ড. ইউনূস বিতর্ক: বাংলাদেশের কূটনীতিতে এক নতুন ঝড়
মিথ্যা দাবির পর ব্রিটেন-আমেরিকার কঠোর বার্তা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় টানাপোড়েন
২০২৫ সালের জুন মাসের শুরুতে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে একটি খবর ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। বলা হয়, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের আমন্ত্রণে ডাউনিং স্ট্রিটে বৈঠকে অংশ নেওয়ার জন্য ডাকা হয়েছে। ড. ইউনূসের ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে এই তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তা দেশ ও বিদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। চ্যানেল আই, যমুনা টিভি, দেশ টিভি, ইউটিউবভিত্তিক সংবাদমাধ্যমসহ বেশ কয়েকটি মাধ্যম বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করে।
(সূত্র: Channel i, Jamuna TV, The Print, Mirror Asia, ১১ জুন ২০২৫)
ক্ষেপণাস্ত্রসহ আকাশপথে ইরানকে সহায়তা করছে চীন-রাশিয়া
তবে দ্রুতই এই খবরের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। ১২ জুন ২০২৫ তারিখে বিবিসিকে দেওয়া এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের মুখপাত্র স্পষ্ট জানিয়ে দেন:
“ড. ইউনূসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কোনো বৈঠক নির্ধারিত হয়নি। এমন কোনো আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়নি।”
(সূত্র: BBC UK News, ১২ জুন ২০২৫; Downing Street Press Office)
পরবর্তীতে ড. ইউনূস এর পিআর টিম দাবি করে, বৈঠকটি স্থগিত হয়েছে কারণ প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে রয়েছেন। তাঁদের দাবি ছিল, প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার ওই সময় কানাডা সফরে ছিলেন। তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অফিসিয়াল ক্যালেন্ডার, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য ইনডিপেনডেন্টসহ প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলো নিশ্চিত করে জানায় — স্যার স্টারমার লন্ডনেই অবস্থান করছিলেন; কোনো কানাডা সফরের রেকর্ড পাওয়া যায়নি।
(সূত্র: The Guardian UK, ১৩ জুন ২০২৫; The Independent, ১৩ জুন ২০২৫; UK PM Official Calendar)
এই বিভ্রান্তি কেবল ব্রিটেনেই নয়, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও কূটনৈতিক অস্বস্তির সৃষ্টি করে। ১৪ জুন ২০২৫ লন্ডনের চ্যাথাম হাউজে অনুষ্ঠিত এক কূটনৈতিক আলোচনায় যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা মন্তব্য করেন:
“এ ধরনের ভুল তথ্য আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক শিষ্টাচারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”
(সূত্র: Chatham House Diplomatic Conference, ১৪ জুন ২০২৫)
বাংলাদেশ শ্রীলংকা পাকিস্তানের পথে?
১৫ জুন ২০২৫ পর্যন্ত ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সরাসরি বাংলাদেশ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে হিউম্যান রাইটস পিটিশন কমিটিতে বাংলাদেশ সংক্রান্ত একটি আবেদন জমা পড়ে।
(সূত্র: UK Parliament Petitions Committee, ১৫ জুন ২০২৫)
যুক্তরাষ্ট্রেও বিষয়টি আলোচনা সৃষ্টি করে। ১৫ জুন ২০২৫ তারিখে স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন:
“বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পশ্চাৎগমন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংকট এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে USAID-এর অর্থায়ন পুনর্মূল্যায়নের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।”
(সূত্র: U.S. State Department Briefing, ১৫ জুন ২০২৫)
তবে, ১৫ জুন ২০২৫ পর্যন্ত মার্কিন কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিষয়ক সাবকমিটির শুনানি অথবা যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (FCDO)-এর অভ্যন্তরীণ পুনর্মূল্যায়ন বিষয়ে কোনো অফিসিয়াল ঘোষণা বা নথি প্রকাশিত হয়নি।
(সূত্র: Congress.gov; FCDO Official Statements, ১৫ জুন ২০২৫ পর্যন্ত)
এই পুরো পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের নামও আলোচনায় আসে। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তারেক রহমানের সঙ্গে ড. ইউনূসের ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি নিয়েও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মাধ্যমে আলোচনা হয়।
(সূত্র: The Economist, জুন ২০২৫; Politico EU, জুন ২০২৫)
বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ড. হেনরি ম্যাকডোনাল্ড মন্তব্য করেন:
“যখন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে, তখন এ ধরনের বিভ্রান্তি আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।”
(সূত্র: Chatham House Policy Paper, ১৪ জুন ২০২৫)
অতএব, এই সমগ্র প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ নতুন এক কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।