ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশির রেশ। মুসলমানদের বছরে দুটি বড় ধর্মীয় উৎসবের একটি হলো কোরবানির ঈদ। কোরবানির ঈদের আনন্দটা একটু ভিন্ন রকমের। এই ঈদের খুশি একটু আলাদা রকমের হওয়ার কারণ নিশ্চয়ই আমরা সবাই জানি। এই ঈদে আনন্দ ভাগাভাগি হয়। কোরবানির ঈদের আরো একটি বিশেষত্ব হলো এই ঈদে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বিশেষ করে খাবারের প্রশ্নে কোনো ভেদাভেদ থাকে না! একজন অর্থবিত্ত তথা সমৃদ্ধশালী ব্যক্তি যে খাবার খান, একজন হতদরিদ্র দিনমজুর ভিক্ষুকও সেই ধরনের খাবার খান বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। এর মধ্য দিয়ে মুসলিম সমাজে অন্তত এক দিনের জন্য হলেও খাবারের প্রশ্নে সমতা লক্ষ করা যায়, তথা সাম্য চেতনার প্রতিফলন ঘটে। সবচেয়ে উপভোগ্য হলো পশু কোরবানি। মানুষ হাটে গিয়ে পছন্দমতো পশু কেনে। হাটে পশু কিনতে যাওয়া যেন একটা উৎসবে পরিণত হয়।
কোরবানিতে গ্রামের মানুষ বেশির ভাগ সময় নিজের বাসায় পশু পালন করে কোরবানি করে। নিজের বাসায় লালন-পালন করা পশুর প্রতি স্বভাবতই মানুষের একটু মায়া জন্মে। কিন্তু সেই মায়া, সেই ভালোবাসা স্রষ্টার নির্দেশের কাছে কোরবানি হয়ে যায়। পশুর প্রতি মায়াকে তুচ্ছ করে তাকে স্রষ্টার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করার মাধ্যমে স্রষ্টার আনুকূল্য পেতে চাই আমরা।
যা হোক, কোরবানি করলে স্রষ্টা সন্তুষ্ট হবেন ঠিকই, পাশাপাশি কোরবানির সঙ্গে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হলে বোধহয় স্রষ্টা আরো বেশি খুশি হবেন! কারণ, মুসলিম ধর্মে বলা হয়েছে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হলো ইমানের অঙ্গ। মনে রাখতে হবে, বিশ্বে মুসলিম ধর্মের অনুসারীর দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। বাংলাদেশের মুসলিম জনসংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক থেকে ভারতের পরের স্থানে রয়েছে। এই বিশাল জনসংখ্যার জন্য এ বছর কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। এক দিনে এতগুলো পশু কোরবানি হবে সারা দেশে। অর্থাত্, কোরবানির পর পরিবেশদূষণের বিষয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়! দুঃখজনকভাবে, প্রতি বছর কোরবানির পরে যে পরিবেশদূষণ ঘটে, তা নিয়ে আমরা খুব বেশি সচেতন বলে মনে হয় না। পরিবেশ নিয়ে আসলেই মানুষের তেমন কোনো আগ্রহ নেই! ফি বছর কোরবানির ঈদে আমরা দেখি, পশু কোরবানির পরে পশুর রক্ত খোলা স্থানে অনেকেই রেখে দেয়। এটা ঈদের আনন্দের মধ্যে বিষাদের বিষয় যেন! কোরবানির পশুর রক্ত রাস্তাঘাটে পড়ে থাকলে প্রচুর দুর্গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এতে করে ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে পড়ে। মানুষ হিসেবে যেমন আমাদের কোরবানির ঈদে পশু কোরবানি করা একটা ধর্মীয় অধিকার, তেমনি পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকা পরিবেশকে সুস্থ রাখা আমাদের কর্তব্য। যদিও কয়েক বছর ধরে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোরবানির জন্য যায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। আশা করা যাচ্ছে, প্রতি বছরের মতো এ বছরও জনগণ নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি করবে। পাশাপাশি পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করতে পরিবেশবিদ ও সচেতন মহল এগিয়ে আসবে। কোরবানির পশুর রক্ত উচ্ছিষ্ট নাড়িভুঁড়ি, চামড়া যেখানে-সেখানে না ফেলে কাজ শেষে নির্দিষ্ট স্থানে মাটি চাপা দিতে উদ্যোগী হবে। এতে করে আমরা একটি স্বাস্থ্যকর দুর্গন্ধমুক্ত পরিবেশের মধ্যে দিয়ে ঈদের আনন্দ উৎযাপন করতে পারব। আসুন, সবাই এ বিষয়ে সচেতন হই।