আগামীকাল শনিবার ঢাকার মহাসমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য যশোর বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী এরইমধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছেন। তবে এবারের মহাসমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য তারা ভিন্ন কৌশল নিয়েছেন। নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, এককভাবে বা দু-তিনজন মিলে বাস বা ট্রেনে পৃথকভাবে ঢাকা যাচ্ছেন তারা। অনেকে ইতিমধ্যে ঢাকায় পৌঁছে আত্মীয়-স্বজনের বাসাবাড়ি বা হোটেলে উঠেছেন।
সূত্রে জানা গেছে, মহাসমাবেশে যোগ দিতে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে যশোরের ১৫ হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিত করার নির্দেশনা দিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় সাত হাজার নেতা-কর্মী ঢাকায় পৌঁছে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছেন। শুক্রবার রাত ও শনিবার সকালের মধ্যে বাকিরা চলে যাবেন। নেতা-কর্মীদের যাতায়াত, অবস্থান ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যয় নিজ নিজ দায়িত্বে বহন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে গ্রেপ্তার এড়াতে নেতাকর্মীদের হোটেলে অবস্থান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান ও ছবি পোস্ট করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
যশোরের মনিহার, নিউ মার্কেট বাস কাউন্টারের ম্যানেজার ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যশোর থেকে ঢাকায় দিনে-রাতে অন্তত ৭০টি বাস যাতায়াত করে। বেশিরভাগ বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। একইভাবে যশোর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়েও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত অগ্রিম কোনো টিকিটও নেই।
ঢাকাতে অবস্থান করা নেতারা জানিয়েছেন, গত দুদিন বিভিন্ন কৌশলে নেতা-কর্মীরা বাসে-ট্রেনে, অনেকে সড়ক পথে ঢাকায় যাচ্ছেন। পুলিশি হয়রানি এড়াতে নতুন কৌশল নিয়েছেন তারা। নামকরা বাস, যেমন এস আর, হানিফ, শ্যামলী, একে ট্রাভেলে এসব বাসে যাচ্ছেন না তারা। বাসস্ট্যান্ডে পুলিশের নজরদারি বেশি থাকায় তারা শহরের স্ট্যান্ড থেকে বাদ দিয়ে মাগুরা, নড়াইল স্ট্যান্ডসহ অন্যান্য এলাকা দিয়ে ছুটা বাসে করে ঢাকায় যাচ্ছেন।
যশোর বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের আগে যশোরে ধরপাকড় শুরু হয়েছে। বুধবার মধ্যে রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বিএনপি ও দলটির অঙ্গ-সংগঠনের ৪৬ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব নেতা-কর্মীদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া তিন যুবদল নেতার বাড়িতে পুলিশের বিরুদ্ধে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।
তবে পুলিশ বলছে, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ছিল। এদিকে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, ঢাকার সমাবেশে নেতাকর্মীদের যোগ দেয়া ঠেকাতেই পুলিশ নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, গ্রেপ্তারসহ হয়রানি করছে।
যশোর জেলা যুবদলের প্রচার সম্পাদক এসকেন্দার আলী জনি বলেন, পথে পথে গাড়ি থেকে নামিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। নেতা-কর্মীরা চিন্তা করেছে। তাই সাধারণ যাত্রীদের মতো এক-দুজন করে নেতা-কর্মী আসছে।
এই নেতার অভিযোগ, পদ্মা সেতু পার হওয়ার পর পুলিশ গাড়িতে উঠে তল্লাশি করছে, মোবাইল চেক করছে। যাদের মোবাইলে খালেদা জিয়া বা বিএনপি রিলেটেড কোনো ছবি আছে তাদের গ্রেপ্তার করছে।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, ঢাকাতে নেতা-কর্মীরা তো হোটেলে থাকতে পারছে না। কোনো বাসাবাড়ি ও যেতে পারছে না। অনেক নেতাকর্মীরা মসজিদ বিভিন্ন জায়গায় ফাঁকা মাঠে, স্কুলের বারান্দা কমলাপুর স্টেশনে রাস্তার পরে পাটি বিছিয়ে রাত পার করছে। রাজধানীতে মহাসমাবেশে না যেতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করার জন্য গ্রেপ্তার চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশিরভাগ নেতা-কর্মী ঢাকায় চলে গেছেন। যত বাধা আসুক না কেন তারা কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।
যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ঢাকায় ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ যশোরের প্রায় ১৫ হাজার নেতা-কর্মী যোগ দেবেন। আগে এ ধরনের সমাবেশে বাস-ট্রাক বা ট্রেনের বগি রিজার্ভ করে ঢাকায় যেতেন নেতা-কর্মীরা। ঢাকার কোনো এক পয়েন্টে নেমে সেখান থেকে মিছিল সহকারে যোগ দিতেন সমাবেশে। নেতারা লোকজন বেশি নিয়ে শক্তির জানান দিতেন। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না। ঢাকায় প্রবেশে সরকারের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হবে এমন ভাবনা থেকে যশোরের নেতা-কর্মীরা ভিন্ন কৌশল নিয়েছেন। বাস বা ট্রেনে দলবদ্ধ হয়ে তারা ঢাকায় যাচ্ছেন না। এমনকি ব্যক্তিগত বা ভাড়া গাড়িতেও নয়। আলাদাভাবে গণপরিবহনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে গিয়ে একত্রিত হবেন তারা।
তিনি জানান, পুলিশের বাধা, তল্লাশি ও গ্রেপ্তার এড়াতেই ভিন্ন কৌশলে ঢাকামুখী যশোরের নেতা-কর্মীরা। এক্ষেত্রে ঢাকায় যাদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে তাদের কয়েক দিন আগেই যেতে বলা হয়েছে। তবে সমাবেশ শেষেই এলাকায় ফেরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।