আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, “ঢাকায় বসে বসে কেউ টকশোতে বক্তৃতা দিচ্ছেন। আর ঢাকার নয়াপল্টনে কিংবা ঢাকা প্রেস ক্লাবের সামনে সরকারের বিরুদ্ধে অনেকে বিষোদগার করছেন কিন্তু বন্যার্তদের সাহায্য করার জন্য কেউ ঝাঁপিয়ে পড়েনি। ঝাঁপিয়ে পড়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।”
তিনি বলেন, “সিলেটসহ দেশের কয়েকটি এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় প্রশাসনের পাশাপাশি ঝাঁপিয়ে পড়েছে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের নেতাকর্মীরা বন্যার্তদের পাশে নেই।”
আজ শনিবার (১৮ জুন) বিকেলে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার অ্যাডভোকেট নুরুচ্ছফা তালুকদার অডিটরিয়ামে উপজেলার স্কুল ও কলেজ শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।
পদ্মা সেতু নিয়ে মন্ত্রী বলেন, “কেউ ভাবেনি কখনো নিজের টাকায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারবে। পরে যখন আমরা পদ্মাসেতু নির্মাণ শুরু করে দিয়েছি, বিশ্বব্যাংক কানাডার আদালতে অভিযোগ করেছিল কিন্তু কানাডার আদালতে তাদের অভিযোগ ভুয়া, মনগড়া এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল বলে প্রমাণিত হলো। কানাডার আদালত রায় দিল, সেখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি, দুর্নীতির চেষ্টাও হয়নি। তাদের দায়ের করা মামলায় তারা হেরে গেছে। এরপর তারা প্রস্তাব দিয়েছিল পদ্মাসেতুতে তারা অর্থায়ন করতে চায়। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন আমার বিশ্বব্যাংকের অর্থ দরকার নাই।”
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, “আজকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বমোড়লদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজের টাকায় পদ্মাসেতু করে দেখিয়ে দিয়েছেন। আমাদের দেশের কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী বলেছিল এমনকি একটি বড় পত্রিকায় হেডিং হয়েছিল এই সরকারের আমলে পদ্মাসেতু আর হচ্ছে না। ডক্টর ইউনুসও বলেছিলেন, আমি উনার প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে বলতে চাই, সত্যটা হচ্ছে বিশ্বব্যাংক যাতে পদ্মাসেতু থেকে সরে যায়, সেজন্য এই ষড়যন্ত্রের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। একইভাবে টিআইবি, সিপিডি আরো অনেকে বলেছিল পদ্মা সেতু হবে না। কিন্তু মাননীয় প্রধামন্ত্রী দেখিয়ে দিয়েছেন, নিজের টাকায় পদ্মাসেতু হয়।”
শিক্ষকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে শুধু বস্তুগত উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে উন্নত করা নয়। আমরা চাই, মেধা, মূল্যবোধ, দেশত্ববোধ, মমত্ববোধের সমন্বয় ঘটিয়ে একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি করতে। মানবিকতার বিকাশ ঘটিয়ে, মেধার সাথে মূল্যবোধ, দেশত্ববোধ ও মমত্ববোধের সমন্বয় ঘটিয়ে যদি একটি উন্নত জাতি ঘটন করতে পারি তবে তা পৃথিবীর সামনে একটি উদাহরণ হবে। আজ থেকে ১০/২০ বছর পরে আমরাই যেন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হই পৃথিবীর সামনে সেজন্য শিক্ষকদেরকে অনুরোধ জানাবো পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ, দেশত্ববোধ, মমত্ববোধ এবং একইসাথে গুরুজনের প্রতি দায়িত্ববোধ শেখাতে হবে।”
রাঙ্গুনিয়াবাসীর প্রতি মন্ত্রী বলেন, “আমি গত সাড়ে ১৩ বছর ধরে রাঙ্গুনিয়ার সবার জন্য আমার দরজা খোলা রেখেছি। কে আমাকে ভোট দিয়েছে কিংবা দেয়নি তা কখনো দেখিনি। কে আওয়ামী লীগ করেছে কিংবা করেনি তা কখনো জিজ্ঞেস করিনি। আমার বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন করেছে এমন অনেকের চাকরি আমার হাত ধরে হয়েছে। আমি চেষ্টা করেছি সব মানুষের কথা রাখতে। তাই আমি যদি আপনাদের দরজায় যাই, আপনাদের দরজাটিও আমার জন্য খোলা রাখবেন।”
রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মুহাম্মদ আবদুল মাবুদের সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির প্রাক্তন সভাপতি অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী, রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ একেএম সুজা উদ্দিন, শিক্ষক শিলা দাশ গুপ্তা, নির্মল কান্তি দাশ, নুরুল আবছার, মিজানুর রহমান প্রমুখ।
এর আগে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদের বিশেষ সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।
এসময় তিনি রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রধান ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।
সভা সঞ্চালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গণি ওসমানী।