বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে জনজীবনে অনেক দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বাজারের ওপর সরকারের যেন কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই! ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলছেন। দেশের বাজারে একবার যে পণ্যের দাম বাড়ে, তা আর কমে না! সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এ ব্যাপারে কাজ করলেও তা তেমন কার্যকর ভূমিকা না রাখায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) দ্রব্যমূল্যের দর নির্ধারণ করে থাকে। বর্তমানে প্রতি কেজি বা লিটার জিনিসের দাম এ রকম :আলু ৪০-৪২ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৭০-৮০ টাকা, আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৭৫-৮৫ টাকা, রসুন (দেশি) ১৪০-১৬০ টাকা, শুকনা মরিচ (দেশি) ৩৯০-৪২০ টাকা, বেগুন ৪০-৬০ টাকা, আদা (দেশি) ৩২০-৩৪০ টাকা, লবণ (আয়োডিনযুক্ত) ৩৮-৪২ টাকা, চিনি ১৩০-১৪০ টাকা, মসুর ডাল ১৩০-১৩৫ টাকা, ছোলা ৮০-৮৫ টাকা, সয়াবিন তেল (খোলা) ১৭৫-১৮৫ টাকা, সরিষার তেল (বোতল) ৩৬০ টাকা, বয়লার মুরগি ১৯০-২১০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা, গরুর গোশত ৭৫০-৭৮০ টাকা।
নিত্যপণ্যের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির কারণে পেশাজীবী মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। শিক্ষার্থীসহ সাধারণ জনগোষ্ঠীর জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় সব দ্রব্যের মূল্য ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশের সিংহভাগ মানুষ তাদের চাহিদা মেটাতে অক্ষম হয়ে পড়ছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বর্তমানে সাধারণ মানুষের ধরা -ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। টিসিবির ট্রাকের পেছনে বিশাল লাইন দেখে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, দরিদ্র মানুষ দৈনিক স্বল্পআয়ে চলতে পারছেন না। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। বাজার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এসব দরিদ্র লোকের জন্য কিছু একটা ব্যবস্থা করা অনিবার্য হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের অনেক কিছু করার আছে। বর্তমানে অসংখ্য শিক্ষিত বেকার যুবক চাকরির জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের মধ্য থেকে আগ্রহী ও যোগ্যদের মনোনীত করে টিসিবি বা অন্যকোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্য ব্যক্তিদের নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা যেতে পারে। এতে করে একদিকে যেমন বেকারত্ব সমস্যা কমে যাবে, অন্য দিকে দ্রব্যমূল্য সঠিক দামে ক্রেতারা ক্রয় করতে পারবেন। এছাড়া পচনশীল খাদ্যপণ্য, যেমন—আলু, মরিচ, বেগুন, পটোলসহ বিভিন্ন সবজি যথাযথ সংরক্ষণের জন্য উপজেলাভিত্তিক বেশি পরিমাণে হিমাগার স্থাপন করা যেতে পারে। এক তথ্য মতে জানা গেছে, দেশে সংরক্ষণের অভাবে বছরে ৩০ শতাংশ খাদ্যপণ্য নষ্ট হয়। ফলে পণ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাপ কমাতে এটি অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। এভাবে বিভিন্ন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।