গত কয়েক দিনে সোশ্যাল মিডিয়ায়, ইলেকট্রিক-প্রিন্ট মিডিয়ায় ‘চ্যাটজিপিটি’ শব্দটি নিয়ে এত বেশি আলোচিত হয়েছে যে, শব্দটিকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই-এর এই প্রযুক্তিটিকে ঘিরে এখন বেশ কিছু প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। যেগুলোর সারকথা হচ্ছে, চ্যাটজিপিটি আগামীর বিশ্বকে কতটুকু সহজ কিংবা গরল করে তুলবে। এই বিচারে পূর্ববর্তী সব এআই মডেলকে বহুগুণে ছাড়িয়ে গেছে চ্যাটজিপিটি। তাকে যে কোনো বিদ্যার যে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করলে খুব অনায়াসে গুছিয়ে উত্তর দিতে পারছে। যেন সে ঐ বিষয়ের বড় কোনো বিশারদ! মূলত এখান থেকেই তৈরি হচ্ছে কিছু শঙ্কা। এই গুঞ্জন যে একেবারেই অমূলক, তা কিন্তু নয়; তবে পুরোটাই যে যৌক্তিক, এমনটাও নয়। চ্যাটজিপিটিকে যদি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুকরণে একটি কবিতা লিখতে বলা হয়, তবে সে তার পূর্বে ট্রেইন ডেটা বিশ্লেষণ করে খুব দারুণভাবে অবিকল রবীন্দ্রনাথের অনুকরণে একটি কবিতা লিখে দেবে। আপাতদৃষ্টিতে যা পরখ করা কঠিনই বটে! তবে রবীন্দ্রনাথের আপেক্ষিক নকল করতে পারলেও শত বছর সাধনা করেও চ্যাটজিপিটি আর একটি রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টি করতে পারবে না। এ কথা বলার উদ্দেশ্য হলো, চ্যাটজিপিটি তথা এআই মডেলের নিজস্ব কোনো সৃজনশীলতা নেই, ট্রেইন ডেটার বাইরে নতুন কিছু তৈরি করার ক্ষমতা তার নেই। বরং সে মানুষের মস্তিষ্কনিঃসৃত সৃজনশীলতাকে ভাঙিয়েচুরিয়ে কিছু নতুন রূপ দাঁড় করাতে পারে মাত্র। একে সৃষ্টিশীলতা বলা যায় না।
গুগল সার্চ ইঞ্জিনে আমরা কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে গুগল তার তথ্যভান্ডার হাতড়ে কিছু রেফারেন্স তুলে ধরে। ক্ষেত্রবিশেষে উত্তর সম্পর্কে নিজস্ব কিছু মন্তব্যও তুলে ধরে। তবে তার মানদণ্ড নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ থেকে যায়। অন্যদিকে চ্যাটজিটিপিকে কোনো প্রশ্ন করলে, সে রেফারেন্স বিশ্লেষণ করে একজন বুদ্ধিমান মানুষের মতো যথাযথ উত্তর প্রদান করে। এখানেই বাজিমাত করে ফেলেছে চ্যাটজিপিটি। গণিত, চিকিৎসাবিদ্যা, প্রোগ্রামিংসহ ভাইটাল বিষয়সমূহে ইতিমধ্যে যে পাণ্ডিত্য দেখিয়েছে চ্যাটজিপিটি, তাতে আগামীর দিনে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা যে কতটুকু সুগম হবে তা সহজে অনুমেয়। তবে এত সম্ভাবনার মধ্যেও কিছু উদ্বেগের কথা আছে। চ্যাটজিটিপির কোনো স্বকীয়তা না থাকলেও মানুষ তাকে দিয়ে অন্যায় কাজ করিয়ে নিতে পারে! যেগুলো অবশ্যই ক্রাইমের অন্তর্ভুক্ত। বিজ্ঞানের প্রত্যেক আবিষ্কারের যেমন সুফল থাকে, তেমনি থাকে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা বা ক্ষতিকর দিক। চ্যাটজিপিটি নিঃসন্দেহে আগামী বিশ্বের জন্য এক শুভ বার্তার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে এর পাশাপাশি যে সীমাবদ্ধতা বা আশঙ্কার দিকগুলো উন্মোচিত হয়েছে, তার সমাধানে প্রচেষ্টা চালানো দরকার। বিশেষ করে, আমাদের শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটির সহায়তা নিয়ে যে অপরাধগুলো সৃষ্টি হবে, যথাযথ মূল্যায়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যে পরিস্থিতি তৈরি হবে, তা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। যে মানুষ চ্যাটজিপিটিকে তৈরি করতে পারে, তার পক্ষে চ্যাটজিপিটি দিয়ে সংঘটিত ক্রাইমকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলাও তো অসম্ভব কিছু নয়। সুতরাং, চ্যাটজিপিটির ঢেউ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।