ফ্রান্সভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন “জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ইন ফ্রান্স” (জেএমবিএফ) সংগঠণ ১৭ মে ২০২৫ প্রকাশিত তাদের রিপর্টে বলেছে, অন্তবর্তী সরকারের সময়ে বাংলাদেশে সমকামী ও এলজিবিটিকিউআই+ জনগোষ্ঠীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য আশঙ্কাজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক হোমোফোবিয়া, ট্রান্সফোবিয়া ও বাইফোবিয়া বিরোধী দিবস (IDAHOT) উপলক্ষে প্যারিস থেকে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি ‘বাংলাদেশের বার্ষিক সমকামী অধিকার প্রতিবেদন ২০২৪’ প্রকাশ করে।
আরও পড়ুন -‘পরিকল্পিত ভাবে নির্বাচন পিছোনোর চক্রান্ত চলছে’, ইউনূসকে নিশানা বিএনপি মহাসচিব ফখরুলের
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে অন্তত ৭০টি ঘটনায় ৩৯৬ জন এলজিবিটিকিউআই+ ব্যক্তি সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে হত্যা, শারীরিক নির্যাতন, আত্মহত্যা, পুলিশি হয়রানি, গ্রেপ্তার, চাকরিচ্যুতি, বসতবাড়ি লুটপাটসহ নানা ধরনের নিপীড়ন।
জেএমবিএফ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশের মানবাধিকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহানূর ইসলাম সৈকত বলেন, “বর্তমান প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তীকালীন সরকার অন্তর্ভুক্তি ও মানবাধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ক্ষমতায় এলেও বাংলাদেশে যৌন সংখ্যালঘুদের ওপর নিরবচ্ছিন্ন সহিংসতা ও সামাজিক বর্জন গভীর উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। রাষ্ট্র যদি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়, তা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।”
আরও পড়ুন - নিষিদ্ধ করায় ফ্লোরিডায় আওয়ামী লীগ এর বিক্ষোভ সমাবেশ
সংস্থাটির প্রধান উপদেষ্টা ও ফরাসি অধিকারকর্মী রবার্ট সাইমন বলেন, “এই প্রতিবেদন কেবল একটি দলিল নয়, এটি একটি জোরালো বার্তা—যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের যৌন সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার রক্ষায় উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানাচ্ছে।
”জেএমবিএফ জানিয়েছে, ২০২২ সালে ৫১টি ঘটনায় ২০৪ জন, ২০২৩ সালে ৫৬টি ঘটনায় ২১৯ জন এবং ২০২৪ সালে ৭০টি ঘটনায় ৩৯৬ জন সহিংসতার শিকার হন। এর মধ্যে ২০২৪ সালে ৫ জন ট্রান্সজেন্ডার নারীকে হত্যা করা হয়েছে এবং ১০ জন এলজিবিটিকিউআই+ ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন। তাছাড়া, ১২০ জন হিজড়া সম্প্রদায়ের ব্যক্তির বাড়িঘরে হামলা ও লুটতরাজ এবং অন্তত ৪ জন সমকামী শিক্ষককে শুধুমাত্র যৌন প্রবৃত্তির কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে সর্বাধিক সহিংসতা ঘটেছে—৩১টি ঘটনায় ২৩৮ জন ভুক্তভোগী। এরপর রংপুরে ৮৬ জন, সিলেটে ৩৪ জন, চট্টগ্রামে ১১ জন, রাজশাহীতে ৫ জন এবং ময়মনসিংহে ৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ৩৯৬ জন ভুক্তভোগীর মধ্যে ২৭০ জন ট্রান্সজেন্ডার, ১১২ জন গে, ২৩ জন লেসবিয়ান নারী, একজন বাইসেক্সুয়াল এবং একজন ইন্টারসেক্স ব্যক্তি সহিংসতার শিকার হন।
হিউম্যান রাইটস বলেছে সহিংসতার প্রধান উৎস হিসেবে ইসলামি মৌলবাদী গোষ্ঠী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং হিজড়া সম্প্রদায়ের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে চিহ্নিত করা হয়েছে। শুধু মৌলবাদী গোষ্ঠীর হাতেই ১৪টি ঘটনায় ২৩৪ জন আক্রান্ত হন। ৭০টি ঘটনার মধ্যে মাত্র ১৩টিতে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে এবং মাত্র ৬টি মামলায় ২২ জন অপরাধী গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকি ৫৭টি ঘটনায় কেউই আইনি প্রতিকার পাননি।
প্রতিবেদনে দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা বাতিল, বৈষম্যবিরোধী আইন প্রণয়ন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ, সহিংসতার শিকারদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় ও সেবা, এবং গণমাধ্যমে ইতিবাচক উপস্থাপনাসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ রাখা হয়েছে। জেএমবিএফ আশা প্রকাশ করেছে, প্রতিবেদনটি সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের এলজিবিটিকিউআই+ সম্প্রদায়ের মানবাধিকার রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করবে।