বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ ১৭ বছর নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে শিগগিরই দেশে ফিরতে যাচ্ছেন।
যুক্তরাজ্য বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে ৫ আগষ্টের পূর্বেই তিনি দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অন্য আরেকটি সূত্র থেকে জানা গেছে জাতীয় নির্বাচনের দিন তারিখ ঠিক হলেই তিনি দেশে যাবেন। গেল ১৩জুন লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে বৈঠক হয় অন্তবর্তিকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের। উভয়ের আলোচনা শেষে জানানো হয় ২০২৬ সালে ফেব্রুয়ারীতে নির্বাচন করা যেতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশন এখনও নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরী করেনি।
এই ধরনের মূর্খ উপদেষ্টা দেশের ইতিহাসে কেউ কোনোদিন দেখেনি: ইশরাক
তার দেশে ফেরাকে সামনে রেখে ঢাকায় বাড়ীও প্রস্তুত করা হচ্ছে। গুলশান-২-এর অ্যাভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর ডুপ্লেক্স বাড়িতে তার থাকার সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। দেড় বিঘা জমির ওপর নির্মিত এই ছায়াঘেরা বাড়িটি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মালিকানাধীন, যা সম্প্রতি তারেক রহমানের নামে নামজারি করা হয়।
এই বাড়িটি এক সময় ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করত ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ, তবে ছয় মাস আগে কোম্পানিটি তা ছেড়ে দেয়। এরপর থেকে বাড়িটির অভ্যন্তর ও বাহ্যিক পরিবেশ তারেক রহমানের থাকার উপযোগী করে সাজানো হয়েছে। বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাড়ির সাজসজ্জার কাজ শেষ হয়েছে এবং এটি এখন পুরোপুরি বসবাসযোগ্য।
এখানে উল্লেখ্য যে ১৯৮১ সালে তারেক রহমানের পিতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মাত্র এক টাকার বিনিময়ে এই বাড়িটি বরাদ্দ দেয় এরশাদ সরকার। এটি গুলশানে তার বর্তমান বাসভবন ‘ফিরোজা’র পাশেই অবস্থিত। উল্লেখ্য এর বাইরে ঢাকা সেনানিবাসের ভেতরও আরেকটি বাড়ি খালেদা জিয়াকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল এরশাদ আমলে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সেনানিবাসের ওই বাড়ির বরাদ্দ বাতিল করে খালেদা জিয়াকে বাড়ী থেকে বের করে দেওয়া হয়।
ড. ইউনূস বিতর্কে বাংলাদেশের কূটনীতিতে নতুন ঝড়
বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী নিশ্চিত করেছেন, নির্বাচন ঘনিয়ে এলে এবং তার তারিখ সুনির্দিষ্ট হলে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। ইতিমধ্যে তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানও লন্ডনে ফেরার আগে বাড়িটি ঘুরে দেখে গেছেন।
১৯৬ নম্বর বাড়িটি সাদা রঙের দোতলা ছায়াঘেরা বাড়িটির বহিরাঙ্গন বেশ পরিপাটি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বাড়ির ভেতরটাও অত্যন্ত নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাড়ির বাউন্ডারির ওপরের অংশ বাড়তি লোহার অংশ ব্যবহার করা হয়েছে। জানা গেছে, আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এ ভবনে রয়েছে তিনটি শয়নকক্ষ, একটি বিশাল ড্রয়িং ও লিভিং রুম এবং একটি সুইমিং পুল।
ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করে ফখর-উদ্দিন মইনউদ্দিনের সরকার। পরের বছর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডন আসেন তিনি। তখন থেকেই লন্ডনে অবস্থান করছেন তারেক রহমান।
লন্ডনে থাকাকালে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মা খালেদা জিয়া দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন ‘সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান’ তারেক রহমান। এরপর লন্ডন থেকেই দল পরিচালনা করছেন তিনি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে পাঁচ মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়। দায়ের করা হয় প্রায় শতাধিক মামলা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একে একে সাজাপ্রাপ্ত সব মামলায় খালাস পান তিনি। একই প্রক্রিয়ায় অন্য সব মামলা থেকেও মুক্ত হন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা নেই।
এমন অবস্থায় বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন তারেক রহমানের দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। তার ফেরা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে যথেষ্ট কৌতূহলও আছে। সবার প্রত্যাশা, তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরছেন। গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা চলছে যে, তিনি আগামী ৫ আগস্টের আগেই দেশে ফিরতে পারেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সম্প্রতি জানিয়েছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথে আর কোনো আইনি বা প্রশাসনিক বাধা নেই।
জানা গেছে, রাজধানীর গুলশান অ্যাভিনিউর ১৯৬ নম্বর প্লটে অবস্থিত খালেদা জিয়ার নামে বরাদ্দপ্রাপ্ত বাড়িটির কাগজপত্র তার হাতে তুলে দেওয়া হয় গত ৪ জুন। ওই দিন রাত ৯টার দিকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বেগম জিয়ার হাতে এই কাগজ হস্তান্তর করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম রিজু। বেগম জিয়ার নামে বাড়িটি বরাদ্দ হলেও এখন নামজারি করা হয়েছে তারেক রহমানের নামে।