১৯৫৩ সালের কথা,মুক্তি পেল নির্মল দের ছবি ‘সাড়ে ৭৪’।মুক্তির পর কমেডি ছবিটি নিয়ে সবার কী উল্লাস।ছবিতে নামি সব তারকা,কে নেই! চারদিকে কথা হচ্ছিল,ছবিটির মাধ্যমে কী এক নতুন জুটি এসেছে পর্দায়।বয়স্করা মজেছিলেন তুলসী চক্রবর্তী আর মলিনা দেবীতে।তাদের দাবি,হিরো-হিরোইন তো তুলসী-মলিনা।নতুন জুটি তো সাইড রোলে!ছবিটি বক্স অফিস কাঁপিয়ে দিল,টানা আট সপ্তাহ চলল।তারকার ভিড়েও আলো ছড়ালেন উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেন।মিলল তাদের প্রথম রসায়নের ইঙ্গিত।পরের ইতিহাস তো সবারই জানা।নায়ক থেকে সেই উত্তম হয়ে উঠলেন মহানায়ক।
১৯২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় জন্ম নেন এই মহানায়ক।১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ ছবির শুটিংয়ের সময় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে চির বিদায় নেন।আজ তার ৪২ তম মৃত্যু বার্ষকী।মৃত্যুর ৪১ বছরেও দর্শক তাকে সমানভাবেই মনে রেখেছেন।ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নায়কের নাম গোনা শুরু হয় দুই নম্বর থেকে।এখনো তিনিই উত্তম ও প্রথম।
আজও কলকাতায় কিংবা ঢাকা বা চট্টগ্রামে কোনো পাড়ামহল্লায় কোনো চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করলেও উত্তম কুমারের ছবির নামের তালিকা শুরুতেই উচ্চারিত হয়।পর্দায় তাঁর ছবি চললে এখনো তাকিয়ে দেখতে হয় তাঁর অভিনয়।
আজ যে উত্তমকে সবাই চেনেন তিনি আসলে প্রথম থেকেই তিনি এই উত্তম ছিলেন না।পরিচিত ছিলেন অরুণ কান্তি বা ফ্লপ মাস্টার জেনারেল।কারণ,ক্যারিয়ারের প্রথম ৭টি ছবি পর পর ফ্লপ হওয়ায় ইন্ডাস্ট্রি এই উপাধি উপহার দিয়েছিল তাকে।ক্রমে ‘উত্তম’ হয়ে ‘নায়ক’ এবং তারও পরে ‘মহানায়ক’-এর তার যে যাত্রা,তা আসলে বিচিত্রবর্গের এক প্রতিভার জেরে।মনে রাখার মতো অভিনয়-প্রতিভা তাঁর সময়ে আরও অনেকের থাকলেও,তিনি যেন সবার চেয়ে আলাদা।
শোনা যায়,প্রথম দিকে সংলাপ ভালো বলতে পারতেন না।খানিকটা তোতলামিও ছিল,যা পরে অনেক কষ্টে শুধরে নেন মহানায়ক।প্রথম দিকে চেহারাও দারুণ চোখে পড়ার মতো কিছু ছিল না।সাফল্য মেলার পরেও অধিকাংশ ছবিতেই ‘টাইপ কাস্ট’ হতেন।সাধারণ মেক-আপ।কিন্তু তার মধ্যে থেকেই নিজের অভিনয়-গুণে বাঙালির মনের গভীরে দোলা দিয়েছিলেন উত্তম।আর সেই আবেশ এমনই যে,তা দেশ-কাল-পাত্র ছাড়িয়ে চলে গিয়েছিল হলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেলরের কাছেও।১৯৫৫-র আগের উত্তমের সঙ্গে পরবর্তী উত্তমকে প্রায় মেলানোই যায় না।
আবার ১৯৬০-উত্তর আরও এক বিস্ময়।১৯৬৫ পরবর্তী সময়ে উত্তম যেন প্রায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।ততদিনে তাঁর চেহারা,অনাবিল হাসি,অকৃত্রিম চাহনির সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছে গভীর রোম্যান্টিক কণ্ঠস্বরে অপূর্ব ডায়ালগ-থ্রোয়িং,অসামান্য ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন এবং চরিত্র ও পরিপার্শ্ব মিলিয়ে সহজ কিন্তু নিটোল অভিব্যক্তি।তখন সাধারণ মানের গল্প,সাধারণ চিত্রনাট্য,সাধারণ সহ-অভিনেতাদের নিয়েও তিনি তাই বাংলা ছবির জুলিয়াস সিজার।সেই মহানায়কের ম্যাজিক আজও একই রকম অব্যাহত।