ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ ও সদস্য পদ নবায়ন কর্মসূচি থমকে গেছে। দলের নেতাকর্মী, সমর্থক, সরকারের কোটি উপকারভোগীকে সদস্য করার লক্ষ্য নিয়ে গত এপ্রিলে এ কর্মসূচি শুরু করেছিল দলটি। কেন্দ্রীয় নেতাদের আন্তরিকতার ঘাটতি, তৃণমূলের অনাগ্রহের কারণে এ কর্মসূচি স্থবির হয়ে গেছে বলে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। তবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন, বন্যা ও ঈদের কারণে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি গতি হারিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, গত ২ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেশব্যাপী সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেখানে তিনি বলেছিলেন, দলের জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সদস্য সংগ্রহ ও সদস্য নবায়ন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এ ছাড়া ২০২৩ সালের ডিসেম্বর বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংসদ নির্বাচন ও দলের জাতীয় সম্মেলন—এ দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ।
কেন্দ্রীয় নেতারা সে সময়ে বেশ গুরুত্ব দিয়ে দলের প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি শুরু করলেও পরে সেভাবে এগোয়নি। সারা দেশে দলটির ৭৮ সাংগঠনিক জেলা ও প্রায় ৬৫০ উপজেলা পর্যায়ের কমিটির মধ্যে মাত্র তিন জেলা ও ১০টির মতো উপজেলায় সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি শুরু হয়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আসলে ঈদ, বন্যাসহ নানা বাস্তবতায় আমাদের কাজ করতে হয়েছে। এগুলোর বিষয়ে তো আর জোর করা যায় না। তবে আমরা আশাবাদী, পরিকল্পনা অনুসারেই আমাদের সাংগঠনিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এবার তো দলের সদস্যসংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগেই আমরা সংগঠন গুছিয়ে ফেলব। ’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আসলে দলের কাজে আমাদের অনেকেরই আগ্রহ কম। নেত্রী (শেখ হাসিনা) যখন তাগিদ দেন তখন কিছুদিন দৌড়ঝাঁপ হয়, এরপর আবার যে যার কাজে ব্যস্ত। ক্ষমতায় থাকার সুবিধা নিয়ে আমরা দল গোছাতে পারছি না। ’
এরই মধ্যে অবশ্য দলের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রমে গুরুত্ব দিতে নেতাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শনিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর যৌথ সভায় দলীয় প্রধান এই নির্দেশ দেন।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, ১৬ এপ্রিল ভোলা, ২১ মে ঝালকাঠি এবং ২৫ মে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। ২২ মে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা, ২৮ মে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা, ২ জুলাই কক্সবাজার পৌর শাখা আওয়ামী লীগ সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম শুরু করে। এর বাইরে আরো দু-তিনটি উপজেলায় সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন চলছে।
ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, জেলায় অন্তত এক লাখ নতুন সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ৫৪ হাজার সদস্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তরুণ কর্মকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঝালকাঠি সদর ও নলছিটি উপজেলায় আমাদের সদস্য সংগ্রহ চলছে। দুই উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে ১৮০টি ওয়ার্ড রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত ৩০০ করে সদস্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ’
এদিকে আগস্ট মাসজুড়ে জাতীয় শোক দিবসের ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত থাকবে আওয়ামী লীগ। ফলে আগামী সেপ্টেম্বরে পুরো উদ্যমে দলের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কাজ শুরু করার কথা ভাবছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধন, ঈদের কারণে আমাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড অনেকটা কম হয়েছে। এবার হয়তো আগস্ট মাসেও সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মকাণ্ড এবং দলের সম্মেলন করতে হবে। না হলে তো জাতীয় সম্মেলনের আগে ঢাকা বিভাগের তৃণমূলের সম্মেলনের কাজ শেষ করা যাবে না। ’
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, এবার সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় উপকারভোগীদেরও দলের প্রাথমিক সদস্য করার লক্ষ্য নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এটি করা সম্ভব হলে প্রায় এক কোটি উপকারভোগী দলের সদস্য হবেন। এ ছাড়া অন্য দলের কর্মী ও সমর্থকদের আওয়ামী লীগের সদস্য না করার কঠোর অবস্থান থেকেও সরে এসেছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। ফলে এবারে বিভিন্ন দলের কর্মী ও সমর্থকরাও আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারবেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি চলমান রয়েছে। কোথাও হয়তো সাংগঠনিক অন্য কাজের চাপ থাকায় সেভাবে এ কর্মসূচি গতি পায়নি। তবে সামনে এ কর্মসূূচি আরো জোরদার করা হবে। ’