব চরমোনাই। তিনি বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক নয়, নিবন্ধিত সব দলের সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। সেই সরকারের প্রধান হবেন আপিল বিভাগের একজন সৎ ও গ্রহণযোগ্য বিচারপতি। জাতীয় সরকার গঠনের পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভেঙে দিয়ে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলিস্তানে ইম্পেরিয়াল কনভেনশন সেন্টারে ‘রাজনৈতিক সংকট উত্তরণ এবং একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগ বাদে নিবন্ধিত অধিকাংশ দলকে আমন্ত্রণ জানায় ইসলামী আন্দোলন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে তারা যাননি। বিএনপির পক্ষে দলটির ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্যাহ বুলু ও যুগ্ম-মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল মতবিনিময়ে অংশ নেন। জাপার কেউ না গেলেও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ্ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন। জামায়াতে ইসলামীকে দলীয়ভাবে আমন্ত্রণ জানানো না হলেও দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য খলিলুর রহমান মাদানিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়, তিনি এতে যোগ দেন। মতবিনিময় সভায় বিএনপি নেতারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলে ধরেন। তবে, চরমোনাই পির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, বিশেষ প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। ঐ নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে বিএনপিও কারচুপির অভিযোগ তোলে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ হয় না।
ইসলামী আন্দোলনের প্রস্তাবিত জাতীয় সরকারের একটি রূপরেখা তুলে ধরে চরমোনাই পির রেজাউল করীম বলেন, আপিল বিভাগের একজন বিজ্ঞ, সত্ ও গ্রহণযোগ্য বিচারপতিকে প্রধান করে নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সরকার গঠিত হবে। যারা জাতীয় সরকারে থাকবেন, তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। বর্তমান মন্ত্রিসভার কেউ নির্বাচনকালীন সরকারে থাকতে পারবেন না। তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচনের আয়োজন এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
চরমোনাই পির বলেন, বিদ্যামান সংকট নিরসনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই। আর জাতীয় সরকার ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। যা দেশের জনগণের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনতে পারে এবং দেশে আরো একবার সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে আয়োজনের পাঁয়তারা চলছে। মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানোর চেষ্টা চলছে। আগেও বলেছি, এখনো বলছি দলীয় সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনেই ইসলামী আন্দোলন অংশ নেবে না।
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে যোগ দেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, মুসলিম লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুল ইসলাম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, খেলাফতে রব্বানী পার্টির চেয়ারম্যান মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আবদুল লতিফ মাসুম ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ।